
প্রতীকী ছবি
‘চলেন ভাই। আমি উত্তরণ নামে একটা এনজিওর প্রজেক্টে ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। নিকেতন লেক-পার্কের পাশে একটা বটগাছ; ওখানে ওরা দাঁড়ায়। আপনি সিএনজিটা নিয়ে মেইন রোডে দাঁড়াবেন আর আমি ডিল করে নিয়ে আসব।’ কথাগুলো যতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মুরাদ বলুক না কেন, সে ততটা আত্মবিশ্বাসী নয়; কিন্তু আজমল আজ চার বছরের নির্ভরযোগ্য জুনিয়র মুরাদের উপর নির্ভর করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখল না।
আজমলের এই মেলামেশার দোষ আছে। মেয়েদের বিষয়ে তার একটা আলাদা আকর্ষণ আছে। মুরাদ আর আজমল ইউনিভার্সিটিতে একই হলে থাকত। যদিও দুজনে ভিন্ন ডিপার্টমেন্টের, একজন সমাজবিজ্ঞান ও অন্যজন জুওলোজির। পরে আজমল স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে চলে যায়। দেশে ফিরে সে মুরাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখন মুরাদ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে। টুকটাক ইনকামে কোনোমতে ঢাকায় টিকে আছে। আজমল ভাই তার ফ্ল্যাটে থাকতে বললে সে এক কথায় উঠে পড়ে। তবে এখানেও কাবিখা অর্থাৎ কাজের বিনিময়ে খাদ্য। বাজার-টাজার করা, রান্না-বান্না করা, সাফ-সাফাই আর ফাই-ফরমাশ খাটা মুরাদের অলিখিত কাজ।
প্রথম প্রথম আজমলের হাতে কিছু টাকা-পয়সা থাকার কারণে সে বারে যেত। নামি-দামি হোটেলে মহিলাদের সঙ্গে রাত কাটাত। কিছুদিন পর তার টাকা পয়সা শেষ হতে থাকে। ফ্ল্যাট থেকে দুই রুমের বাসা; দুই রুমের বাসা থেকে এক রুমের বাসা নেয়। হোটেল-রমণী থেকে রাস্তার নারীতে নেমে যায়।
আজমল সিএনজিতে অন্ধকারের আড়ালে বসে আছে। তার ভেতরে উত্তেজনা ও টেনশন। কিছুক্ষণ পর মুরাদ আসে। সঙ্গে একটি মেয়ে। উচ্চতা ভালোই। চেহারাটা ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। সিএনজি চলছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। কিছুদূর যেতেই চেক পোস্টের পুলিশ সিএনজি দাঁড় করায়। পুলিশ সিএনজির পাশে এসে ঝুঁকে ভেতরটা দেখে,‘কে?’
‘কাজের বুয়া।’
‘কোথায় যাচ্ছেন বুয়াকে নিয়ে?’
‘যাচ্ছি না তো। আসলাম।’
‘কোথা থেকে?’
‘বাসস্ট্যান্ড থেকে। উনি আমাদের গ্রাম থেকে আসছে। আমাদের বাসায় কাজ করবে।’
আজমল ভয়ে ভয়ে, ‘উনি তো রাস্তাঘাট চেনে না, তাই নিয়ে আসতে গেছিলাম।’
‘তাই? পুলিশকে বোকাচোদা মনে হয়। নাকি পুলিশ ঘাসে বুক দিয়ে চলে। নাম তিনডাই...’
‘মানে স্যার?’
‘মানে স্যার! নিয়া যাচ্ছিস তো একটা হিজড়া।’ বলে পুলিশরা হাসাহাসি শুরু করে দেয়। এই প্রথম আজমল মেয়েটির মুখের দিকে তাকায়। মুরাদের চোখে ভয় ও বোকা হওয়ার অসহায়ত্ব। হিজড়া মেয়েটিকে তাড়িয়ে দিয়ে পুলিশ তাদের পকেট চেক করে। কিছু টাকা পায়, সেগুলো রেখে দেয়। ‘যা রাস্তা মাপ।’ বলে দুজনের পাছায় লাঠি দিয়ে দুই ঘা দিয়ে ছেড়ে দেয়।
মুরাদ ও আজমল ব্যর্থ মিশনের মন খারাপ নিয়ে হাঁটছিল। এমন সময় একটা প্রাইভেট কার এসে তাদের পাশে দাঁড়ায়। ‘এক্সকিউজ মি ভাইয়া আপনাদের কাছে আগুন হবে?’ কোনো কথা না বলে আজমল লাইটারটা এগিয়ে দেয়। সিগারেট ধরিয়ে ‘আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?’
‘রাস্তা মাপছি।’
আদুরে সুরে মুরাদের উদ্দেশে বলে, ‘হাউ কিউট ইউ আর!’
‘কেন?’
কিছুটা ইঙ্গিতের স্বরে, ‘রেট ভালোই দিব। সমস্যা নেই। চলেন ভাই।’
আজমল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মুরাদের দিকে তাকায়। কারণ আজমল এই অভাবের বাজারে আজকের এই টাকার ক্ষতিটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।