
মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেনের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
থিয়েটার হচ্ছে সে শিল্প মাধ্যম যা দর্শকের ভাবের আবেগ আদান প্রদানের ক্ষেত্রে উদ্বেলিত করার ক্ষমতা রাখে। সেটা সুদূর ইউরোপ হোক কিংবা আমাদের প্রাচ্যে, থিয়েটার তার নিজস্ব শিল্প সত্তার নান্দনিকতায় জনগণকে প্রবলভাবে আলোড়িত করার ক্ষমতা রাখে। তাই একবিংশ শতকে এসেও থিয়েটার এখনো গুরুত্বপূর্ণ শিল্প মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।
বার্টল্ট ব্রেখট ১৯৩৯ সালে লেখেন তার বিখ্যাত এপিক থিয়েটার মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন। ব্রেখট এই নাটকটি লিখেছেন ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগমুহূর্তে। নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখাতে চেয়েছেন। গত ৩ ও ৪ মার্চ এবং সম্প্রতি ১৭ মে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে বার্টল্ট ব্রেখটের লেখা ও রেজা আরিফের নির্দেশনায় কালজয়ী নাটক ‘মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন’। অভিনয়ে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীগণ।
এনা ফিয়ের্লিং নামে একজন মহিলা যিনি একাধারে ব্যবসায়ী ও তিন সন্তানের জননী। তাকে কেন্দ্র করে নাটকের চরিত্রগুলোর গল্প আবর্তিত হতে থাকে। সপ্তদশ শতকে ত্রিশ বছর ধরে চলমান ক্যাথলিক-প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মযুদ্ধের সময়; তিনি তার ভ্রাম্যমাণ ক্যান্টিন আর সন্তানদের নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইউরোপ ভ্রমণ করেন। পুরো নাটক জুড়ে, নাট্যকারের যুদ্ধবিরোধী মনোভাব ফুটে উঠেছে। নাটকটিতে যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যে মানবিকতা ও বেঁচে থাকার নৈসর্গিক উপজীব্য বিষয়গুলোকে একটি অবিচ্ছিন্ন সত্তায় আলোকপাত করা হয়েছে।
নাট্যনির্দেশক রেজা আরিফ সুনিপুণভাবে ব্রেখটের এপিক থিয়েটারের আদলে নাটকটির বিন্যাস ঘটিয়েছে। ব্রেখটের পদ্ধতিতে পাশ্চাত্য নাটকের অ্যারিস্টটলের ত্রি-ঐক্যের নীতিকে পাশ কাটিয়ে নাটকের গল্পকে বিন্যাস ঘটিয়ে যথাযথভাবে এপিকের প্রকাশ ঘটাতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। নাটকটির সঙ্গীতের ব্যবহার দর্শককে বারবার বিমোহিত করেছে।
সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে নাটকের আবেগ যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে দর্শক আনন্দ চিত্তের সাথে নাটকের ভাববোধের সাথে একাত্মতা হতে পেরেছে। নাটকের সেট, ডিজাইন আর পোশাকের সাবলীল বৈচিত্র্যে সুগভীর চিন্তার ছাপ রয়েছে। বিশেষ করে পোশাকের ক্ষেত্রে মধ্যযুগের ইউরোপের জনজীবনের সাথে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গিয়েছে।
নাট্যকার ব্রেখট থিয়েটারকে চেয়েছেন শুধু বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে নয় বরং তিনি চেয়েছেন মানুষের চিন্তা-চেতনা বোধ জাগ্রত করতে থিয়েটার কাজ করবে। ঢাকার মঞ্চে মাদার কারেজের মঞ্চায়ন যেন ব্রেখটের সে ইচ্ছারই প্রকাশ ঘটেছে। আর আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যুদ্ধ কখনো এই পৃথিবীতে শান্তি এনে দিতে পারে না।