Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

মুজিব কোট

Icon

মাহফুজ রিপন

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৫৮

মুজিব কোট

ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

ছুটির ঘণ্টা বাজার আগে হেডস্যার পরীক্ষার হলে নোটিশ পাঠালেন। ছয় ডিসেম্বর ছাত্রদের চারুকারু পরীক্ষা। হাতের তৈরি শিল্পকর্ম সকাল দশটার মধ্যে জমা দিতে হবে লাইব্রেরি কক্ষে। ফাইহান প্রশ্নপত্র ভাঁজ করে জ্যামিতি বক্সে ভরছে আর ভাবছে চারুকারু পরীক্ষায় সে কী শিল্পকর্ম জমা দেবে? তার বন্ধু মুমতাহিন তৈরি করবে দোয়েল পাখি, ফুয়ারা তৈরি করবে নৌকা। ফাইহান মনে মনে ভাবছে তাকে অবশ্যই সেরা কিছু তৈরি করতে হবে। ফুয়ারা বলল, আমি তো মাটি দিয়ে নৌকা বানাব, ফাইহান তুমি কী তৈরি করবে? হাসতে হাসতে ফাইহান বলল, তাহলে তো আমাকে তোমার নৌকার মাঝি তৈরি করতে হয়। ওদের কথা শুনে ঐশি হাতে তালি দিয়ে বলল, তাহলে খুব মজা হবে। 

ফাইহান বাড়ি গেল। মায়ের হাতে দুপুরের খাবার মুখে নিয়ে হঠাৎ তার চোখ পড়ল দেয়ালের ক্যালেন্ডারের দিকে। সোনালী ব্যাংকের একটি ক্যালেন্ডার ঝুলছে তাদের দেয়ালে। সেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি, ছবির ভেতরে ছোট্ট করে নৌকার প্রতীক রয়েছে। ফাইহান আম্মাকে প্রশ্ন করল, আচ্ছা আম্মা জাতির জনকের ছবির পাশে ছোট্ট ঐ নৌকার ছবিটা কেন? আম্মা বললেন, নৌকা তো বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী প্রতীক। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়েই আমরা পাকিস্তানিদের নির্বাচনে পরাজিত করেছিলাম। নির্বাচনে পরাজিত হয়েও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে, সকল শোষণ নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তিনি তো আমাদের নৌকার মাঝি।

ফাইহান ইউরেকা-ইউরেকা বলে চিৎকার করে উঠল। মাকে জড়িয়ে চুমু খেয়ে বলল, চারুকারু পরীক্ষায় আমি মাটি দিয়ে একজন মাঝির মূর্তি তৈরি করব, আর সে মাঝি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জানো আম্মা, ফুয়ারা তৈরি করবে নৌকা আর আমি বানাব নৌকার মাঝি, খুব মজা হবে না! মা বললেন, তাহলে তো তোমাকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে। তাঁকে নিয়ে পড়তে হবে, বেশি বেশি তাঁর ছবি দেখতে হবে। ফাইহান আর দেরি না করে এক দৌড়ে খাবার ঘর থেকে চেয়ার নিয়ে এসে দেয়াল থেকে ক্যালেন্ডারটা নামিয়ে এক ধ্যানে বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকিয়ে রইল। দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর, মনে হলো ছবিটি যেন তার সাথে কথা বলতে চায়। ছবির মানুষকে তার বড় আপন মনে হয়। ফাইহান বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, সে দেখতে পায় দূরের ধান ক্ষেত, সাদা শাপলায় ভরে যাওয়া দক্ষিণের বিল। সে যেন স্পষ্ট দেখছে কালো দিগন্তরেখার কাছ বাংলার রাখাল রাজা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সে সোজা উপজেলা গণগ্রন্থাগারের বঙ্গবন্ধু কর্নারে গিয়ে বসল তারপর একে একে পড়তে লাগল, বাংলার স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন ও শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু সকলের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ও জীবনধারা। বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত সমস্ত বইগুলো পাঠ করে কিছু দিনের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিক আর ঘরকুনো স্বভাবের ফাইহানের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা দিল। সে এখন বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে চলে। টিফিনের সময় বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে খেতে বসে। সহপাঠীদের কোনো সমস্যা হলে সবাইকে নিয়ে সেটা মোকাবেলা করার চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে সে সবার প্রিয় একজন ছাত্রনেতা হয়ে উঠল।

আমদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় উপজেলা পরিষদের মধ্যে। প্রতি শুক্র ও সোমবার উজিরপুরে হাট বসে। দূর দূরান্ত থেকে এই হাটে মানুষ আসে পুরো সপ্তাহের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে। এক দুপুরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিদ্যালয়ে হাজির হলেন। সভাপতি আঙুলে মোটরসাইকেলের চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে ফাইহানদের শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ঢুকে হেডস্যারকে লক্ষ করে বললেন, শিক্ষক মিলনায়তনে আসুন জরুরি কথা আছে। হেডস্যার ফাইহানের হাতে চক আর ডাস্টার ধরিয়ে দিয়ে বললেন, সরল অঙ্কের সমাধানটা ব্ল্যাক বোর্ডে তোল, আমি সভাপতি সাহেবের সঙ্গে কথা বলে আসছি।

পরের সোমবারে ছাত্ররা যখন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলো তারা দেখতে পেল স্কুলের গেট খোলা, হাটের দোকানিরা স্কুল মাঠের ভেতরে আসন গেড়েছে। সভাপতির লোকজন তাদের লাইন ধরে দোকান বিছানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ধান, পাট, গম কেনা-বেচা চলছে ফাইহানদের খেলার মাঠে। সে দিন স্কুলে সমাবেশ ক্লাস হলো না। ছাত্রদের হেডস্যার বললেন, প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা আমি জানি সপ্তাহে একটি দিন সোমবার তোমাদের এখন থেকে একটু কষ্ট হবে। তবে খুশির কথা হচ্ছে হাটের ইজারা পেয়েছি আমরা, এখান থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা স্কুলের উন্নয়নে ব্যয় হবে। কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। হাটের ইজারার কোনো টাকা স্কুল পাচ্ছে না। সমস্তটাই সভাপতির পকেটে জমা হচ্ছে। হেডস্যার চিন্তায় পড়ে গেলেন, কাগজ কলমে হিসাব ঠিকই তোলা হচ্ছে কিন্তু কোনো অর্থ স্কুলের কাছে নেই। বিদ্যালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হেডস্যার ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকেছেন। মিটিংয়ে সকল ক্লাসের ক্যাপ্টেনদের সঙ্গে ফাইহানও উপস্থিত। মিটিং শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হেডস্যার এবং সভাপতির মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া শুরু হলো। চিৎকার চেঁচামেচি করে যখন সভাপতি রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তখন ফাইহানের মনে পড়ল বঙ্গবন্ধুর শৈশবের ইতিহাস সে বইতে পড়েছে, ‘১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় খোকার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল। সে বছর স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তদানীন্তন বেঙ্গল মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি স্কুলের ছাদ সংস্কারের দাবির উপর ভিত্তি করে একটি দল নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পথ রোধ করে, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।’

ফাইহানের এ কথা মনে পড়তেই বুকে সাহস সঞ্চারিত হলো, সে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সভাপতির পথ রোধ করে দাঁড়াল!

ফাইহান: সভাপতি সাহেব, আমাদের একটা জরুরি কথা আছে আপনার সঙ্গে।
সভাপতি: হ্যাঁ বলো।
ফাইহান: স্কুল মাঠে হাট বসার জন্য সোমবারে আমাদের সমাবেশ ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই বলছিলাম কী, হয় সোমবার হাট বসানো বন্ধ করুন, না হলে ঐদিনের জন্য আমাদের মর্নিং স্কুল চালু করে দিন।
সভাপতি: এটা কি মগের মুল্লুক পেয়েছো তোমরা? হেড মাস্টারের সঙ্গে এক হয়েছো, এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। হেড মাস্টারের দুর্নীতি ধরা পড়ে গেছে। আমি থানায় যাচ্ছি। হিসাবের খাতায় সব লেখা আছে কিন্তু স্কুল ফান্ডে টাকা নাই। দেখাচ্ছি মজা! 

এই কথা বলে সভাপতি মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে ভোঁ করে স্কুল থেকে বেরিয়ে গেল। ছাত্ররা চিন্তায় পড়ে গেল। সবাই একসাথে গোল হয়ে বসল বকুল গাছের ছায়ায়। তারা সবাই মিলে ঠিক করল সামনের সোমবার স্কুল মাঠে হাট বসতে দেবে না। যে করেই হোক স্কুল মাঠে হাট বসা বন্ধ করতে হবে। হেডস্যারসহ সব শিক্ষক ফাইহানদের সৎ ইচ্ছায় একমত প্রকাশ করলেন।

সোমবার ভোরবেলা আমদহ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা জড়ো হলো স্কুল মাঠে। ফাইহান হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল স্কুল গেটের সামনে। মুহুর্মুহু মিছিল চলছে, ‘স্কুল মাঠে হাট বসানো বন্ধ কর, বন্ধ কর। আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে।’ হঠাৎ করে সভাপতির গুণ্ডাবাহিনী আক্রমণ করল ছাত্রদের উপর। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী একে অপরের হাত ধরে মানব প্রাচীর তৈরি করল। কোনো ক্রমেই তারা আজ কাউকে স্কুল মাঠে ঢুকতে দেবে না। জীবন দিয়ে হলেও তারা তাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করবে। সভাপতির গুণ্ডাবাহিনীর সাথে প্রচণ্ড সংঘর্ষ শুরু হলো। একে একে তারা ছাত্রদের কাছে পরাস্ত হতে লাগল। ছাত্রদের মনোবল যেন আরও বেড়ে গেল। রণক্ষেত্রে পরিণত হলো আমদহ স্কুল। উঁচু মাটির ঢিবির উপর দাঁড়িয়ে ফাইহান সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করছে। তার এক আঙুলের ইশারায় মৌমাছির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে ছাত্ররা গুণ্ডাদের উপর। ছাত্ররা যখন গণধোলাই দিয়ে একে একে স্কুল মাঠ থেকে বাইরে বের করে দিচ্ছে এমন সময় দূর থেকে উড়ে আসা একটি ইটের আধলা ফাইহানের মাথায় আঘাত করল। মুহূর্তে মাথা ফেটে রক্ত বেরিয়ে গেল, আগুনের ফুলকির মতো বেরিয়ে আসা রক্তে ভিজে গেল ফাইহানের পরনের সাদা শার্ট এবং খাকি প্যান্ট। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ফাইহানের দিকে। স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রী আগুন চোখে সমস্বরে চিৎকার করে উঠল, ‘জয় বাংলা’ ‘ স্কুল মাঠে রক্ত কেন? সভাপতি বিচার চাই’ ‘লাল লাল রক্ত! আরও দেব রক্ত, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়।’ ফাইহানকে ছাত্ররা ঘাড়ে করে হাসপাতালে নিয়ে গেল। হেডস্যার চিন্তায় পড়ে গেলেন, উপায় না দেখতে পেয়ে থানায় ফোন করলেন, সঙ্গে সঙ্গে থানা থেকে এক গাড়ি পুলিশ চলে এলো সাইরেন বাজাতে বাজাতে। স্কুলের পরিবেশ শান্ত হয়ে আসলে, দারোগা সাহেব প্রধান শিক্ষককে বললেন, ‘আপনাকে আমাদের সঙ্গে একটু থানায় যেতে হবে, স্কুলের সভাপতি আপনার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন। আপনি সম্মানী ব্যক্তি, হ্যান্ডকাফ পরাব না। গাড়িতে উঠে বসুন।’ কিছু বুঝে ওঠার আগে পুলিশ হেডস্যারকে থানায় নিয়ে গেল। ছাত্ররা সবাই হতাশ হয়ে বসে রইল। মুহূর্তে এই খবর ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত উপজেলায়। 

হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিল ফাইহান, তার কাছেও পৌঁছে গেল এই খবর। কপালের ঠিক উপরে তিনটি সেলাই পড়েছে তার। সাদা ব্যান্ডেজে ঢেকে আছে মাথা। খবরটা শোনা মাত্র সে উঠে বসল, তারপর বাথরুমে যাবার কথা বলে গোপনে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সোজা স্কুল মাঠে পৌঁছে গেল। সকল ছাত্র ফাইনাহকে দেখে প্রাণ ফিরে পেল। তারপর স্কুলের সকল ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীকে নিয়ে সোজা রওনা দিল থানা ঘেরাও করতে। ফাইহান যেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। সবার আগে চলছে সে, তার পেছনে চলছে আমদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শত শত ছাত্র। থানার কাছে পৌঁছতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত দুজন সিপাহি তাদেরকে দাঁড়াতে বললেন। তারা সমস্বরে চিৎকার করে বলল, থানার ভেতরে ঢোকা যাবে না, ওসি সাহেবের নিষেধ আছে। তারা থানার গেট লাগিয়ে দিয়ে, রাইফেল হাতে প্রস্তুত হয়ে রইল। সাথে সাথে ফাইহানের মনে পড়ে গেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বইটির কথা। এই বইটিতে সে পড়েছে, ‘গোপালগঞ্জে তখন স্বদেশি আন্দোলনের ঢেউ এসে লেগেছে। আন্দোলনের এই সূত্র ধরে একদিন এক জনসভায় পুলিশ লাঠিচার্জ করল। শ্রোতা হিসেবে শেখ মুজিব সেই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের এই আচরণে কিশোর মুজিব খুবই ক্ষুব্ধ হলেন। এর ফলে বিক্ষোভকারী একদল তরুণ যখন থানায় ঢিল ছুড়তে এগিয়ে গেল, তখন শেখ মুজিবও ঢিল হাতে সেই তরুণদের মধ্যে মিশে গেলেন।’

একথা মনে পড়তেই ফাইহান ‘জয় বাংলা’ বলে চিৎকার করে উঠল এবং থানাকে লক্ষ করে ঢিল ছোড়া আরম্ভ করল। বৃষ্টির মতো শত শত ঢিল গিয়ে পড়ল থানার মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে খাকি পোশাক পরা সিপাহিরা রাইফেল হাতে এক দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো এবং সমস্বরে বাঁশিতে ফুঁ দিতে লাগল। ওসি সাহেব বাইরে এসে আকাশের দিকে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করলেন। মুহূর্তে শান্ত হয়ে গেল পরিবেশ। ছাত্র-ছাত্রীদের একটি অংশ প্রাণের ভয়ে দৌড় দিল কিন্তু ফাইহান থানার গেট ধরে দাঁড়িয়ে রইল। অবশেষে ওসি সাহেব তাকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিলেন। ফাইহান এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক ওসি সাহেবের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। ভেতরে গিয়ে দেখেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, হেডস্যার এবং ওসি সাহেব চেয়ারে বসে রয়েছেন। ওসি সাহেব ফাইহানকে লক্ষ করে বললেন, ‘তুমি কী চাও খোকা?’ ফাইহান বলল, ‘আমাদের হেডস্যার নিরপরাধ মানুষ, তিনি কোনো অন্যায় করেন নাই, স্যার একজন সৎ মানুষ। শত শত ছাত্র-ছাত্রী এসেছে তাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। আমাদের প্রাণপ্রিয় হেডস্যারকে মুক্তি দিন স্যার। আমরা তাকে নিয়ে স্কুলে ফিরে যাব। তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে এক পা নড়ব না।’ ওসি সাহেব ফাইহানের চোখের দিকে তাকিয়ে সভাপতির হাত থেকে মামলার কাগজটা হাতে নিয়ে একটানে দুই ভাগ, তারপর চার ভাগ করে ছিঁড়ে ফেললেন। শুধু একটি কথা বললেন, ‘খোকা তোমাদের হেডস্যার মুক্ত, যাও তাকে নিয়ে ক্লাসে ফিরে যাও।’ হেডস্যারকে মুক্ত করে বীরের বেশে ফাইহান থানা থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। তখন চারপাশে জয়ধ্বনি কেবল বাড়ছে আর বাড়ছে।

ঠিক এক সপ্তাহ পর সুস্থ হয়ে ফাইহান স্কুলে ফিরে এলো, সমাবেশ ক্লাসে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর ফাইহানের গলায় তার বন্ধুরা ফুলের মালা পরাল। হেডস্যার একটি প্যাকেট থেকে ছয় বোতামওয়ালা কালো রঙের একটি ‘মুজিব কোট’ বের করে ফাইহানকে পরিয়ে দিলেন। মাটির তৈরি পালতোলা নৌকা উপহার দিল ফুয়ারা, কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা বীর পুত্র ফাইহানকে ঘাড়ে করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুলল। ‘আমরা সবাই মুজিব সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা। এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫