সাহিত্যকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করার পরিবেশ তৈরি হয়নি

এহসান হায়দার
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:২২

কবি মোস্তাক আহমাদ দীন। ছবি: সংগৃহীত
কবি মোস্তাক আহমাদ দীন, কবিতার পাশাপাশি সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ে বিভিন্ন সাহিত্যপত্রে গদ্য লিখছেন। ভারতের আসাম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে প্রফেসর ড. তপোধীর ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে কাজী আবদুল ওদুদের মননবিশ্ব শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৯ সালে।
প্রাচীন ইতিহাসের প্রতি আগ্রহবশত অনুবাদ করেছেন [প্রথমে ফারসি এবং পরে] উর্দু ভাষায় লিখিত সিলেটের ইতিহাস বিষয়ক প্রাচীনতম গ্রন্থ ‘তারিখে জালালি’। তিনি সম্পাদনায়ও আগ্রহী, যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার, সিলেট। পেশাগত জীবনে একজন শিক্ষক, সিলেটের এমসি কলেজের বাংলা বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবনের শুরু, বর্তমানে সিলেট লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান এবং প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্বরত। ‘ভিখিরিও রাজস্থানে যায়’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার। সব মিলিয়ে তার গ্রন্থসংখ্যা ২৭টিরও অধিক। সম্পাদনা করেন সাহিত্যের সমালোচনা কাগজ ‘মুনাজেরা’। সম্প্রতি এই কবির মুখোমুখি হয়েছিলেন সাম্প্রতিক দেশকালের সাহিত্য সম্পাদক এহসান হায়দার।
আপনার কবিতাচর্চার শুরু হয়েছিল কীভাবে?
এক সহপাঠীর খোঁচায় শ্রেণিকক্ষে বসে একদিন একটি সমিল প্রেমের পদ্য লিখে ফেলায় অন্য সহপাঠী বন্ধুরা অবাক হয় এবং এতে আমিও বেশ উৎসাহী হয়ে উঠি। এর আগে- যতদূর মনে পড়ে- কাউকে ছায়াশত্রু বানিয়ে নজরুলের অনুকরণে দু-একটি বিদ্রোহের কবিতা লিখে এক অগ্রজ কবিকে দেখাই, তিনি বলেন, ‘কেন এবং কার সঙ্গে তোমার লড়াই?’ তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায়, কিন্তু সে-বয়সে কোনো রাজনৈতিক চেতনা ছিল না বলে এই প্রশ্নের কোনো যথাউত্তর তো দিতে পারিইনি, বরং কবিতার লক্ষ্য ও উপলক্ষ্য নিয়ে আরও ভাবনার মধ্যে পড়ে যাই। তারই কাছাকাছি সময়ে একদিন তার টেবিলে পেয়ে যাই বাংলাদেশের ষাটের দশকের একজন কবির একটি কবিতার বই আর একটি সাহিত্যপত্রিকা- সম্ভবত শুভেন্দু ইমাম-সম্পাদিত শিকড়- যে-পত্রিকার শুরুতেই ছিল দিলওয়ারের একটি কবিতা। এভাবেই ধীরে ধীরে কিছু বোধ-বুদ্ধি তৈরি হতে থাকে এবং কবিতা আমার দিনরাতের আরাধনা হয়ে পড়ে।
ছোটকাগজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আপনার কবিতাচর্চায় কতটা ভূমিকা পালন করেছে?
কবিতা লেখার শুরুর দিকে ছোটকাগজের অবদানই ছিল সবচেয়ে বেশি। সিলেটের মননশীল বইয়ের দোকান ‘বইপত্র’-এ আসত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ ছোটকাগজগুলো, আমরা সেগুলো কিনতাম এবং বিষয়-বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ কাগজগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম। কবিতা বা সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমে এখন আমার যে-সামান্য লেখালেখি এবং তাতে কেউ যদি কোনোরকম নন্দন-রুচির পরিচয় খুঁজে পান, তাহলে মনে করতে হবে এর পেছনে সেইসব ছোটকাগজের ভূমিকাই প্রধান। জীবনের প্রথম দিককার কিছু এলোমেলো পড়ার কথা বাদ দিলে এই পত্রিকাগুলোই আমার পরবর্তী পড়ালেখার দিশা দেখিয়েছে। তাই আমরা সমরেশ মজুমদারকে পড়ার আগেই পড়তে পেরেছি অমিয়ভূষণ মজুমদার ও কমলকুমার মজুমদার; ইমদাদুল হক মিলন পড়ার আগেই পড়েছি মাহমুদুল হক ও হাসান আজিজুল হক; রাহমান-আল মাহমুদ-শহীদ কাদরী এবং শক্তি-সুনীলের পাশাপাশি পড়তে পেরেছি মণীন্দ্র গুপ্ত, উৎপলকুমার বসু আর রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরীর মতো কবিকেও।
‘কাজী আবদুল ওদুদের মননবিশ্ব’ শিরোনামে আপনি পিএইচডি অভিসন্দর্ভ রচনা করেছেন। ওদুদের মনীষা এবং তৎকালীন মুক্তচিন্তা চর্চার ক্ষেত্রে তার অগ্রগ্রামিতা সম্পর্কে জানতে চাই।
১৯২৬ সালে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন শুরু হলো, তাদের মুখপত্র শিখার ৫টি সংখ্যাও বের হলো, এরপর রক্ষণশীলদের নানা প্রতিরোধ এবং বৈঠকের মুখে এক দশক পূর্ণ হওয়ার আগেই সংঘ ভেঙে যায়। তারপর সবাই যার যার মতো করে কাজ শুরু করলেন এবং কেউ কেউ একদম নীরবও হয়ে গেলেন।
সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে কাজী আবদুল ওদুদের যাত্রা শুরু, এরপর তার কিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পর রক্ষণশীলদের সঙ্গে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় দায়িত্বের জায়গা থেকে তিনি পুরোদমে মননশীল তৎপরতায় যুক্ত হন এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ বিষয়ে শান্তিনিকেতনে নিজাম বক্তৃতা দেওয়ার জন্য কাজী আবদুল ওদুদকে যখন অনুরোধ জানান রবীন্দ্রনাথ, তখন ওদুদের মধ্যে তিনি ‘পক্ষপাতহীন সূক্ষ্ম বিচারশক্তি’ এবং ‘প্রকাশশক্তির বিশিষ্টতা’ লক্ষ করেছিলেন। ওদুদের কবিগুরু গ্যেটেকে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মনে হয়েছিল অবিকল্প গ্রন্থ। এছাড়া বাংলার জাগরণ, রবীন্দ্রকাব্যপাঠ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল-প্রতিভা, হজরত মোহম্মদ ও ইসলাম এবং পবিত্র কোরআনের অনুবাদ- প্রত্যেকটি কাজই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। এখন, অন্তত তার শাশ্বত বঙ্গ সংকলনটি কেউ মনোযোগ দিয়ে পড়লে এই সময়ে এসেও তার চিন্তা কতটা প্রাসঙ্গিক ও অগ্রসর তা বুঝতে পারবেন।
আমাদের দেশের সাহিত্যচর্চায় ঢাকাকেন্দ্রিক বিশেষ গোষ্ঠীবাদিতা লক্ষ করা যায়। এই গোষ্ঠীবাদী বৃত্তের বাইরে থেকে প্রান্ত বা আঞ্চলিক পর্যায়ে থেকে একজন সাহিত্যকর্মীর চর্চার ক্ষেত্র কতটা মুক্ত বলে মনে করেন?
ঢাকাকেন্দ্রিক লেখকদের গোষ্ঠীবদ্ধতা আমাকে কখনো আক্রান্ত বা পীড়িত করেনি, তাই এ-বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে পারব না। লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো তাড়াহুড়া ছিল না বলে লেখালেখির শুরুর দিকের কয়েক বছর পর থেকে যখন যেখানে লেখা প্রকাশের আগ্রহ তৈরি হয়েছে লেখার-জোরেই সেখানে লিখতে পেরেছি। মূলত ছোটকাগজেই লিখেছি, অনেকের আন্তরিক আহ্বান সত্ত্বেও দৈনিকের সাহিত্যপাতায় লিখিনি। পরে যখন লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তখন তা জেনে সাহিত্যসম্পাদকেরা লেখা পাঠানোর জন্য আহ্বান ও অনুরোধ জানিয়েছেন, আমিও যথাসম্ভব যাচাই-বাছাই করে সেগুলোতে লিখেছি এবং এখনো লিখছি।
আপনি যেখানে জন্মেছেন সেই সুনামগঞ্জ শিল্পসাহিত্যে নানাভাবে সমৃদ্ধ। এখানে জন্মেছেন হাসন রাজা, রাধারমণ দত্ত, শাহ আবদুল করিম, দুর্ব্বীন শাহসহ আরও অনেক বাউল-ফকির। এই অঞ্চলের সঙ্গে সুফি-সাধকদের সম্পর্কও ছিল নিবিড়। আপনার কবিতার এই যুগশ্রেষ্ঠদের ছায়া অনুভব করেন?
এই প্রশ্নের উত্তর আগেও একাধিক জায়গায় দিয়েছি, তাই যে-কথাগুলো সেখানে বলা হয়নি কিন্তু পরে মনে পড়েছে এখানে সেগুলোই বলছি।
শৈশবে বাবা-মা-হারানো আমার এক ফুফাতো ভাই আমাদের বাড়িতেই থাকতেন। আমরা লক্ষ করতাম, তিনি শীতকালে মাঝেমধ্যে রাতের বেলা উধাও হয়ে যেতেন আর ভোরবেলা তাকে না দেখে মা বলতেন, ‘গোলাম আলি গানঅ গেছেগি।’ পরদিন যখন বাড়িতে আসতেন, আমি বলতাম, ‘ভাইছাব, রাইতকু কুয়াই গেছলায়?’, তিনি বলতেন, ‘মালজুড়া গানঅ গেছলামগিরে ভাই, যে গান অইল, আমীর উদ্দীন আর মুজিব সরকারর মালজুড়া।’ এরপর কিছুদিন বাড়িতে ক্যাসেটে রেকর্ড-করা কারী আমীর উদ্দীন ও মুজিব সরকারের গান শোনা যেত।
এছাড়া শৈশবে মায়ের কণ্ঠে শুনেছি রাধারমণ দত্তের গান, শুনেছি দু-একটি গোষ্ঠ গানও; আমার আরেক চাচা গাইতেন, ‘চিনিয়া মানুষের সঙ্গ লইও’ গানটি, পাশের বাড়ির আবদুল হান্নান ও আবদুস সালাম গাইতেন সৈয়দ শাহনুরের গান। অন্যদিকে আমার মামা আসাদ্দর আলী ছিলেন লোকসাহিত্য-গবেষক, যিনি সেই বিষয়ে বাংলা একাডেমি পুরস্কারও পেয়েছিলেন, ছোটবেলায় তার বইও বাড়িতে এসেছে, সেগুলোও নাড়াচাড়া করার সুযোগ হয়েছে। এইসবের ছায়া আমার লেখায় থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
ভিখিরিও রাজস্থানে যায় কাব্যগ্রন্থটি ২০১২ সালে এইচএসবিসি কালি ও কলম পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিল। পুরস্কারপ্রাপ্তি একটি বড় ব্যাপার- কবির কপালে একটা স্টার চিহ্ন এঁকে দিয়ে যায়। আপনি কীভাবে দেখেন এই সম্মাননাকে- বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে যখন কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, সারা দেশেই পুরস্কার দেওয়া-নেওয়ার একধরনের চক্র দেখতে পাই আমরা...
যেহেতু আপোসহীন থেকে সাহিত্যকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করার পরিবেশ ও পরিস্থিতি আজও আমাদের দেশে তৈরি হয়নি, তাই একজন লেখককে নিজের পরিবার ও সমাজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে লিখতে হয়। এক্ষেত্রে একটি সম্মানজনক পুরস্কার একজন লেখককে নিজের পরিবার ও সমাজে একটুখানি জায়গা করে নিতে/খুঁজে পেতে সহযোগিতা করে।
তবে পুরস্কার বিষয়ে আপনি যা বললেন, এসব কথা মাঝে মাঝে কানে আসে, কখনো কখনো সামাজিক মাধ্যমেও তা পড়তে হয়, তাতে মন খারাপ হয়। ইতিপূর্বে আমাকে যে-প্রতিষ্ঠান বা ছোটকাগজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা পুরস্কার বা সম্মাননা দিয়েছেন, তারা এখনো জীবিত ও সক্রিয় আছেন বলে তাদের ওপর ভরসা করে জোর দিয়ে বলতে পারি, আপনি দেশব্যাপী যে-‘চক্র’-এর কথা বললেন তারা কখনো দৃষ্টান্ত হতে পারেন না। কিছু কিছু সংগঠক ও লেখকেরা পাঠকদেরকে নির্বোধ মনে করে বিভ্রান্ত করতে চান, তারা আসলে একধরনের আত্মপ্রতারণাই করেন।
‘তাকে দেখে মনে হলো, প্রাচীন মসজিদের দিকে/ঝুঁকে ঝুঁকে যাচ্ছে শাদা শরীরের সাপ-’ [উপলব্ধি], এভাবে আপনার কবিতায় ‘দেহ’, ‘মন’, ‘শরীর’ এই তিনটি শব্দানুষঙ্গ নানান রূপে এসে ধরা দেয়। কবির ভাবনায় ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এগুলো কীভাবে বিস্তার লাভ করে, এ-বিষয়ে কিছু বলবেন কি?
এর উত্তর আপনি নিজেই অনেকটা দিয়ে ফেলেছেন। ধরুন আপনি ‘উপলব্ধি’ শিরোনামের যে-কবিতাটির কথা এখানে বললেন, সেখানে তো এই কথাটাই বলা আছে যে, প্রাচীন মসজিদের দিকে ঝুঁকে ঝুঁকে শাদা শরীরটাই যাচ্ছে শুধু, তার প্রাণ সঙ্গে যাচ্ছে না (কারণ প্রাণ অন্যত্রগামী)- শাদা কাপড়-পরিহিত আচার পালনের জন্য মসজিদেও দিকে একজন ব্যক্তির এই যে নিষ্প্রাণ যাত্রা, যেহেতু সে জীবিত, সেহেতু তাকে ‘শরীর’ই তো বলতে হবে. ‘দেহ’ও বলা যায়, কিন্তু কোনোভাবেই লাশ বলা যাবে না। এই যে ‘শরীর’ ‘দেহ’ মন, তা আমার কবিতায়- অন্তত আমার কাব্যচেতনা-অনুযায়ী- অনিবার্য। তাই এই চেতনাঋদ্ধ শব্দগুলো কথা ও হাড়ের বেদনা থেকে শুরু করে স্ফটিকচূড়ার নিচে পর্যন্ত বহু কবিতায় বিভিন্নভাবে ঘুরে-ফিরে এসেছে।
কোভিড-পরবর্তী সময়ে সাহিত্য চূড়ান্তভাবে একটি প্রজেক্টে রূপ নিয়েছে, নানামুখী প্রকল্প এসেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক অ্যাপও এসে গেছে; সৃষ্টিশীল জ্ঞানচর্চা আর সৃষ্টিশীল শিল্পচর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে নানা ভাবে- এই বিষয়গুলোকে একজন কবি হিসেবে আপানি কীভাবে দেখেন?
প্রকল্পের মাধ্যমে সমাজ-গবেষণা হয়, সাহিত্যের বাইরের সাহিত্য-ইতিহাসের সাহিত্যিক হিসাবনিকাশও করা যেতে পারে, কিন্তু এতে সৃষ্টিশীল সাহিত্য হয় না। সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গ-সান্নিধ্যের যে-সম্বন্ধ, সেটা হলো, আবহমান ইতিহাসের চেতনা-ধারণকারী ব্যক্তির সংবেদন-অভিজ্ঞতা।
আর কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা এখন যতদূর এগিয়েছে, বা তার চেয়ে যদি আরও এগিয়েও যায়, তা একপ্রকার যৌথ ‘কাজ-চালানো’র উপায় হবে মাত্র। সৃষ্টিশীল জ্ঞানচর্চা বা শিল্পচর্চার জন্য যে-‘অপূর্ব নির্মাণক্ষম প্রজ্ঞা’র দরকার, তার জন্য ব্যক্তির ধ্যান/নির্জনতা আর নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রচলিত ধারার বাইরের কোনো কাজ কি আপনার চোখে পড়েছে, যা আপনাকে ভাবিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে, কিংবা তার মধ্যে নতুন কোনো সম্ভাবনা দেখেছেন?
এই সময়ে অনেকের লেখায় ভাষা ও বিষয়-পরিবেশের নতুনত্ব পাই, সম্ভাবনাও দেখি, আলোড়িত হই, ভালো লাগে। কিন্তু আমাদের দীর্ঘ সাহিত্যপরিক্রমার সঙ্গে নিবিড় পরিচয় না-থাকায় কিছুদিনের মধ্যেই এদের অনেককেই কখনো পূর্বজ কোনো লেখকের এলাকায়, অথবা তার নিজের ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখি। অব্যাহত পাঠ-অনুশীলন, ধৈর্য আর যথার্থ প্রকাশ-বিবেচনা তৈরি হলে এদের অনেকেই নিজের জন্য আলাদা একটা অঞ্চল তৈরি করে নিতে পারবেন বলে আমার ধারণা।