
প্রতীকী ছবি
ভাবছি এখন থেকে কবিতা লেখার
পরে কিছু দিন
ব্যালকনিতে ঝুলিয়ে রাখব :
হাওয়ায় উড়বে, বৃষ্টিতে
ভিজবে, রোদে শুকোবে;
পাখি এসে ঠুকরে ঠুকরে বের
করবে কবিতার সুপক্ব বীজ।
ওকে আমি উইকেন্ডে নিয়ে
যাব জ্যাকসন হাইটসে,
দেখাব মিশ্রবর্ণের
সৌহার্দ্য;
মেহিকান সীমান্তে আটকে পড়া
ইমিগ্র্যান্টদের কান্না
শোনাতেও নিয়ে যাব একদিন;
সিরিয়ার উদ্বাস্তু শিশুরা
যখন ম্যানহাটনের ফুটপাতে,
সাহায্য-প্রত্যাশী যূথবদ্ধ
যুগল করতল,
ডাইম কিংবা কোয়ার্টারের
বদলে
আমি একটি কবিতা তুলে দেব,
হিজাবের নিচে অশ্রুসিক্ত
সিরীয় মায়ের দেহে
ভর রেখে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুর
কম্পিত করতলে;
আমার কবিতা দেখে আসবে
মানুষের অশ্রুবিন্দু থেকে
গড়ে ওঠা সমুদ্র কতটা গভীর।
তেলের পাইপলাইনেও একবার
কায়দা করে দুয়েকটিকে পাঠিয়ে
দেব,
জেনে আসবে ক’ফোটা রক্তের
বিনিময়ে
ক’ফোটা তেল গড়ায় স্বার্থের
পাইপলাইন দিয়ে।
আমার হয়তো আর আফগানিস্তানে
যাওয়া হবে না
কিন্তু জাতিসংঘের কোনো
সহকর্মী যখন যাবে,
ওর ব্যাকপ্যাকে দুটো কবিতা
ঢুকিয়ে দেব,
জেনে আসবে কাবুল-রহস্য।
অটিস্টিক শিশুর ক্রেয়নের
নিচে বিছিয়ে দেব আমার সব
কবিতা,
নানান রঙের দাগে ওরা
নির্মোহ হয়ে উঠবে।
কবিতাকে আমি নিয়ে যাব
সবখানে :
ব্রথেলে, যুদ্ধের মাঠে,
হেঁশেলে, গোয়ালঘরে,
পাঁচতারা হোটেলের বলরুমে,
এমনকি নর্দমার পাইপের
ভেতরেও।
সঙ্গমরত দম্পতির শীৎকারে
বেজে ওঠে কবিতার ছন্দ,
ভূমিষ্ঠ হয়েই শিশু
কবিতা-চিৎকারে পৃথিবীকে
জানায়
তার আগমন সংবাদ,
যা শুনে মায়ের মুখে ফুটে ওঠে
একটি পূর্ণাঙ্গ কবিতা।
শ্রমিকের হাতুড়ি কবিতা
ছাড়া আর কোন ছন্দে নির্মাণ
করে সভ্যতা,
রেলগাড়ি কী দারুণ কবিতা
ছড়িয়ে দেয় দুপাশের লোকালয়ে,
ফসলের মাঠে গ্রীষ্মের
হাওয়ায় দোলে সবুজ কবিতা,
হেমন্তে টুপটাপ ঝরে পড়ে
লাল-হলুদ কবিতা-বৃষ্টি
বৃক্ষের ডাল থেকে।
কবিতা ছাড়া আর কোন আলো ছড়ায়
ভোরের সূর্য?
পাখিরা কোন ছন্দে ডেকে ডেকে
প্রকৃতির ঘুম ভাঙায় কবিতা
ছাড়া?
সৃষ্টি-রহস্যে কবিতা,
রহস্যের উন্মোচনেও কবিতা,
চেতন-অর্ধচেতনে
আমাদের অবচেতনেও কবিতা,
কবিতার চেয়ে উজ্জ্বল আর কোন
চেতনা আছে,
যখন সকল চেতনার আঁতুড়ঘরই
কবিতা।
মানুষের মৃত্যুও একটি
অনিন্দ্য সুন্দর কবিতা ছাড়া
আর কিছু নয়।