
কবিতা পড়ার পরে বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি: আল নোমান
‘সমালোচনা হচ্ছে একটি ফুলের পাশে আর একটি ফুল ফোটানো’-রবীন্দ্রনাথের এই যথাযথ উক্তির প্রতি কতটা সুবিচার করতে পারেন একজন সমালোচক তা বিবেচ্য বিষয় বটে। ফুল না ফোটাতে পেরে কেউ হুল ফোটান আর সেই হুলের শূলে চড়েন সাধারণ পাঠক। কেউ কেউ আবার ফুল ফোটাতে গিয়ে এতটাই জলসেচের ব্যবস্থা করেন যে ফুল গাছসহ মরে যায়। এই স্বল্প পরিসরে আমি সমালোচনায় যাব না। শুধু পাঠ পরবর্তী উপলব্ধিটুকু আপনাদের জানাতে চাই।
মোস্তাক আহমাদ দীন শুধু একজন কবিই নন-লোকসংস্কৃতি নিয়েও তার যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। তার গদ্যের ভাষা একেবারেই মেদহীন ও পরিমিত। পত্রপত্রিকা ও ছোটকাগজে প্রকাশিত তার বিভিন্ন গদ্য থেকেই এ বিষয়টা সুস্পষ্ট। তার সুলিখিত ‘কবিতা পড়ার পরে’ শেষ করা মাত্রই যে শব্দটা চট করে আমার মাথায় এলো তা হলো, ‘enlightenment’। সহজ বাংলা আলোকপ্রাপ্তিও বলতে পারি। যেখানে চিন্তার স্বাধীনতা থাকে, ভাবনার জোগান থাকে, বোধের জাগরণ হয়, চেতনা সমৃদ্ধ হয় সেখানেই তো আলোকপ্রাপ্তি ঘটে।
তিন পর্বে বিন্যস্ত এই প্রবন্ধ গ্রন্থটি মণীন্দ্র গুপ্তের কবিতা নিয়ে আলোচনা দিয়ে মুজিব মেহেদীতে এসে থামে। মাঝে বয়ে গেছে সঞ্জয় ভট্টাচার্য, আবুল হাসান, মৃদুল দাশগুপ্ত, দিলওয়ার, সুজিত সরকার, হাবীবুল্লাহ সিরাজী এবং আরও অনেক জনা। ভালোটুকু তুলেছেন তবে মন্দটুকু অস্বীকার করেননি। অন্তত পাঠের গভীর বিশ্লেষণকে তিনি সুস্পষ্ট তুলে ধরেছেন কোনো আবরণে না ঢেকে।
সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে নিয়ে তার যে জিজ্ঞাসা সে জিজ্ঞাসা আমাদের মতো ব্যথিত পাঠককুলেরও। তিনি কি সত্যিই ‘জীবনানন্দ মুগ্ধতা’য় ভুগেছেন নাকি জীবনানন্দের কবিতা আলোচনায় সময় ব্যয় করে নিজের প্রতি করেছেন অবিচার। প্রতিটি কবিতার বই পাঠ শেষে লেখকের ‘স্বতঃতাড়নায় লিখিত’ ‘কবিতা পড়ার পরে’ পাঠকের তৃষ্ণা ও জিজ্ঞাসা যথেষ্টই উসকে দেবে বলে আমি আস্থা রাখি। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রিয় কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদকে। এই গ্রন্থটি জলধির প্রকাশনাকেও সমৃদ্ধ করবে বলে বিশ্বাস করি।
কবিতা পড়ার পরে : মোস্তাক আহমাদ দীন
প্রচ্ছদ : আল নোমান
মূল্য : ৫০০ টাকা
প্রকাশক : জলধি