
প্রতীকী ছবি
ঢগ ঢগ করে মদ খেলেও মৃত্যুর আগ মুহূর্তে জীবনের আর্তচিৎকার ভোলা যায় না। কাঁচা প্রাণ! আত্মাগুলো এত বছর পরেও প্রাণ ফেরত চায়, ঘুমের মধ্যে তারা আমার বিছানার চারপাশে ছোটাছুটি, কান্নাকাটি করে চলে, ঘুমহীন রাতে সেজদার মতো করে মাথায় বালিশ চাপা দিয়ে রাখি তখন নিজেকে আজরাইলের মতো নিষ্ঠুর হৃদয়হীন পাষাণ মনে হয়। জীবনের এই দানবীয় উত্থান অচেনা লাগে।
আর নাহ! অনেক হত্যা পাল্টা হত্যার ভেতর দিয়ে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় অতিবাহিত করেছি, এটাই শেষ কাজ! সংস্থার প্রয়োজন না হলে করতাম না, তাও আবার নিজের বন্ধুকে। খুন করার মতো এত আনন্দ উত্তেজনা কোথাও খুঁজে পাইনি, এটাই তো আমার পেশা। রক্তারক্তি খেলা মানুষের আদিম নেশা। নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে যতটা খুন করেছি, তার চেয়ে বেশি খুন করেছি সংস্থার জন্য। দেশের অবর্জনা, অস্থিরতা, অস্বস্তি-সাফ সাফাইয়ের কাজ করি। প্রতিটা খুনেই শহর জুড়ে হইচই, পত্রিকার প্রথম পাতায় হেডলাইন। বানোয়াট রসালো শ্বাসরুদ্ধকর কথামালা গেঁথে আজব অনুসন্ধান চলে।
গডফাদাররা সব আত্মগোপনে চলে যায়। তখন শুরু হয় আরেক খেলা, সেই খেলার নাম ‘অবিশ্বাস’। তখন কে কাকে যে খেয়ে ফেলে, তার নিয়ন্ত্রণ নিয়তির হাতে সঁপে দেয় সবাই।
এবারের অ্যাসাইনমেন্টটা কঠিন। একে তো শীর্ষ সন্ত্রাসী তার ওপর পরিচিত মুখ। তারই এলাকায় তিন মাস বাসা ভাড়া নিয়ে পড়ে আছি । আরও কিছু মানুষের দেশের নানান প্রান্ত থেকে মেসে থাকার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
খরচ বাড়ছে। উপর মহল থেকে চাপ বাড়ছে। ভোরের আলোয় কেউ নরহত্যার মতো নৃশংসতা চায় না, আমিও না। নিজের স্বকীয়তা ভেঙে প্রথম এবং শেষ।
আমার জন্য হয়তো এমনই একটা শান্ত ভোরের আলো শিশির ফোঁটার বদলে রক্তের ফোঁটা গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায়।
অসময়!
অনেক সময় সম্ভাবনা দেখা দেয়।
সকাল সকাল বন্ধুকে তার বাসার সামনে মাথায় আর বুকে পাঁচ রাউন্ড ঝেড়ে দিলাম!
বন্ধুর মুখটা যত না মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করছিল তার চেয়ে বেশি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। খুন করার আগে মানুষের চোখের দিকে তাকাতে নেই, এমনই তত্ত্ব শেখানো হয়েছিল প্রথম খুনের সময়। সংস্থার প্রধানকে জানিয়ে দিলাম একটা খুদে বার্তায়। ফিরতি বার্তায় জানিয়ে দিলেন, এক মাসের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে যাও। মেশিনগুলো বন্ধুর ফার্মেসিতে রেখে যাই। পুরোনো বিশ্বস্ত বন্ধু, আমার সকল খুনের আর্কাইভ। আরো অন্ধকারে লুকিয়ে ফেলা নিজেকে, নতুন নারী, পুরোনো মদে। আবারো গৃহবন্দি জীবন।
এরও প্রায় দুই বছর পর দেশের দুইটা জায়েন্ট গ্রুপ অব কোম্পানির একটা জমি নিয়ে ক্যাচাল পাকিয়েছে। তিন চারশত রাউন্ড গোলাগুলি হলো, দুই কোম্পানি জমির দখল ছেড়ে পালিয়েছে।
গল্পটা এখানেই শেষ হলে ভালো হতো।
নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সকালে চা খেতে বের হলাম, মোড়ে যেতেই চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো বিশেষ বাহিনীর লোক, অদ্ভুত লাগছে! আমি বাড়িতে এই কথা আমার একান্ত সহকারী ছাড়া কেউ জানে না, প্রকৃতির কোনো নিয়মই লিখিত নয়, নিয়তি হয়ে আমাদের কাছে খুব গোপনে বসবাস করে। হ্যান্ডকাফ পরানো হলো, ওদের কাছে একটা কল করার আবেদন করলাম, অফিসার ফোন বের করলো কিন্তু সে আমাকে নয় তার উপরের মহল কথা বললো ‘kill him right now’!
পেছন থেকে তিনটি গুলির শব্দ, ভোরের শিশির নয় রক্ত গড়িয়ে পড়লো, অবাক বিস্ময়ে বিশ্বস্ত মানুষের হাসি দেখতে দেখতে লুটিয়ে পড়ছে আমার জীবন আবার জন্ম নেবো বলে।