Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

ঢাকার মঞ্চে সিদ্ধার্থ

ভেবেছিলাম, এ বুঝি কোনো কবিতা!

Icon

এহসান হায়দার

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১৩:০৯

ভেবেছিলাম, এ বুঝি কোনো কবিতা!

সিদ্ধার্থ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: মুনিরা মাহজাবিন মিমো

ঢাকার মঞ্চে ‘সিদ্ধার্থ’! এ খবরে চমকে গেলাম। নোবেলজয়ী লেখক হারমান হেসের লেখা একই নামের উপন্যাসটি আমার খুব প্রিয়। কলেজে থাকতে পাড়ার বড়দা চৈত্রমাসের ভরদুপুরে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। পাশে বাবলা ফুল ফুটে আছে, হলদে সে ফুল- দেখতে দারুণ লাগছিল। এরই মাঝে পাঠ শুনে মুগ্ধ হয়ে- সেদিন ঘোরের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এ বুঝি কোনো কবিতা! কিন্তু এ হলো ‘সিদ্ধার্থ’। পরে পড়ে নিয়েছিলাম পুরোটা।

সেই উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছেন রেজা আরিফ। দারুণ ব্যাপার, ভদ্রলোক সম্পর্কে আফসার স্যার (আফসার আহমেদ) বলতেন- ‘রেজা বড় নির্দেশক বুঝলে।’ 

তখনো রেজা আরিফের কাজ দেখা হয়নি। মঞ্চনাটকের দল আরশিনগরের চতুর্থ প্রযোজনা ‘সিদ্ধার্থ’- নির্দেশনা দিচ্ছেন রেজা। এ নাটকের মাধ্যমে মঞ্চে দেখা যাবে আমার পড়া সেই সিদ্ধার্থ, এই ভেবেই মিস করিনি। নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিসকেদারা ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়ি নেশাতুর পানশালার মাতালের মতো। সোজা শিল্পকলায় চলল যন্ত্রচালিত বাহন। তারপর সিদ্ধার্থ শুরু হলো। ঢুকতেই ধুপ-ধুনোর পাগল করা গন্ধ, সে এক পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিল আমাকে। এ যেন আমাদের বাড়ির সেই সন্ধেবেলা। মায়ের হাতের গন্ধঅলা মাটির ধুনোদানি, যখন লাল টুকটুকে রক্তজবা ফুটে থাকত শেষ আভা নিয়ে তেমন। আবহ সঙ্গীতের মোহে ভালো লেগে গেল।

শুরুতেই চমক,  ব্রাহ্মণকুমার সিদ্ধার্থ গৃহত্যাগী হয় এবং সন্ন্যাস গ্রহণ করে। দীর্ঘ তিন বছর কঠোর তপস্যার পর সন্ন্যাস ত্যাগ করে গৌতম বুদ্ধ সমীপে গমন করে; কিন্তু বুদ্ধের শিক্ষাও তাকে বন্ধনে রাখতে পারে না। সে অজানার উদ্দেশে গমন করে এবং অবশেষে এক নগরে উপস্থিত হয়। নগরের শ্রেষ্ঠ বারবনিতার প্রণয় তাকে পাগল করে। দৈহিক কামনা, ভোগ বিলাসে ভেসে যেতে যেতে একদিন তার বোধোদয় হয়। তার যত ক্লেদ আর কালিমা ধুয়ে ফেলতে নদীর কাছে আসে। তারপর সিদ্ধার্থের মনে হয় সেই পুরনো সেদিনের কথা। হ্যাঁ, এই সেই নদী, এই নদীর কাছেই আছে তার সকল প্রশ্নের উত্তর। এ কোন ঘোর, এ কোন জিজ্ঞাসা!  রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ৯ আগস্টের সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নাটকটি দেখতে দেখতে মনে হয়- সেই পুরনো দিনের কথা।

তা হলো- সিদ্ধার্থ একটা উপন্যাস এবং একটি  আত্মোপলব্ধির গল্প। নাটকটি মঞ্চে নাট্যরূপ দিয়ে যে মানুষটি আনলেন, সেই রেজা আরিফ সত্যি চমৎকৃত করলেন করলেন। কারণ এ নাটকে আলোর ব্যবহার, মঞ্চসজ্জা, আবহ সঙ্গীত এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রচেষ্টা সফলতা এনে দিয়েছে ‘আরশিনগর’ দলের ঝুলিতে। নির্দেশক রেজা আরিফ আবিষ্কৃত হলেন আমার নিকট সিদ্ধার্থের মধ্য দিয়ে, অভিনন্দন রেজা আরিফ ও নিরন্তর শুভকামনা আরশিনগর-এর জন্য। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫