Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

শিল্পী শ্রীবাস বসাকের প্রথম একক: চিত্রপত্র

Icon

জাহিদ মুস্তাফা

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৬

শিল্পী শ্রীবাস বসাকের প্রথম একক: চিত্রপত্র

চিত্রশিল্পী শ্রীবাস বসাক।

শিল্পী শ্রীবাস বসাক এই নামটির সঙ্গে আমার চেনা-জানার বয়স প্রায় চার যুগ। টাঙ্গাইলে আমার অঙ্কন শেখার নবিশকালে প্রতিবেশী দাদা মনোজ সাহার কাছে প্রথম তার নামটা শুনি। তিনি ঢাকার চারুকলা থেকে পাস করে বিটপীতে বিজ্ঞাপনের ছবি আঁকেন। পরে আশির দশকে চারুকলায় আমার পাঠগ্রহণকালে বিটপীতেই শ্রীবাস দার সঙ্গে দেখা ও পরিচয়। এরপর ভিন্ন পেশায় আমার নিয়োজনের ফলে বহুকাল যোগাযোগ ছিল না।

সত্তর দশকের চিত্রশিল্পী শ্রীবাস বসাকের জন্ম ৩ জুলাই ১৯৫০ সালে। ১৯৬৬ সালে চারুকলায় ভর্তির খোঁজ নিতে এসে দেখেন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তিনিও পরীক্ষায় বসে যান এবং উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন। সে সময় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, আনোয়ারুল হক, সফিউদ্দীন আহমেদ, মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, কাইয়ুম চৌধুরী, কাজী আবদুল বাসেত, রফিকুন নবী প্রমুখ গুণী শিক্ষকের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৭২ সালে অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে স্নাতক করে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭২ সাল অব্দি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।

২০১৬ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে তার কন্যা ঊর্মিলা শুক্লার উদ্যোগে চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে আয়োজিত বাবা- মেয়ের যুগল ছবির প্রদর্শনী ‘পরম্পরা’র কল্যাণে তার সঙ্গে আবার দেখা, তত দিনে আমাকে আর মনে নেই দাদার! সে যা-ই হোকশ্রীবাস দা ও তার কন্যার চিত্রকর্ম অবলোকনের একটা সুযোগ হয়েছিল সেবার। 

এবার তার কাজ দেখা হলো আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রফিকুন নবীর বাসায় শিল্পী-কন্যা ও কৃতী জামাতা যথাক্রমে ঊর্মিলা শুক্লা এবং জলের গানের রাহুল আনন্দের কল্যাণে। একটা একটা করে কাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ হলো আমাদের। দেখছিলাম আর ওদের কাছে শুনছিলাম- শ্রীবাস বসাক নিয়মিত ছবি আঁকেন, তার স্ত্রী, ছোট ভাই ও পরিবারের সদস্য তিন কন্যা শিল্পীর সহায়। ঘর ভর্তি তার আঁকা ছবিতে। আমি বলি- এই যে রোজ আঁকছেন, এটিই শিল্পীর জীবনীশক্তি!

লোকায়ত চরিত্র, মানব-মানবীর অবয়ব, বাংলাদেশের নিসর্গ, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসব, গরু-ঘোড়া, পাখি ও বিড়ালের ছবি তিনি এঁকেছেন নানা বর্ণিল রঙ আর স্বচ্ছন্দ রেখায়। কাজ দেখতে দেখতে নবী স্যার বলছিলেন- ‘অন্যরকম ভালো লাগার মতো কাজ শ্রীবাসের, দেখো ভালো একটা প্রদর্শনী হবে। আলঙ্কারিক কাজগুলো ওর অনেক মজার।’

আমি তার কাজ দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছিলাম অতীতে, আমাদের উপমহাদেশের চিত্রকলার সৌন্দর্য বিস্তারী ইতিহাসের কাছে। গতিময় ও নিজস্ব রেখাঙ্কনে মময়মনসিংহ অঞ্চলের টেপা পুতুল থেকে বাঁকুড়ার পৃথুলা পুতুলের গড়ন নিয়ে তিনি এঁকেছেন, আবার কোনো কোনো অঙ্কনে পাশ্চাত্য আধুনিকতার সংশ্লেষও পাওয়া যায়, এসব দেখে-শুনে বুঝে মনে হয়েছে- শিল্পী শ্রীবাস বসাক আমাদের পাশ্চাত্যধারার একাডেমিক শিল্পশিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প ও প্রাচ্যকলা রীতির অঙ্কনকে যুক্ত করেই আঁকতে আঁকতে সহজ সাবলীল নিজের একটা ধরন তৈরি করেছেন। আর এখানেই শিল্পীর সার্থকতা। 

টেপা পুতুলের ধরন নিয়ে শ্রীবাসের আঁকা মাটির পুতুল তার সৌন্দর্য ও সারল্যে একটি হৃদয়গ্রাহী চিত্রকর্ম। কইন্যা শিরোনামে তার কয়েকটি চিত্রাঙ্কনে আমরা দেখতে পাই বাংলার লোকশিল্পের নানা ঘরানার বৈশিষ্ট্য। বাংলা মায়ের ছেলে-১ চিত্রে বীরত্ব ব্যঞ্জনা প্রকাশ পেয়েছে। 

প্রথম এই একক প্রদর্শনীর আয়োজন তার তিন কন্যার দীর্ঘদিন ধরে লালিত একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন। কন্যার স্বপ্ন সার্থক হোক, শিল্পী শ্রীবাস বসাকের জয় হোক!

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫