রেলস্টেশনের দারোয়ান ছিলেন ম্যাক্সিম গোর্কি

শোয়াইব আহম্মেদ
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৫

ম্যাক্সিম গোর্কি। ফাইল ছবি
একদল লোকের মতে, সাহিত্যে তিনি রুশ বাস্তববাদের জনক। অন্যদল বলেন, তিনি সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার লেখক। যার লেখনীতে শোষিত শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবের অভূতপূর্ব আখ্যান রয়েছে। বিশ্বসাহিত্যের সচেতন পাঠকের দল এই রুশ লেখকের লেখা পাঠ করেননি, এমনটা হওয়ার সুযোগ একেবারেই কম। কে এই কালজয়ী লেখক? চোখ বন্ধ করুন- তিনি তো ম্যাক্সিম গোর্কি। গোর্কির ছেলেবেলার বিচিত্র ঘটনা জানাচ্ছেন শোয়াইব আহম্মেদ...
ম্যাক্সিম গোর্কির জন্মের বছর চারেকের মাথায় ১৮৭১ সালের গ্রীষ্মে বাবা ম্যাক্সিম ওলাওঠা রোগে গত হন। সন্তান-সন্ততি নিয়ে মা ভার্ভারার আশ্রয় হয় তার বাবা ভাসিলি কাশিরিনের সংসারে। সেখানে একটুও স্বাচ্ছন্দ্য মেলেনি বিত্তবান নানার সংসারে। নানা নাতিকে দুই চোখে দেখতে পারতেন না। কারণে অকারণে মারধর করতেন। তবে দরদি ছিলেন নানি। নানি আকুলিনার দুই নয়নের মণি ছিলেন গোর্কি। নাতিকে প্রায়শই তিনি শোনাতেন ছড়া, কিংবদন্তি আর রূপকথার নানা গল্প। সেও খুব আগ্রহ নিয়ে তা শুনত। বস্তুত অখ্যাত কিশোর গোর্কির থেকে সাহিত্য চর্চা করে বিপ্লবের ঝড় তোলা লেখক হয়ে ওঠার ভ্রুণ জন্মায় ছেলেবেলায় নানির হাতে।
গোর্কির প্রতি নানা বাড়ির সকলের উদাসীনতায় তার ছেলেবেলা পর্যবসিত হয় তিক্ততায়। তবুও একরকমভাবে তার জীবন কাটছিল। এরই মধ্যে দুর্ভাগা এই কিশোর মাতৃছায়াও হারিয়ে ফেলেন ১৮৭৯ সালে। পেটপুরে দুবেলা দুমুঠো খাবার খেতে দিতেন না নানা। আর শিক্ষা খুব সামান্য, হাতে গোনা যে কয়দিন একটি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন তা ছিল অনেকটা আমলে না নেওয়ার মতোই। বাড়িতেও পড়াশোনার পরিবেশ না থাকায় হয়ে উঠেছিলেন ডানপিটে ভবঘুরে এক কিশোর। শেষ পর্যন্ত নানার বাড়ি থেকে উচ্ছেদও হয়েছিলেন চুরির দায়ে। এই ঘটনার পর নানা সাফ জানিয়ে দেয়, নিজের জীবনযাপনের রাস্তা নিজের দেখে নিতে।
তারপর পেটের দায় তাকে, এক অজানা পথে নামায়। যেখানে প্রথম কিছুদিন পেট চালান নানা জনের ফায়-ফরমাশ খেটে। এর কিছুদিন পর কাজ জুটে যায় একটি খাবার হোটেলে। এভাবে একে একে যুক্ত হন বিচিত্র সকল পেশায়- মুচির দোকান থেকে শুরু করে রেলস্টেশনের দারোয়ান, রাস্তার দিনমজুরি থেকে শুরু করে বাগানের মালীর কাজ পর্যন্ত সকল কাজই করতে হয়েছে তাকে। বিক্ষুব্ধ জীবন, হাড়-খাটুনি আর জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে একের পর এক পেশা পরিবর্তন করতে গিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন পথে পথে ঘুরে। এভাবেই কৈশোর পেরিয়ে দারিদ্র্যকে নিত্যসঙ্গী করে যৌবনে পদার্পণ করেন প্রিয় লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি। ম্যাক্সিম গোর্কি জীবনপাথরে বীজ ফেলে অমূল্য শস্য ফলিয়েছেন। কিন্তু কেমন করে ছন্নছাড়া ডানপিটে সেই কিশোর হয়ে উঠলেন ম্যাক্সিম গোর্কি?