
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
উনিশ শতকের বাংলার অন্যতম ঋজু মানুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক। বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টা। যিনি দানবীর এবং দয়ার সাগরও বটে। আজও বাঙালিজীবনের মিথ হয়ে আছে তার বিদ্যার্জনের গল্প, মায়ের ডাকে সাঁতরে নদী পার হওয়ার কাহিনি। চালচলনে, পোশাকে-আশাকে কোনো বাহুল্য ছিল না। ‘যশুরে কৈ’ ঈশ্বরচন্দ্রের রসবোধ ছিল প্রবল। ঈশ্বরচন্দ্রের রসবোধের কাহিনি জানাচ্ছেন- শোয়াইব আহম্মেদ
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বইয়ের ব্যাপারে ছিলেন খুব শৌখিন। সমস্ত বইপত্র ভালো করে বাঁধিয়ে রাখতেন। যাতে বই নষ্ট না হয়ে যায়। একবার এক ধনী ব্যক্তি এসেছেন বিদ্যাসাগরের কাছে। তার ইচ্ছা, বিদ্যাসাগরের বইগুলো একবার দেখবেন। এই ইচ্ছা প্রকাশ করা মাত্র বিদ্যাসাগর তার বইগুলো দেখার অনুমতি দিলেন। ধনী ব্যক্তি দেখলেন প্রত্যেকটি প্রচুর খরচ করেই বাঁধানো। তা দেখে ধনী ব্যক্তিটি বললেন, ‘পণ্ডিতমশাই, এত টাকা খরচ করে বইগুলো বাঁধানোর কী দরকার?’
বিদ্যাসাগর ঐ ব্যক্তির কথায় হেসে বললেন, ‘কেন, দোষ কী?’
ব্যক্তিটি বললেন, ‘ভেবে দেখুন, ঐ টাকায় অনেকের উপকার হতে পারত। আপনি কী বলেন?’
বিদ্যাসাগর সব শুনে নিজের খদ্দরের চাদরটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘মশাই, আপনার গায়ের শালটা কিন্তু বেশ সুন্দর! কোথা থেকে কিনেছেন? দাম কত?’
ব্যক্তিটি বিদ্যাসাগরের প্রশ্নের উত্তরে সগর্বে বললেন, ‘শহর থেকে পাঁচশ টাকা দিয়ে শালটি কিনেছি’- উৎফুল্ল হয়ে শালের গুণকীর্তনও শুরু করলেন।
বিদ্যাসাগর ব্যক্তিটিকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘সবই তো বুঝলাম। পাঁচসিকে কম্বলেও তো শীত কাটে। এই দেখুন না, আমিই তো খদ্দরের মোটা চাদর গায়ে দিই, এই চাদরের দাম খুব কম। কী দরকার পাঁচশ টাকা দামের শাল গায়ে দেবার? এই টাকাতেও তো অনেকের উপকার হতে পারত। তা নয় কি?’
বিদ্যাসাগরের রসিকতাসুলভ তির্যক মন্তব্যটি বুঝতে পারলেন ধনী ব্যক্তিটি। লজ্জায় তার মুখ রাঙা হয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাঁধানো বইগুলো যথাস্থানে রেখে মাথা নিচু করে দরজার দিকে পা বাড়ালেন।