Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

আমার বইমেলা

Icon

সাগুফতা শারমীন তানিয়া

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:১২

আমার বইমেলা

কথাসাহিত্যিক সাগুফতা শারমীন তানিয়া।

বইমেলায় নিয়মিত যাবার চেষ্টা করি, এতটা দূরত্ব থেকে আমার পক্ষে নিয়মিত বলতে যা বোঝায়। এবারো গেছি। গতবার এবং এবার বইমেলা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভালো, যথেষ্ট পরিসর, ধুলো ঠেকানোর ব্যবস্থা, পানি পানের ব্যবস্থা আছে, একটু বসবার অবকাশ রয়েছে। 

পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু ব্যবস্থাপনা কেমন, তা নিয়ে শঙ্কা আছে শুনেছি বলে ভুলেও সেদিকে যাইনি। বাইরে এখনো খোলা ইউরিনাল রয়েছে পথচারীদের হাঁটাপথের ওপরেই, সেখানে বাংলায় বলে দেওয়া আছে এই ইউরিনাল ‘সাস্টেনেবল’। মেলায় ঢুকবার পথের আশপাশ সন্ধ্যায় ঘনিয়ে ওঠে অ্যামোনিয়ার গন্ধে। 

তবু আগের সেই বারোভাজা মেলার দৃশ্যের (প্লাস্টিকের খেলনা, তৈজসপত্র, বাতাসা-মুরলি, গানের ক্যাসেট সব একত্রে) চেয়ে এখনকার মেলার পরিকল্পনা অনেক ভালো।

তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এতগুলো গাছ কেটেই আমাদের কেন স্বাধীনতা উদযাপন করতে হবে, কেন মেলা বসাতে হবে এই কথাটা ভাবলে এমন নিরর্থকতায় মন ছেয়ে যায় যে তা কাটিয়ে ওঠা মুশকিল।

মেলায় যখন যাই বুভুক্ষুর মতো বই কিনি এবং দুই হাতে টেনে আনি সেই মনোরম বোঝা। এবার যা কিনেছি তার ভেতর উল্লেখযোগ্য আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়ার ফারসি থেকে অনুবাদকৃত বইগুলো, ডক্টর লুৎফর রহমানের ‘উন্নত জীবন’, রাবেয়া খাতুনের ‘স্মৃতি সংগ্রহ’, আরতী দত্ত এবং মহিউদ্দিন আহমাদের বই। কবিতার বই অনেককাল কিনি না, এবার কিনলাম সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের ‘দশ মহাবিদ্যা’, শামসেত তাবরেজীর ‘বসা ভাতের ভৈরো’।

এবার মেলায় আমার অষ্টম গ্রন্থ ‘দ্বিতীয় ভ্রান্তিপাশ’ এসেছে। ভিন্ন মেজাজের ষোলটি গল্পের ভেতর কোথাও অবিরাম উল বুনে যাওয়া যে কোনো নারী যেমন আছে, তেমনি আছেন মিথলজির রাণী পেনেলোপি কিংবা দ্রৌপদী।

একদিকে আছে শক্তি ঔষধালয়ের কবিরাজ, আরেকদিকে ইতিহাসের পাতা থেকে মহানন্দাপাড়ের ফকির শাহদানা। হারিয়ে যাওয়া শৈশবকে-সম্পর্ককে- দেশকে এমনকি সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনকে খুঁজে ফেরা মানুষ। গ্লোবালাইজেশন, বহু-সংস্কৃতির প্রভাব, অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো ইস্যু এসেছে চরিত্রগুলোর আন্তঃ টানাপড়েনে।

কেন তারা সাধুর জিভের মতো ঘুরে বেড়ায় লোকালয়ে, কারা যেন চটকা ভেঙে দেখতে পায় তার নিজের মাথার সঙ্গে অদলবদল হয়ে গেছে আরেকজনের মাথা, কেউ কেউ মৃতের অপেক্ষায় বসে থাকে পুরনো তিস্তার রিভারবেডে, কেনই বা বাসবোঝাই যাত্রীর চেহারা দুলতে দুলতে হয়ে যায় খেলোয়াড়দের মতো, কেমন করে যেন প্রবাসে কাজ করতে থাকা মানুষরা শুভনাম হারিয়ে ফেলে শুধু সর্বনাম হয়ে রয়ে যায়... এইসব ঘুরে ঘুরে।

মেলা প্রাঙ্গণে প্রচুর মানুষ আসেন, সাজপোশাক থাকে, প্রিয়সঙ্গ থাকে, সেই তুলনায় বইয়ের বোঝা যেন কমই। বই পড়বার স্পৃহা উৎপাদনে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং অভিভাবককুল অনেককাল ধরেই ব্যর্থ, সেই ব্যর্থতা ঘোচাতে ব্যক্তিগত প্রণোদনা প্রয়োজন, প্রয়োজন নিজের গরজ।

বই কী কী করতে পারে, তার সঙ্গে আত্মিক- সামাজিক প্রগতি তো বটেই কত অর্থনৈতিক উৎকর্ষ সাধন করতে পারে তাই নিয়ে মেলায় বাচ্চাদের একটা ছোট্ট ওয়ার্কশপে বক্তা ছিলাম, আয়োজন করেছিল ‘শৈশব’। এই যে লক্ষ্মী আসবেন বলে সরস্বতীর দিকে টান দিতে চেষ্টা করলাম, আমার এই সারস্বত প্রয়াস সফল হবে কি না জানি না, শুধুই সরস্বতী আর যথেষ্ট নন কিছুতেই...তা ভেবে মনে গ্লানি হলো।

লেখক : কথাসাহিত্যিক

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫