
মুস্তাফা জামান আব্বাসী। ছবি: সংগৃহীত
বাবা আব্বাসউদ্দিন আহমদ চেয়েছিলেন, তার সুদর্শন ছেলেটি সিনেমার নায়ক হোক। কারণ তিনিও ছিলেন বাবার মতোই সৌম্য, সৌন্দর্যে অনন্য ও সুদর্শন। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর বাবা আব্বাসউদ্দিন শুধু ভাওয়াইয়া গানের গায়ক ও সাধকই ছিলেন না, অভিনেতাও ছিলেন। তিনি অভিনয় করেন ‘বিষ্ণুমায়া’ (১৯৩২), ‘মহানিশা’ (১৯৩৬), ‘একটি কথা’ ও ‘ঠিকাদার’ (১৯৪০) সিনেমায়।

অভিনয়ের পাশাপাশি এসব সিনেমায় গানও গেয়েছিলেন। এমন এক সময় আব্বাসউদ্দিন সিনেমায় অভিনয় শুরু করেছিলেন, যখন মুসলমানদের সিনেমা করার ঘটনা ব্যতিক্রম বলেই ভাবা হতো; ঘৃণার চোখে দেখা হতো। আব্বাসউদ্দিন যখন গায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন, তখন মুসলিম সমাজে গান ছিল প্রায় নিষিদ্ধ।
মুসলমানের ছেলেমেয়েরা গান শিখবে, গাইবে-এ কথা কেউ ভাবনায়ও আনতেন না। সেই প্রায় নিষিদ্ধ সময়ে মুসলিম পরিবারের সন্তান হয়েও, মুসলিম নাম ধারণ করে আব্বাসউদ্দিন গানের জগতে নাম লেখান এবং কালজয়ী শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তবে বিষয়টি এমন ছিল না যে, তখন বা তার একটু আগে কোনো মুসলমান শিল্পী গান গাননি। গেয়েছেন এবং জনপ্রিয়ও হয়েছেন। তবে নিজের মুসলমান নামটি গঙ্গাজলে বিসর্জন দিয়ে, পাল্টিয়ে নিয়ে। কিন্তু আব্বাসউদ্দিন ছিলেন ব্যতিক্রম। নিজের নাম পাল্টাননি। মুসলমান নাম নিয়েই গানের জগতে প্রবেশ করেন এবং নিজের সাধনা, অধ্যবসায় ও বিশেষ গায়কী ঢঙের সঙ্গে সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে জয় করে নেন তখনকার প্রতিকূল পরিবেশ।
জয় করে নেন লাখো শ্রোতার হৃদয়। তিনি যখন ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই’, ‘তোরষা নদী উথাল পাতাল, কারবা চলে নাও’, কিংবা ‘প্রেম জানে না রসিক কালাচান’, ‘ও কি ও কাজল ভ্রমরারে/কোনদিন আসিবেন বন্ধু/কয়া যাও কয়া যাও রে’ বলে দরাজ গলায় গান ধরতেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত সাধারণ মানুষ ছাপিয়ে সেই গান ঢুকে পড়ত শহুরে শিক্ষিতদের ড্রয়িংরুমে। অভব্য গান বলে যারা ভাওয়াইয়া গান ঘৃণাভরে তখন প্রত্যাখ্যান করেছিল, আব্বাসউদ্দিন তার মধুভরা কণ্ঠে সেই গানই নিয়ে গিয়েছেন অন্য উচ্চতায়। ফলে প্রকাশ্যে যেমন, তেমনি গোপনেও মুগ্ধ হয়ে সে গানের রসাস্বাদন করেছেন শহুরে তথা আধুনিক রুচির দাবিদার মানুষ।
বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক। আধুনিক গানের সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আব্বাসউদ্দিন। বাংলার মুসলমান সমাজের নবজাগরণের কাল বলেই এ সময়কে গণ্য করা হয়। আব্বাসউদ্দিন ছিলেন নবজাগরণের অমর শিল্পী। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং অন্য মুসলমান কবি-সাহিত্যিকরা তাদের রচনা দিয়ে মুসলিম চেতনা তখন জাগিয়ে তুলছিলেন। বিদ্রোহী কবির সঙ্গে আব্বাসউদ্দিনের প্রথম পরিচয় ঘটে কুচবিহারে। নজরুল তাকে স্নেহ করতেন। সবার কাছে আব্বাসউদ্দিনকে পরিচয় করিয়ে দিতেন ‘আমার ছোট ভাই’ বলে।
আব্বাসউদ্দিন নজরুলের অসংখ্য গান ততদিনে রেকর্ড করে ফেললেও তার প্রথম রেকর্ডের গান ‘কোন বিরহীর নয়ন জলে বাদল মরে গো’ ও অপর পিঠে ‘স্মরণ পারের ওগো প্রিয়’ বাজারে আসার পর পরই সাড়া পড়ে যায়। ‘আব্বাসউদ্দিন আহমদ’ মুসলমান নাম ব্যবহার করেই এইচএমভি থেকে গানের রেকর্ড বের করেন। সেগুলো ছিল বাণিজ্যিকভাবে ভীষণ সফল। কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের ইসলামি ভাবধারায় রচিত অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আব্বাসউদ্দিন এবং গানগুলোও অমরত্ব পেয়েছে। সেই শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা ছিলেন আব্বাসউদ্দিন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি প্রথম গেয়েছিলেন আব্বাসউদ্দিন আহমদ। এই গানটি এমন এক গান, যে গান না শুনলে রমজানের ঈদ ঈদই মনে হয় না। এ গানের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায় আমাদের সারা মাসের সংযম। গজলেও আব্বাসউদ্দিন ছিলেন অতুলনীয়। ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ’, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’, ইত্যাদি গান গেয়ে তিনি মানুষকে মাতোয়ারা করেছিলেন।
আব্বাসউদ্দিনের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে মুস্তাফা জামান আব্বাসী দ্বিতীয়। বড় ড. মোস্তাফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। একমাত্র মেয়ে ফেরদৌসী রহমান। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তিনিও স্বনামে খ্যাত। গানের ভুবনে তিনি শ্রোতা ও সুধীসমাজের কাছে অতিপরিচিত নাম। আধুনিক, খেয়াল, গজল, ভাওয়াইয়া, ঠুংরী ইত্যাদি গানে রয়েছে ফেরদৌসী রহমানের সমান দখল।
বাবা আব্বাসউদ্দিন আহমদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই মুস্তাফা জামান আব্বাসী নিজেকে সমর্পণ করেন সংগীতচর্চা, গবেষণা ও অধ্যাপনায়। শুরুতেই বলেছি, বাবা চেয়েছেন তার এই রূপবান ছেলে চলচ্চিত্রে অভিনয় করুক। এ পথে খ্যাত হোক। কিন্তু বাবার পছন্দের এই দিকটি আকৃষ্ট করেনি মুস্তাফা জামান আব্বাসীকে। তিনি বরং বাবার খ্যাতির দিকটির প্রতিই আগ্রহী হন।
তিনি বাবার সংগীত সাধনার দিকটিতেই নিজের আগ্রহ খুঁজে পান। তাই এ দিকেই নজর দেন। বলা যায়, মুস্তাফা জামান আব্বাসী শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রায় সব শাখায় সমানভাবে নজর দিয়েছেন। সব দিকেই নিজেকে বিস্তৃত করার চেষ্টা করেছেন। ফলে শিল্পী, সংগ্রাহক, উপস্থাপক, গবেষক, সাহিত্যিক, অনুবাদক ও দার্শনিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি দক্ষতা অর্জন করেন বাংলা-ইংরেজি-উর্দু-এ তিন ভাষাতেই।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর জন্ম ১৯৩৭ সালের ৮ ডিসেম্বর, কুচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে। শৈশব থেকেই আব্বাসী ছিলেন প্রখর মেধাশক্তির অধিকারী। পড়াশোনা করেছেন বলরামপুর হাই স্কুল, কুচবিহারের জেনকিনস্ স্কুল, পার্ক সার্কাসের মডার্ন স্কুল, ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ ও সবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এখান থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় একাদশতম এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ১৩তম স্থান অধিকার করেন। বিএ অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম আর এমএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে দ্বিতীয় হন।
প্রত্যেক বড় মানুষের শৈশব ও কৈশোরে ছড়িয়ে থাকে নানা উজ্জ্বল রঙের বিভা। ব্যতিক্রম নন মুস্তাফা জামান আব্বাসীও। আব্বাসীর শৈশব ও কৈশোরও ছিল আনন্দময়, স্মৃতি স্নিগ্ধ, কোমল ও মধুর। তারও বেশিরভাগ সময় কেটেছে ছায়াসুনিবিড় প্রাকৃতিক পরিবেশের বলরামপুরে। নিজের গ্রাম ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে সুমধুর, সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে মায়ার অঞ্জন ছড়ানো একটি নাম বলরাম। নামটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বসন্তের সমীরণ যেন বয়ে যায় শিরায় শিরায়।
একটি দক্ষিণমুখী বাড়ির আগদুয়ার ঘর, সুউচ্চ জামের সারি, আমের সারি, আমলকীর মৌ, গোলাব জামের শিষ। ভিতর বাড়িতে উত্তরের ঘর- যেখানে আমার দাদু থাকেন, পশ্চিমের সারি সারি ঘর- যেখানে ছোট চাচা-চাচি থাকেন, বড় রান্নাঘর, গোলাঘর, দক্ষিণের ঘর-ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য। আর পুবের ঘর, আমার আশৈশব স্বপ্নের আশ্রয়, যেখানে আমার মা-বাবা, ভাইবোনের বাস। আমার জন্ম ওই ঘরটিতেই।
পূর্বে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, শস্যক্ষেত্র, যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সবুজের সমারোহ, যার নাম দোলাবাড়ি, পাশে ঘন কাশবন। তারপর সরু রুপালি স্রোতের নদী, নাম কালজানি। রঙ মনে নেই, শুধু মনে পড়ে কালজানি। যখন আমার বয়স ৪/৫-নদীর কথা মনে পড়ে, নাম তার কালজানি। এই বাড়িই আমার মনের বাড়ি। বৈঠকখানাটি বেশ বড়, সামনেই বারান্দা, চৌকিপাতা সেখানে।
সজনে গাছের ধার ঘেঁষেই প্রশস্ত পুকুর। সারাদিন সেই পুকুরে সাঁতার কাটা, বড়শি দিয়ে মাছ ধরাসাদা, লাল পুঁটি। চাদর দিয়ে ডারকা মাছ ধরা, আর সময় নিয়ে কৈ, মাগুর, শিং ধরার প্রচেষ্টা। কখনো কখনো বালতি ভরতি করে মাছ চালান হতো রান্না ঘরে। তারপর রান্না হতো বাড়ি ভরতি সবার জন্য।’
১৯৪৭ সালে দেশভাগের বেদনা সঙ্গী করে আব্বাসউদ্দিন আহমদ সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। বসবাস শুরু হয় পুরান ঢাকার নারিন্দায় ধোলাই খালের পাড়ে ৭৭ নম্বর ঋষিকেশ দাস রোডে। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর শৈশবের অনেক স্মৃতি পুরান ঢাকাকে ঘিরে। এরপর ৬৮/১, পুরানা পল্টন, হীরামন মঞ্জিল।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মুস্তাফা জামান আব্বাসীর বিপুল যশ ও খ্যাতি লোকসংগীতেই। প্রায় পাঁচ যুগ ধরে তিনি লোকসংগীত শিল্পী হিসেবে মাতিয়ে রেখেছেন আমাদের সংগীতভুবন। তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ মুহাম্মদ হোসেন খসরু, ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খানসহ বিখ্যাত অনেক সংগীতগুরুর কাছে। নিয়েছেন ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কণ্ঠে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদী, চটকা, মারফতী, বাউল, হাসনগীতিসহ প্রত্যন্ত গ্রামবাংলার মাঠেঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানাঢঙের লোকগীতি বিশেষ ব্যঞ্জনা পায়।
আর এসব গানই হলো আবহমান বাংলার শেকড়সংগীত, যা তার আগে গেয়ে জনমানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন আব্দুল আলীম, আব্বাসউদ্দিন আহমদ, বেদারউদ্দীন প্রমুখ জননন্দিত সংগীতজ্ঞরা। নিষ্ঠাবান একজন গবেষক হিসেবে মুস্তাফা জামান আব্বাসী দেশীয় সংগীতের বিচিত্র বৈভব অন্বেষণে আজও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। নিবন্ধ আকারে তা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগীত সম্মিলনে নিয়মিত উপস্থাপনও করে যাচ্ছেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী কাজ করছেন ইসলামি ও লোকধারার গানগুলো সংগ্রহ এবং তা জনপ্রিয় করতে। তিনি নজরুল সংগীতের কেবল প্রসারই নয়, সামগ্রিকভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে কাজী নজরুল ইসলামকে বিশেষভাবে জানাতে, বিশেষ করে তার সমগ্র রচনাপাঠে আগ্রহী করে তুলতে যে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন, এককথায় তা অতুলনীয়।
পিতা আব্বাসউদ্দিন ও পিতৃব্য কাজী নজরুল ইসলামের ছবি ও পেইন্টিং সংগ্রহ, গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। ‘নজরুল-আব্বাসউদ্দিন স্মৃতিময় অ্যালবাম’ আমাদের জাতীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ বই। নজরুল সংশ্লিষ্ট ৮০টি ও আব্বাসউদ্দিন সংশ্লিষ্ট ৪৫টি-সর্বমোট ১২৫টি ছবি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এ বিশেষ অ্যালবাম।
অ্যালবামে আরও রয়েছে প্রমীলা, গিরিবালা, সব্যসাচী, অনিরুদ্ধ, উমা, কল্যাণী, শৈলজানন্দ, নাসিরউদ্দিন, কমল দাশগুপ্ত, ফজিলাতুন্নেসা, সুফি জুলফিকার হায়দার, খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন, এস ওয়াজেদ আলী, ওস্তাদ জমিরউদ্দিন খান, জসীমউদ্দীন, গোলাম মোস্তফা, প্রতিভা বসু, মুহাম্মদ আকরম খাঁ, ইবরাহীম খাঁ, হাবীবুল্লাহ বাহার, মুজফ্ফর আহমেদ, দিলীপ কুমার রায়, মাহবুবুল আলম, ধীরেন দাস, শৈলেন রায়, কানাইলাল শীল, গিরীন চক্রবর্তীর ছবি।
অ্যালবামটি সম্পর্কে আব্বাসী বলেন “শত ব্যক্তির মাঝে কয়েকজনের ছবি। এগুলো এখন আর চট করে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে কারণে অ্যালবামটি মূল্যবান, কালকে যা ধারণ করেছে। জাতীয় জীবনে তারা বিশেষ ভ‚মিকা রেখেছিলেন, অথচ নজরুল ও আব্বাসউদ্দিনের ছবি কোথাও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অফিস-আদালত-সভাঘর-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, কোথাও নয়। ক্যামেরা, মোবাইল হাতে হাতে।
সেদিন ছবি তোলা হতো সামান্যই। আজ ছবির মানুষও নেই, ছবিও নেই। নজরুল লিখেছেন গান, আব্বাসউদ্দিন সেই গান কণ্ঠে ধারণ করে রেকর্ডের ও সভার মাধ্যমে, পৌঁছে দিয়েছেন সারা বাংলায়। নজরুল ও আব্বাসউদ্দিনের একসঙ্গে কোনো ছবি নেই। এই যুগ্ম অ্যালবামে তারা উপস্থিত আরেকটিবার।
জাতির ঘুম ভাঙিয়েছিলেন যারা, তাদের ছবি বেসরকারি উদ্যোগে সুলভে সবার ঘরে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন বিবেচনায় ভাষা আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভ‚মিকা পালনকারী চট্টগ্রামের লব্ধপ্রতিষ্ঠ প্রকাশনা সংস্থা ‘কোহিনূর প্রকাশন’ এগিয়ে এসেছেন। তাদের জানাই উষ্ণ অভিনন্দন। নতুন প্রজন্ম এটি সাগ্রহে সংগ্রহ করবেন বলে আমার বিশ্বাস।”
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ইসলাম, হযরত মুহম্মদ (সা.), আল্লাহকে নিবেদিত কাজী নজরুল ইসলামের চারশর বেশি প্রেম ও ভক্তিমূলক সংগীত এবং অন্যান্য সৃষ্টিকর্ম ও দর্শন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এসব ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্ববাসীর মাঝে, বিশেষ করে যেখানে মুসলমান রয়েছেন, রয়েছে মানবতাবাদী অন্য ধর্মাবলম্বীরাও।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী বিশ্বাস করেন, কাজী নজরুল ইসলাম তার রচনার মাধ্যমে ইসলাম নিয়ে যত আহ্বান জানিয়েছেন, ইসলামের মহত্ত্ব প্রচারে যে অবদান রেখেছেন, তা যদি যথাযথভাবে এবং সঠিক উপস্থাপনের মাধ্যমে বিশ্বের মুসলমানদের কাছে পৌঁছানো যায়, তবে জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক, কবি জালালউদ্দিন রুমির মতোই সবাই কাজী নজরুল ইসলাম ও তার চিন্তাকে সাড়ম্বরে গ্রহণ করবেন।
কবি নজরুলও সমাদৃত হবেন সকলের কাছে। নজরুলের প্রকৃত চেতনা পুস্তক আকারে পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বশীল ভাষাসমূহে রূপান্তরেও কাজ করে যাচ্ছেন এই গুণী সংগীতজ্ঞ।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী গুণী পিতার গুণী সন্তান। পিতা আব্বাসউদ্দিন আহমদ সম্পর্কে আব্বাসীর মূল্যায়ন আমরা জেনে নিতে পারি। পিতা সম্পর্কে পুত্র আব্বাসী বলছেন, ‘তিনি খুব সাদাসিধা মানুষ ছিলেন। সাধারণ জীবন যাপন করতেন। কম কাপড় ছিল তার। দুটো পাজামা দুটো পাঞ্জাবি। সব সময় ধোয়া ইস্ত্রি করা থাকত।
অফিসের জন্য দুই সেট সাদা শার্ট ও সাদা প্যান্ট। সাদা আচকান একটা অনুষ্ঠানের জন্য। জায়নামাজ, টুপি, তসবিহ একটি করে। হারমোনিয়াম সাধারণ। গ্রামোফোন এইচএমভি কোম্পানির দেওয়া।’ আর মা লুৎফুন নেসা সম্পর্কে আব্বাসীর ভাষ্য, “বাবার মতোই শৌখিন ছিলেন। তিনি সরু পাড়ের শাড়ি পরতেন। পরিমিত চা, পান-সুপারি খেতে পছন্দ করতেন। ঘর-কন্যার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত লিখতেন। ‘শেষ বিকেলের আলো’ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। নভেম্বর
১৯৮০-তে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘কিছু ফুল কিছু স্মৃতি’। ১৬টি প্রবন্ধে ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিমূলক এ বইটি তিনি তার তিন ছেলেমেয়েকে উৎসর্গ করেছেন। তিন নম্বর বই ‘সময় কথা বলে’ জুন ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয়। বইটি তিনি তার প্রিয় নাতি-নাতনিদের উৎসর্গ করেছেন।”
বড় ভাই বিচারপতি মোস্তফা কামালের হৃদয়ের বিশালতা খুঁজে পাওয়া যায় মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কথায়, ‘ভালোবাসায় আর্দ্র, মমতাময়, স্নেহশীল। উজাড় করে দিয়েছেন তার সর্বস্ব পরিবারের জন্য। বিশেষ করে আমার ও বোনের জন্য। অসুখ হলে পরিচর্যা ও খোঁজ-খবর নিয়েছেন পরিবারের সবার। আমার ভাইয়ের মতো ভাই হয় না। পেশায় ব্যারিস্টার, পরে বিচারপতি, শেষে প্রধান বিচারপতি। আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয় দৃঢ় হলেও, বিনয় তার ভ‚ষণ। সাধারণজনেরও তিনি আপন হয়ে যান অনায়াসে। তার সুকৃতির ছাপ তার চলনে-বলনে, চিন্তা-চেতনায়, বক্তৃতা-ব্যবহারে। মোস্তফা কামাল রচিত গ্রন্থ তিনটি।’
বোন সম্পর্কে তার মূল্যায়ন হলো, “আমার বোন ফেরদৌসী রহমান, সেরা শিল্পীদের অগ্রগণ্য। তার পঞ্চাশ বছরের শিল্পীজীবন উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থে স্মৃতিচারণ করেছি নানাভাবে। তাকে ভালোবাসতাম, তার সুখে সুখী, তার দুখে দুঃখী। পিঠাপিঠি হওয়ায় ছোটবেলা মারামারিও করেছি।
আবার বড় হয়ে তার জন্যে করেছি অশ্রুপাত। তার তুলনা সে নিজেই। অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে আমার বোনের সময় দ্রুত কেটে যায়। বনানীতে পিতার নামাঙ্কিত ‘আব্বাসউদ্দিন সংগীত একাডেমি’ পরিচালনা করে সে।”
স্ত্রী আসমা আব্বাসী এবং দুই কন্যা সামিরা আব্বাসী ও শারমিনী আব্বাসীকে নিয়ে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর এক সুখের সংসার। ব্যক্তিজীবনে প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। আসমা আব্বাসী শিক্ষাবিদ এবং একজন গুণী লেখক হিসেবে পাঠকসমাজে সুপরিচিত। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজি তিনি।
এই বিদুষী নারী সমাজের নানা ক্ষেত্রে নিরন্তর রেখে যাচ্ছেন বিশেষ অবদান। ‘জীবন নদীর উজানে’ তার একটি উল্লেখযোগ্য বই। অনেকগুলো বই লিখেছেন তিনি। এখনো লিখে চলেছেন। ‘কমলা রঙের দিনগুলি’, ‘বকুল বিছানো পথে’, ‘পথিক মেঘের দল’, ‘সে কোন বনের হরিণ’, ‘হাসন রাজা’, ‘লাবনীর ভাবনা’, ‘রবীন্দ্রনাথ: প্রকৃতির গান’, ‘ভ্রমর কইও গিয়া’সহ বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি।
সন্তানদের মধ্যে সামিরা আব্বাসী একাধারে শিল্পী, প্রকৌশলী ও লেখক। বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি বাংলাদেশের একজন ক্লাসিক্যাল শিল্পী। গানে হাতেখড়ি তার শৈশবেই। তিন বছর বয়স থেকেই গানের স্কুলে যাতায়াত। তালিম নিয়েছেন প্রখ্যাত ভারতীয় পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর কাছে। ঘরে বাবার কাছে তো শিখেছেনই।
সামিরার ‘রনজিস রাহি’ নামে গজলের অ্যালবাম বের হয় ২০০৭ সালে। আরেকটি অ্যালবাম নজরুল সংগীতের। নাম ‘আবার ভালোবাসার সাধ জাগে’। উপমহাদেশের প্রখ্যাত গজলশিল্পী মেহেদী হাসান ও গুলাম আলীর গজল নিয়েও একটি অ্যালবাম করেছিলেন ‘ট্রিবিউট টু মেহেদী হাসান অ্যান্ড গুলাম আলী’ নামে।
বাবার মতোই সামিরা আব্বাসী নিজেকে শুধু সংগীতে আবদ্ধ রাখেননি। সৃজনশীলতার চর্চায় ব্যস্ত রেখেছেন নিজেকে। প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু বই। যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করতে যাওয়া, সেখানকার জীবনাচরণ, অভিজ্ঞতাসহ প্রবাসজীবন নিয়ে লিখেছেন ‘আমেরিকা: কাছে থেকে দূরে’ নামে একটি বই। আরও প্রকাশিত হয়েছে ছোটগল্পগ্রন্থ ‘গল্পগুলো ভালোবাসার’। বের হয়েছে ‘দ্য ভেইল’ নামে একক আবৃত্তি অ্যালবামও। সম্পাদনা করছেন ‘পাখি’ নামে লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন। এছাড়াও কাজ করেছেন চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনায়।
‘গাড়িওয়ালা’ নামে একটি সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ করেছেন। শিকাগোয় গড়েছেন ‘আব্বাসউদ্দিন একাডেমি’। চিত্রমাধ্যমেও কাজ করেছেন সামিরা আব্বাসী। এ পর্যন্ত তৈরি করেছেন বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি। মিলেনিয়াম গোলস কর্মসূচির বাস্তবায়নের ওপর নির্মাণ করেছেন ‘ওয়ান ড্রিম: মিলিয়ন স্মাইল’। এছাড়া শিশুদের নিয়েও আছে দুটি ডকুমেন্টারি। ২০১১ সালে সামিরা আব্বাসী নির্মিত দুটি ডকুমেন্টারি ফ্লোরিডার সাউথটেক একাডেমিতে প্রদর্শিত হয়।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী-আসমা আব্বাসী দম্পতির আরেক সুকন্যা শারমিনী আব্বাসী। তীক্ষ্ন মেধাশক্তির অধিকারী শারমিনী একজন আইনজীবী। সফল কর্পোরেট আইনজীবী হিসেবে হাল ধরে আছেন একটি শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধার হিসেবে। মানবাধিকার আইন রক্ষায়ও সোচ্চার তিনি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তার মনোজগতে সাহিত্য আর সংগীতের দ্যোতনাই মুখ্য। সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী শারমিনী বড় বোনের মতোই ক্ল্যাসিক্যাল গানের একনিষ্ঠ সাধক ও গায়ক। আব্বাসউদ্দিনের গানের প্রতি রয়েছে অসম্ভব টান ও ভালোবাসা।
মাতৃ-পিতৃকুলের উত্তরসূরির ঋণেই শারমিনী আজ হয়ে উঠেছেন নন্দিত লেখক। ইতোমধ্যে প্রকাশিত তার বই পাঠক ও সুধীমহলে দারুণ সমাদৃত হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম বই ‘আমার মেয়েকে বলি’। এরই ধারাবাহিকতায় ‘অমৃতের পুত্র’। উপাখ্যান-‘আদৃতার চিঠি’ লেখকের দ্বিতীয় বই। তৃতীয় বই ‘পঁয়ত্রিশের জীবন’। তার রচিত আরও কিছু বই হলো-‘দেবলীনার ছিন্নপত্র’, ‘আমি শুনিনি তোমার ডাক’, ‘নীলপদ্মের খোঁজে’। ‘বাবার দেশের কুড়–য়া’ নারী হৃদয়ের নিভৃত কান্না ছড়িয়ে দিয়েছে। আকাশে-বাতাসে, যা অশ্রুজল এনে দেয় চন্দনবৃক্ষে বসা পাখিটির চোখেও।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মুস্তাফা জামান আব্বাসীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মোটেও কম নয়; অর্ধশতাধিক। ভাওয়াইয়া গানের ওপর রয়েছে তার দুটি বই, যাতে রয়েছে এক হাজার ২০০টি গান। তিনি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি, নিফফারি এবং সুলতান বহুর কবিতা নিয়ে কয়েকটি বই প্রকাশ করেছেন। তার অন্য বই হলো আব্বাসউদ্দিন আহমদ, মানুষ ও শিল্পী, কাজী নজরুল ইসলাম, ম্যান অ্যান্ড পোয়েট, পুড়িব একাকী এবং বাংলা ও ইংরেজিতে নজরুল এবং আব্বাসউদ্দিন স্মৃতিময় অ্যালবাম ‘সাগা অব টাইম’। তার অন্যান্য বই হলো-‘প্রাণের গীত’, চারুলিপি প্রকাশন; ‘জীবন নদীর উজানে’, মাওলা ব্রাদার্স; ‘অব মিউজিক্যালস অ্যান্ড মুন্ড্যান্স’, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স; ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, মাওলা ব্রাদার্স; ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভ‚মি’, অনন্যা; ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি-২’, অনন্যা; ‘বাকি জীবনের কথা’, নওরোজ সাহিত্য সম্ভার; ‘সুরের কুমার : শচীন দেববর্মণ’, অনন্যা; ‘নতুন আলো ভরাও প্রাণে’, মুক্তদেশ প্রকাশন; ‘আব্বাসউদ্দিন মানুষ ও শিল্পী’, অনন্যা; মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী, কালিকলম প্রকাশন; স্পষ্ট জ্যোতি আল কুরআন, অনন্যা; রাসুল (সা.)-এর পদপ্রান্তে, ঐতিহ্য; জলসা থেকে জলসায়, মুক্তদেশ প্রকাশন; ইমামের শুভদৃষ্টি, মুক্তদেশ প্রকাশন; গোধূলির ছায়াপথে, মুক্তদেশ প্রকাশন; আমার মায়ের মুখ, মুক্তদেশ প্রকাশন; আব্বাসউদ্দিনের গান, মুক্তদেশ প্রকাশন; ভালোবাসি আজও কালও, অয়ন প্রকাশন; হরিণাক্ষী, মুক্তদেশ প্রকাশন; লালন যাত্রীর পশরা, মুক্তদেশ প্রকাশন; পুড়িব একাকী, অন্যপ্রকাশ; দ্য নেম অব মুহাম্মদ, অনন্যা; লঘু সংগীতের গোড়ার কথা, নন্দিতা প্রকাশ; ফিফটি ইয়ার্স অব একুশের ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি; গালিবের হৃদয় ছুঁয়ে, মুক্তদেশ প্রকাশন; যে নামেই ডাকি, মুক্তদেশ প্রকাশন; রবীন্দ্রনাথ প্রেমের গান, নন্দিতা প্রকাশ; স্বপ্নেরা থাকে স্বপ্নের ওধারে, মাওলা ব্রাদার্স; মুহাম্মদের নাম, অনন্যা; কালজানির ঢেউ, অনন্যা; অচেনা চীন চেনা আমেরিকা, মুক্তদেশ প্রকাশন; রুমির অলৌকিক বাগান, মুক্তদেশ প্রকাশন; বাণী : মুহাম্মাদ (সা.), চারুলিপি প্রকাশন; সুফি কবিতা, বর্তমান সময়; জাপান: সূর্য উঠেছে যেখানে, অনন্যা।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ‘আমার ঠিকানা’ এবং ‘ভরা নদীর বাঁকে’ নামক দুটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকেই এর উৎকর্ষ সাধনে মুস্তাফা জামান আব্বাসীর রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। এ দুটি গণমাধ্যমে সংগীত ও সংস্কৃতির নানা বিষয় নিয়ে তিনি অসংখ্য অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। দীর্ঘ ১১ বছর তিনি দেশের জাতীয় সংগীত কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। ছিলেন ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক। রোটারি ক্লাব, ঢাকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বে অসংখ্য দেশে অনুষ্ঠিত রোটারি সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান, ক্লাব ও সম্মিলনীর সভ্য তিনি।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী একাধারে বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য, বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, ঢাকা ও গুলশান ক্লাবের সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব ট্রাডিশনাল মিউজিক, ইউএসএ’র সদস্য। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ইনডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ স্কলার ও ডায়ালগ অব কালচারাল পলিসির চেয়ারম্যান হিসেবে। সংগীত, গবেষণাসহ সমাজ-সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মুস্তাফা জামান আব্বাসী পেয়েছেন অসংখ্য পদক। ভ‚ষিত হয়েছেন অসংখ্য সম্মাননায়।
সংগীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেন একুশে পদক (১৯৯৫)। চ্যানেল আই-রবি আজীবন সম্মাননা (২০১১), লালন পরিষদ অ্যাওয়ার্ড, সিলেট মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, নজরুল একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, মানিক মিয়া অ্যাওয়ার্ড, আব্বাসউদ্দিন স্বর্ণপদক (চট্টগ্রাম), বেঙ্গল স্যানিটারি অ্যাওয়ার্ড, নাট্যসভা অ্যাওয়ার্ড; চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র থেকে ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, ২০১১; চ্যানেল আই নজরুল মেলা আজীবন সম্মাননা, ২০১৩; এপেক্স ফাউন্ডেশন পুরস্কার; বাংলা শতবর্ষ পুরস্কার ইত্যাদি।