-63fccf4c825c6.jpg)
পাঠক, দর্শক ও প্রকাশকদের আনাগোনায় মুখরিত অমর একুশে বইমেলা-২০২৩। ছবি: সংগৃহীত
আগামীকাল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শেষ
হচ্ছে বাঙালীর প্রাণের অমর একুশে বইমেলা-২০২৩।
এর আগে সংক্ষিপ্ত পরিসরে অমর একুশে বইমেলা
হলেও এবারের মাসব্যাপী বইমেলায় ফিরে এসেছিল প্রাণের স্পন্দন। পাঠক, দর্শক ও প্রকাশকদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল এই
বইমেলা। মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার সমাপনী
হচ্ছে।
প্রতিবছরের মতো এবারেও সমাপনী অনুষ্ঠানে
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। গতবছর (২০২২) প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত
সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনী-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি
পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হবে। একই বছর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান
বিচারে সেরা বই বিভাগে আহমদ রফিক রচিত বিচ্ছিন্ন ভাবনা প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান
বুক্স, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ
রচিত বাংলা ‘একাডেমি আমার বাংলা একাডেমি’ বইয়ের জন্য ঐতিহ্য এবং হাবিবুর রহমান
রচিত ‘ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে
মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে। ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ
বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি-কে
রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হবে।
২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে
পুঁথিনিলয় (প্যাভিলিয়ন), নবান্ন প্রকাশনী
(২-৪ ইউনিট), উড়কি (১ ইউনিট)
-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে।
অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিকেল ৫
টায় শুভেচ্ছা বক্তৃতা প্রদান করবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম
মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ উপস্থিত
থাকবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব মো আবুল মনসুর।
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ।
অনুষ্ঠানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য
পুরস্কার ২০২২, কবি জসীমউদ্দীন
সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন গুণীজন স্মৃতি
পুরস্কার প্রদান করা হবে।
এদিকে,
আজ
অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৫৮টি।
বিকাল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়
‘বিশ্ববাঙালির সাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আলম
খোরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এ. এফ. এম. হায়াতুল্লাহ, আল মামুন এবং জসিম মল্লিক। অনুষ্ঠানে
সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
প্রাবন্ধিক বলেন, বিশ্ববাঙালি বলতে পুরো বিশ্বের বাঙালি
সম্প্রদায়কেই বোঝানো হয়, যার মধ্যে
বাঙালির সর্ববৃহৎ দুই ঠিকানা বাংলাদেশ ও ভারত অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও যে সব সাহিত্যিক
দেশান্তরী হয়ে বিদেশে বসবাস করছেন এবং যারা বিদেশে অভিবাসনের পর সাহিত্যরচনা শুরু
করেছেন তাদের সকলের সাহিত্যকেই বিশ্ববাঙালির সাহিত্য বলা যায়। এদের মধ্যে কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার,
প্রাবন্ধিক, গবেষক,
শিশুসাহিত্যিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, ভ্রমণ সাহিত্যিক, অনুবাদক,বিজ্ঞান লেখকসহ সবধরনের লেখকই রয়েছেন। তাঁদের লেখায় প্রবাস
জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, উপলব্ধি, স্বদেশের স্মৃতি-আখ্যান, অভিবাসী জীবনের সংগ্রাম, সংকট ও স্বপ্নের কথা প্রকাশিত হয়।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বিশ্ববাঙালির সাহিত্যে প্রতিনিধিত্বকারী
অনেক কবি, লেখক ও সাহিত্যিক বিশ্বের
নানা প্রান্তে বসবাস করছেন। তাদের সাহিত্যের বহুমাত্রিকতা আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ
করেছে। বাংলা ভাষায় রচিত গ্রন্থের প্রতি প্রবাসী বাঙালিদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের বাঙালিদের মধ্যেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি
আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববাঙালির সাহিত্যকে বেগবান করার ক্ষেত্রে
অভিবাসী সাহিত্যিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই
নিয়ে আলোচনা করেন জাহিদ মুস্তাফা,
মুমিত
আল রশিদ, ফরিদ আহমদ দুলাল ও
আরেফিন রব।
বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের উপর মৌলবাদী
চক্রের সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে ‘হুমায়ুন আজাদ দিবসের ডাক- পাইরেসিমুক্ত
বইমেলা চাই’Ñ এই প্রতিপাদ্যে
একুশে বইমেলায় আজ বিকেল ৫টায় তাকে স্মরণ করা হয়। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে
বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রের সামনে আয়োজিত এ সভার শুরুতে তার
স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আগামী প্রকাশনীর নির্বাহী ওসমান
গনি’র সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি আসলাম সানী, কবি মোহন রায়হান, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, হুমায়ুন আজাদের ভাই সাজ্জাদ কবীর, বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. শাহাদাৎ হোসেন
নিপু প্রমুখ। বক্তারা বলেন,হুমায়ুন আজাদের
হত্যাচেষ্টার বিচারের রায় অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তাঁর আদর্শে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং
সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাকে যথাযোগ্যভাবে স্মরণ করা
হবে।
আগামীকাল বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলবে মেলা।_বাসস