
প্রতীকী ছবি
ইচ্ছেকে ক্লাসে ঢোকানোর মুখে বেঞ্চে বসা কেউ একজন জিজ্ঞেস করল, আমি ওর বাবা কিনা। কথাটা খুব স্পষ্ট নয়, কণ্ঠস্বর বিড়ালের মতো লোমে ভরা। ইচ্ছে কী উত্তর দিল, তা আমার কানেও আসেনি, মাথা নেড়েছে হয়তো, হয়তো নির্বিকার থেকে অভ্যস্ত বা ঈপ্সিত সিটের দিকে দ্রুত হাঁটা দেয়।
রুম থেকে বের হওয়ার মুখে সাদা অ্যাপ্রোন পরা ওদের এক পরিচারিকা, যারা নীল শাড়ির ভেতর সারা দিন ডুবে থাকে, বিমর্ষ, কেবল পানির কলের কয়েকটি শব্দে সাবলীল। এদের মধ্যে একজন পলি বা পারুল, নামটা ঠিক শুনতে পাইনি, যার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়েছিল ইচ্ছের প্লে গ্রুপের ক্লাসে, ওরই চেয়ারে বসে, বাচ্চারা খেলছিল, আমাদের বসার চেয়ার নেই; কিন্তু প্রথম দিন ওর মিস আমাদের ওই খুদে চেয়ারে বসতে বলায় অবাকই হয়েছিলাম। চেয়ারের ব্যাকরেস্টে দুদিকের দুটো কাঠ পেনসিলের মতো, যাদের রঙ ডার্ক প্যাস্টেল বারের মতো। পলি বা পারুল নিজ থেকে বলছিল, স্কুলের কথা, নিজের কথা। আমি কোনো প্রশ্ন করিনি, শুনতেও চাইছিলাম না। শুধু ইচ্ছের আন্টি বলে ভদ্রতা দেখিয়ে মাথা নেড়ে নেড়ে সায় দিচ্ছিলাম। ওনার কথা শুনতে শুনতে আমার মন একটা পরিত্যক্ত রাইফেলের নির্জনতা ছিঁড়ে তীব্র লাল হয়ে জ্বলে উঠল; কিন্তু আমি চুপ থাকি, গিলে ফেলি আমার সমস্ত প্রতিক্রিয়া।
আরেক দিন, দীর্ঘ ছুটি হওয়ার আগে আগে কেউ একজন আমার কাছে বকশিশ চাইল, পলি বা পারুল নয়, চেহারার দিকে তাকাইনি, বললাম, ‘আচ্ছা।’ দাঁড়াইনি। আমি কখনোই বকশিশ দিই না; কিন্তু বাসায় ফিরে মনের ভেতর থেকে খুচরো নোটগুলোকে সরাতে পারছি না।
শেষ দিন, মুদি দোকান থেকে চারটি ৫০ টাকার নোট নিলাম, একটি নতুন, সেটা পলি বা পারুলকে দেওয়া যাবে। ছুটির পর ইচ্ছেকে নিয়ে বের হচ্ছি, কোথায় সেই আন্টি? বা পলি বা পারুল! গেটের কাছে এক নারী অভিভাবক তার বাচ্চার হাত ছেড়ে গার্ডের হাতে একশ টাকার দুটো নোট গুঁজে দিচ্ছে। আমি দুটি নোট জলদি তার হাতে, এবং আর দুটো আরেকজনের হাতে দিলাম, যার চেহারা অস্পষ্ট, তাকাইনি, কেবল অ্যাপ্রোনের সাদাটা চোখে পড়ল।