Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

ঈদের স্মৃতি

Icon

হেনা সুলতানা

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৪, ২০:৪০

ঈদের স্মৃতি

প্রতীকী ছবি

অবসরজীবনের বয়সে এসে যখন পিছনের দিকে তাকাই মানে ছেলেবেলার কথা ভাবি, আনন্দের স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়াই তখন হুড়মুড়িয়ে ভিড় করে আসে সেই সব দিনের কথা-স্কুলের লম্বা ছুটির দিনগুলো, এই দিনগুলো ছিল আমার সবচেয়ে পছন্দের। গ্রীষ্মের ছুটি, রমজানের ছুটি। ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটির শেষদিকে ঈদের বিশাল আনন্দ।

আমাদের ছেলেবেলায় এই ছুটিটা পেতাম শীতকালে। আরেকটা ছুটি হতো এর ঠিক আড়াই মাস পর। কোরবানি ঈদের। সে ছুটি  অবশ্য অল্প কিছুদিনের। তখনো কিছু শীতের আমেজ থাকত। তো যে জন্য আনন্দ তা হলো স্কুল বন্ধের। স্কুল বন্ধ মানেই আমাদের যুগে এক ধরনের লাগাম ছাড়া দিন কাটানো। মফস্বল এলাকার স্কুল, বাড়ি থেকে যাওয়ার পথটা ছাড়া স্কুল আমার একদমই ভালো লাগত না। বিশেষ করে অঙ্ক ক্লাস, সে ছিল আমার কাছে যমদূতের মতো। যদিও সে ভয় থেকে এখনো আমি মুক্ত নই। কিছু শোনার আগেই স্যারের টেবিলে রাখা ডাস্টার আর বেত কথা বলে উঠত। তাদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া-সে আনন্দে চুপসানো বেলুন ফুলেফেঁপে উঠত যে কীভাবে তা এখন ঠিক বুঝিয়ে বলা বড় শক্ত। তখন আরেক আনন্দ-ঈদের নতুন জামা। এখনকার মতো ইচ্ছে হলেই কারণে অকারণে নতুন জামা কেনার রেওয়াজ ছিল না তখন। তবে ঈদ এলে নতুন জামাকাপড় তৈরি করা বা কেনা এক রকম ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যেই ছিল। সেই সঙ্গে স্যান্ডেল-জুতো, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনাকাটার আনন্দ তো ছিলই।

একবার কী হলো-আমার বড় আপা, সে তখন স্কুলের উঁচু ক্লাসে পড়ে। সেলাই-ফোঁড়াইয়ে তার খুব আগ্রহ। ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকি। ঠিক দুপুর বেলাটা, রোজাদার আমাদের মা বিছানায় গড়িয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। এই ফাঁকে আলমারি থেকে লুকিয়ে মায়ের একটা নতুন শাড়ি বের করে বড়পা ছুট দিল পাশের বাড়িতে। সে বাড়ির সবাই সেলাই-ফোঁড়াইয়ে পটু। সেখানে বসেই মাপ-জোখ করে সেলাই মেশিনে দুই বোনের জামা বানিয়ে ফেলল গোপনে। শেষাবধি ধরা পড়ে গেল মায়ের কাছে। প্রিয় শাড়ির এই দশা দেখে মার মনের অবস্থা শোচনীয়। ইচ্ছেমতো বকাবকি করে মনের ঝাল মিটালো। আমরা তো লুকিয়ে কূল পাইনে। আব্বা অফিস থেকে আসার পর আমাদের নামে বিশাল নালিশ হলো; কিন্তু সেই নালিশ শুনে তিনি মনের আনন্দে হাসছিলেন। সে হাসি দেখে মা আরও ক্ষেপে গেলেন। আব্বার বক্তব্য ছিল শাড়ি তো আরও অনেক কেনা যাবে কিন্তু তোমার মেয়ে যে এই বয়সেই নিজের জামা তৈরি করতে পেরেছে তার জন্য তোমার আনন্দ হওয়া উচিত। বাহবা দাও! তা নয়, উল্টে বকাবকি করছ। সে কথা মনে হলে বড়পা এখনো আনন্দে কেঁদে ফেলেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫