
কবিতা। প্রতীকী ছবি
কাঁচা একটা ছেলে হঠাৎ একদিন যুবক হয়ে উঠলো
উজ্জ্বল মণি, কালো ভ্রু এবং দীর্ঘ একটা দেহ
কালচে দেহের উপরে কেউ যেন মধু ঢেলে রেখেছে
বলা যেতে পারে এস এম সুলতানের ক্যানভাস
‘প্রথম বৃক্ষরোপণ’ চিত্রকর্মের নায়ক-
নিদেন কৃষক, মাঝি বা জেলের সাথে রয়েছে তার দীর্ঘ ইতিহাস।
বাংলার পুরুষেরা যেভাবে মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়ায়
সে তাদেরই দলের লোক
মাছ ধরতে ধরতে যে মাঝি মনের সুখে গায় গান সেও ঠিক তারই মতন
অফুরন্ত সুখ যার হৃদয়ে বিলের মৃদু ঢেউয়ের মতো হেসে খেলে বেড়ায়
দুঃখ তার মনে কখনোই ঠাঁই করতে পারেনি
যেন হাওরের মধ্যিখানে ভেসে বেড়ানো উজ্জ্বল রাজহাঁস
সে পুরুষ, সে নিতান্ত বাঙালি পুরুষ
কোনো একদিন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সেই পুরুষের সাথে আমার হয়েছিলো দেখা
সেদিন চিনেছিলাম সুলতানের নায়ককে
একটুও ভুল হয়নি আমার-
সেই পুরুষের আজ হয়েছে বিয়া
মুখে রুমাল গুঁজে ঠিক আমার দাদার মতোই সে গিয়ে দাঁড়িয়েছে কনের বাড়ি
হাওরের ঢেউ যেখানে গিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে-
প্রত্যেক বিকেলে যেখানে সূর্য লুটায়ে পড়ে-
শুভ্র বকেরা যে গ্রামে ডিম দেয়- বাচ্চা ফোটায়- কনে থাকে সেই গ্রামে
সেইখানে পেয়েছে সে তার হৃদয়ের মানুষ- ধানের ফুল
তাইতো সে প্রকৃত কৃষক-কৃষাণীর হৃদয় পেতে যে করে প্রেমের চাষাবাদ।
গৃহিণীর সাথে হয়েছে তার দেখা-
হৃদয়ের ঘরে বসেছে এক তরুণী বাবুই-
এইবার সবুজ হবে গ্রাম
আমরা পাবো শান্তির সুবাতাস-
বিলের বাতানে ঘাই মারে যে মাছ
ভাসা পানিতে হ্যাজাকের আলোয় ধরে আনবে তারে
নৌকার পাটাতনে ঠাঁই ধরবে না
মধ্যরাতে ফিরবে বাড়ি
কই গো দেখছোনি, আউজগা মাছ পড়ছে খুব
কপালে বিরক্তির রেখা টেনে বিছনা থেকে উঠবে কইন্যা
চোখ ডলতে ডলতে কাটতে বসবে বাহারি জাতের মাছ
এজমালি পুকুরে ডুব দিয়া সরিষার তেল মাখতে বসবে সে
হইছেনি, ডাক ছাড়বে
আইতাছি আইতাছি একটু খাড়াউন উত্তর আসবে পাকের ঘর থেকে
কপাল কুঁচকাতে কুঁচকাতে পুঁটি মাছের বিরান নিয়া ফিরবে মাইজ ঘরে
খলশে মাছের ঝোলের ঘ্রাণ ভেসে আসবে দক্ষিণের ঘর থেকে
তৃপ্তির ঢেকুর তুলবে হৃদয়
সমস্ত আলো এসে পড়বে তাদের ঘরে
আমরা বলবো- এই তো সে- আমাদের হৃদয়ের সহোদর।