
ওপেনহেইমার। ছবি: সংগৃহীত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে বানানো এই চলচ্চিত্রে রয়েছে বিজ্ঞানী ওপেনহেইমারের ব্যক্তিগত জীবন ও তার দর্শন। ২১ জুলাই মুক্তি পেতে যাচ্ছে ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ওপেনহেইমার’।
ওপেনহেইমার একজন বাতিকগ্রস্ত, পাগল, প্রচণ্ড মেধাবী বিজ্ঞানী। ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে মরণক্ষয়ী অস্ত্রের পেছনের প্রধান কারিগর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি একবার গুজব রটল হিটলার পারমাণবিক বোমা বানাতে চাচ্ছে, এদিকে আমেরিকানরা যে কোনোভাবেই যুদ্ধে জেতার নেশায় শুরু করে এক কালক্ষয়ী প্রজেক্ট। ‘প্রজেক্ট ম্যানহাটন’ নামের এ প্রজেক্টের অধীনে বানানো হবে ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক বোমা আর এ প্রজেক্টের প্রধান বিজ্ঞানী নিযুক্ত হন জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমার।
কোনো ল্যাব এক্সপেরিয়েন্স না থাকলেও রুক্ষ মেজাজ ও ভগ্ন স্বাস্থ্যের ওপেনহেইমার কাজ করে যাচ্ছিলেন নিরলসভাবে। এই বোমার প্রধান উপকরণ হলো প্লুটোনিয়াম। একটা পারমাণবিক বোমা বানাতে দরকার হয় ১৪ পাউন্ড প্লুটোনিয়াম। ওপেনহেইমার ও তার দলবল ইউরোনিয়াম থেকে বানাচ্ছিলেন প্লুটোনিয়াম। একে তো অনেক ঝক্কির কাজ আর এর সাথে ওপর থেকে ছিল দ্রুত বানানোর তাড়া। তার দল আমেরিকার মেসা মরুভূমির ল্যাবে সপ্তাহে ৬ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রম আর এক দিনে মদের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে পার্টি করতে করতে এক সময় বানিয়ে ফেললেন প্রথম পারমাণবিক বোমা। বোমা বানানো উপলক্ষে দেওয়া পার্টিতে প্রজেক্ট ডিরেক্টর লেসলি গ্রোভস বলেন জাপানে ফেলা হবে এই বোমা। জাপানের কাছে কোনো পারমাণবিক বোমা না থাকার পরও কেন ওদের ওপর ফেলা হবে এমন প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে বিজ্ঞানীরা ওপেনহেইমারকে ধরেন প্রশাসনের সাথে কথা বলার জন্য। প্রশাসনের কাউকে মানাতে না পেরে শেষে ওপেনহেইমার বলেন, ‘তাদের কাজ বোমা বানানো আর তা পরিচালনা করার ভার প্রশাসনের ওপরই থাকুক।’
জাপানের ওপর ফেলা বোমার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সবাই জানে। এত ক্ষতিতে ওপেনহেইমার বিমর্ষ হয়ে বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমার হাতে যেন রক্ত লেগে আছে।’ খ্যাতির লোভে কাজ করা ওপেনহেইমার যখন তার কাজের পরিণতি দেখে নিজেকে মানসিকভাবে ঠিক রাখতে পারেননি, তখন নিজের মনের সব কথা আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটিতে একবার বলে ফেললেন। এতে রুষ্ট হয়ে প্রেসিডেন্ট তাকে ‘ক্রাই বেবি’ বলেও সম্বোধন করেন।
পারমাণবিক বোমা বানানোর পর যখন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান হাইড্রোজেন বোমা বানাতে বললেন, ওপেনহেইমার মানা করে দেন। এজন্য নানাভাবে তাকে হেনস্তার শিকার হতে হয়। এক পর্যায়ে জানা যায় প্রজেক্ট ম্যানহাটনে নাকি রাশিয়ান স্পাইয়ের কাছে ওপেনহেইমার গুরুত্বপূর্ণ নথি আর ফর্মুলা পাচার করেছেন। তাকে রাশিয়া ঘেঁষা বানিয়ে বসানো হয় ট্রাইব্যুনাল। নিজের প্রতি রাগ ক্ষোভ অভিমানে তিনি একসময় স্বীকারও করে নেন অপরাধ।
ওপেনহেইমার যেমন প্রচণ্ড মেধাবী ছিলেন তেমনি সাধারণ মানুষের জন্য ছিলেন পাগলাটে গোছের। জাপানে বোমা ফেলবার আগে প্রজেক্ট ট্রিনিটি নামে যখন সফল বোমা বিস্ফোরণ টেস্ট করা হচ্ছিল, তখন তিনি আওড়াচ্ছিলেন ফরাসি কবি বদলেয়ারের কবিতা। হিরোশিমা-নাগাসাকি কাণ্ডের পর টেলিভিশনের সামনে কথা বলতে গিয়ে আড়ষ্ট কণ্ঠে গীতা শ্লোক পড়ছিলেন, Now I become death, The destroyer of the world.
ওপেনহেইমার নাম চরিত্রে অভিনয় করছেন টমাস শেলবি নামে খ্যাত আইরিশ অভিনেতা কিলিয়ান মারফি। এ ছাড়া আরও রয়েছেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, রামি মালিক, এমিলি ব্লান্ট, ফ্লোরেন্স পাগ প্রমুখ।