
প্রতীকী ছবি
কী করছেন? জানালাটা খুলছেন কেন? মেয়েটি আমার কথার উত্তর না দিয়ে জানালাটা সামান্য খুলে দিল। এর ফলে বাইরে থেকে বৃষ্টির ছাঁট মেয়েটিকে ছাড়িয়ে আমাকেও ভিজিয়ে দিচ্ছে। কারণ বৃষ্টির সাথে বাতাসও আছে। বর্ষার বৃষ্টিতে বাতাস থাকে না। আজ আছে। আমি যাচ্ছি অফিসে। শার্টটা ভিজে যাচ্ছে। রাগ যে করব তাও পারছি না। হুটহাট সবার সাথে রাগ করাও যায় না। তা ছাড়া মেয়েটি কোনো তর্কে যায়নি। যেন জানালাটা খুলে দেওয়া তার একার অধিকারের মধ্যে পড়ে। আমার কথা শোনার কোনো যুক্তি নেই।
শ্যাওড়াপাড়া থেকে বাসে উঠেছি। শ্রাবণ মাস। আকাশটা সকাল থেকেই মুখ গোমড়া করে আছে। যে কোনো সময় শ্রাবণ ধারায় ভিজিয়ে দিতে পারে চরাচর। হাতে ছাতা আছে। তবে এমন বৃষ্টিতে ছাতা কেবল মাথাটুকু বাঁচানো ছাড়া আর কোনো কাজে দেয় না। তাই দৌড়ে বাসে উঠেছি। বাস ছাড়তে দেরি আছে। থাকুক, আমি বসে থাকি। বৃষ্টির মধ্যে আর বাস পাওয়া যাবে না। তখন অন্য বিপদ। বসেছি একটি মেয়ের পাশে। অন্য কোথাও বসার জায়গা ছিল না। বাসে ওঠার পরপরই বৃষ্টি শুরু হলো। মুষলধারে বৃষ্টি। বাসও ছাড়ছে না।
এবার আমি কিছুটা অধৈর্য। নিজেই হাত দিয়ে জানালাটা বন্ধ করতে গেলাম।
একটু খোলা থাকুক না জানালাটা। মেয়েটির কাতর অনুরোধ। আমি আর আটকানোর সাহস পাই না। মেয়েটির গলার স্বর একটু ভারী। সন্দেহ হলো। আমি মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম। এতক্ষণ খেয়াল করিনি। মেয়েটি কাঁদছে। বৃষ্টির জলে সেই কান্না আড়াল করার চেষ্টা করছে। বাইরে শ্রাবণের বৃষ্টি হচ্ছে। পাশের সিটে অশ্রু বৃষ্টি। আমার ভেতরে গেয়ে ওঠে, ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না/আমার এত সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো না সে যেন এসে দেখে/পথ চেয়ে তার কেমন করে কেঁদেছি।