
বইমেলা। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাস থেকে জানা যায়, বিশ্বে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত বইমেলার ইতিহাস পাঁচশ বছরের অধিক পুরনো। ১৪৬২ সালে ইউরোপের দীর্ঘতম নদী মাইন পাড়ে বিশ্বের প্রথম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মাইন নদীর অবস্থান জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের কোলঘেঁষে; যা বর্তমানে ‘দ্য ফ্রাঙ্কফুর্ট বুকফেয়ার’ নামে পরিচিত। তৎকালীন জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট ছিল ইউরোপের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষের যাতায়াত ছিল ফ্রাঙ্কফুর্টে। তাদের কেন্দ্র করেই মূলত গড়ে উঠেছিল ফ্রাঙ্কফুর্টার মেস। গোড়ার দিকে বইকে ঘিরে ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী অভিজাতদের মিলনের স্থল ছিল ফ্রাঙ্কফুর্ট। অধ্যাপক, পণ্ডিত, সংগ্রাহক এবং ধর্মযাজকেরা তাদের লেখা বই আকারে প্রকাশ করা বা প্রকাশক খুঁজতে কিংবা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে মাইন নদীর তীরবর্তী শহর ফ্রাঙ্কফুর্টে একত্র হতেন।
১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রসিদ্ধ ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিকে প্রকাশিত গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের একটি সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, বইমেলার সময় সেখানকার রেওয়াজ অনুযায়ী পুরুষেরা তাদের প্রেমিকা, বান্ধবী, স্ত্রী অথবা যে কোনো নারী আত্মীয়ার হাতে ফুল তুলে দিতেন এবং বিনিময়ে নারীরা বইমেলা থেকে তাদের বই উপহার দিতেন। মার্কেস বলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী কাঠের তৈরি বইয়ের স্টলগুলোর মাঝখান দিয়ে হাঁটছিলাম আর লক্ষ করছিলাম বইয়ের স্টলের সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে অজস্র ফুলের ছড়াছড়ি।’
প্রতিবছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা। এখানে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ থেকে ৭৩০০-এর মতো প্রকাশক এবং পরিবেশক অংশ নিয়ে থাকেন। ২০১৫ সাল থেকেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ফ্রাঙ্কফুর্টের আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশও অংশগ্রহণ করছে। মেলার প্রথম তিন দিন উন্মুক্ত থাকে ব্যবসার কাজে যারা আসেন শুধু তাদের জন্য। বাকি দুদিন সবার জন্য মেলা খুলে দেওয়া হয়। মেলায় দুই লাখের মতো মানুষ আসেন বই কিনতে, বিক্রি করতে, শিখতে অথবা শুধু উদ্বুদ্ধ হতে। বই নিয়ে সবচেয়ে জরুরি যে বাণিজ্য অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশনার অধিকার ও লাইসেন্স ফির মতো সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় এখানেই। বই বিষয়ক বিভিন্ন চুক্তি যেমন- অনুবাদ স্বত্ব, আন্তর্জাতিক গ্রন্থাগার সেবা অথবা বিভিন্ন প্রকাশকের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ইত্যাদি মূল আলোচনার বিষয় থাকে। মেলায় উপস্থিত থাকেন প্রকাশক, এজেন্ট, লেখক, ইলাস্ট্রেটর, চলচ্চিত্র প্রযোজক, অনুবাদক, ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরাও।