Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

কাঠের চিত্রকর্মে ইতিহাস

Icon

বখতিয়ার আবিদ চৌধুরী

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৬

কাঠের চিত্রকর্মে ইতিহাস

চিত্রকর্ম হাতে রেজাউল করিম। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

রেজাউল করিম খোকন একজন ব্যবসায়ী। পাশাপাশি ‘সুধা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। এটি তার নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। নদীভাঙন কবলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৩ সালের কোনো একদিন ফাউন্ডেশনেরই একটি কাজে সিরাজগঞ্জ যান রেজাউল করিম। সেখানে পারিবারিক সূত্রে পূর্বপরিচিত একজন পেশাদার চিত্রশিল্পীর মাধ্যমে নরেশ কুমার সূত্রধর নামের একজন দারুশিল্পীর খোঁজ পান তিনি।

রেজাউল করিম বলেন, নরেশের ঘরে গিয়ে দু-চারটি ভাস্কর্য দেখতে পেলাম, সেগুলো গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছিল। ভাস্কর্যগুলো দেখার পর আমি ভাবলাম, তার সাহায্যে নতুন কিছু তৈরি করতে হবে, যা সামাজিকভাবে সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে। ঢাকায় ফিরে আসার পর আমার মনে হলো, আমাদের দেশের মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ দিন দিন কমছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে যে বিপ্লবীরা মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন, যে সাহিত্যিকরা মানুষের ওপর একটি সুন্দর প্রভাব সৃষ্টি করতে পেরেছেন, সেসব বিষয়ে, অর্থাৎ ইতিহাস চর্চা থেকে অনেকটাই দূরে সরে যাচ্ছে। কাঠের ভাস্কর্য ও চিত্রকর্মগুলো যদি কোথাও স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবেও প্রদর্শিত হয়, মানুষ যদি সেখান থেকে কোনো বিশেষ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশদ জানার আগ্রহ খুঁজে পায় তাহলেই আমার লক্ষ্য অর্জিত হবে।

এরপর নিজের পরিকল্পনা সাজিয়ে কাজে নেমে পড়েন তিনি। কারিগরের কাছে ভালো কাঠ পৌঁছানো, সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক ঘটনা, ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে কারিগরকে প্রাথমিক জ্ঞানার্জনে সাহায্য করতে শুরু করেন। কারণ রেজাউল করিম ভাস্কর্য ও কাঠের চিত্রকর্মে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো তুলে আনতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। সে জন্য কারিগরকে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল। রেজাউল করিম সে কাজটি একাই করেছেন। ‘স’ মিলের ব্যবসা থাকায় ভালো মানের কাঠ পেতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি তার। আর কারিগরকে ছবি পাঠিয়ে দিতেন বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে, যাতে কাজটি নির্ভুল হয়। এভাবে ছয় বছর চলার পর তিনি অনুভব করলেন, দারুশিল্পের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা প্রয়োজন। 

এরপর নিজ খরচে ২০০৯ সালে জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। প্রদর্শনীটি যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রয়াত ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন (ভাষা মতিন) ও সেসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত ইটালা ওকি। তবে এরপর আর কোথাও প্রদর্শনীর আয়োজন করেননি রেজাউল করিম। তার জন্মভূমি সিরাজগঞ্জে দারুশিল্প নিয়ে একটি জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনার কথা জানালেন তিনি। এটি সবার জন্য উš§ুক্ত থাকবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও ভাবতে হবে না।

রেজাউল করিমের সংগ্রহশালায় যেমন আছে গ্রামীণ জীবনের নানা দৃশ্যের ভাস্কর্য, তেমনি রয়েছে পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহি বিদ্রোহ, ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধের কাঠের চিত্রকর্ম। তার সংগ্রহে আছে ইলামিত্র, প্রীতিলতা, সুভাষ বসু, মওলানা ভাসানী, মাস্টারদা সূর্যসেন, বিনয়-বাদল-দিনেশসহ আরও অসংখ্য বিখ্যাত বিপ্লবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তির অবয়ব।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫