লান্দাই। ছবি: সংগৃহীত
লান্দাই মূলত পশতু নারীদের রচিত দু-লাইনের কবিতা। লান্দাই শব্দের অর্থ ‘ছোট বিষধর সাপ’। পশতু নারী নিজেকে সৃষ্টিকারী হিসেবে, অগণিত গানের রচয়িতা আর বিষয়বস্তু হিসেবে আরোপ করতে যে কাঠামো ব্যবহার করে সেটাই হলো লান্দাই, যার সহজ অর্থ ‘ছোট্ট প্রকাশ’।
প্রকৃতপক্ষে লান্দাই একটি সংক্ষিপ্ত কবিতা যা যথাক্রমে নয়টি ও তেরোটি মাত্রার দুটি শ্লোক বা পদ্যের লাইন। অন্ত্যমিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও থাকবে অটুট অভ্যন্তরীণ ছন্দবিশ্লেষণ। হৃদয় থেকে বের হয়ে আসা কান্নার মতো, আলোর ঝলকানির মতো, অগ্নিশিখার মতো লান্দাই তার সংক্ষিপ্ততা ও ছন্দ দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করে। এই বেনামি কবিতাগুলো টিকে থাকে তার কালজয়ী অনুকরণের জন্য। প্রতিদিন বিকেলবেলা যখন গ্রামের মেয়েরা ঝরনা থেকে জল আনতে যায় অথবা যখন তারা কোনো উৎসবে বা বিয়েতে নাচে ও গায়, তখনই নতুন নতুন লান্দাই প্রত্যুৎপন্নভাবে গাওয়া হয়, আর সেরাগুলো তখনই সম্মিলিত স্মৃতিতে নোঙর করে নেয়। প্রেম, দুঃখ, বিচ্ছেদ, স্বদেশ ও যুদ্ধ সম্পর্কে সাধারণ সত্য-এই পাঁচটি প্রধান লক্ষণের মধ্য দিয়ে লাইন দুটি প্রকাশ করে একটি সম্মিলিত ক্রোধ, একটি বিলাপ, একটি পার্থিব প্রহসন, স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা, বিচ্ছেদ অবসানের আকাঙ্ক্ষা, সশস্ত্র হওয়ার প্রতি আহ্বান, যা সমস্তই একজন পশতু নারীর যে কোনো সহজ চিত্রকে হতাশ করে। কখনো আপাত অশালীন মনে হলেও তা আসলে নিপীড়িত নারীদের ঘৃণা ও ক্রোধের অসহায় প্রকাশ।
ভূমিকা ও ভাষান্তর : কায়েস সৈয়দ
*
এসো-গলার গহনার মতো আমার সাথে থাকো
আমি আমার বুকের গম্বুজে তোমাকে দোলাবো
*
তোমার ঠোঁট আমার মুখে রাখো
মাটি বরাবর পেঁচানো এক আঙুর-লতার মতো
*
প্রিয় আমার-তাকে বশ করতে দ্রুত আসো
হৃদয়ের পাগল ঘোড়া ছুটছে বেপরোয়া
*
তোমাকে দেখার উপায় গড়েছি চক্রাকারে হাঁটা
ফেরিওয়ালার মতো দ্বারে দ্বারে আমার হয় কাঁদা
*
বিচ্ছেদের সময় ঘনিয়ে আসবে যদি জানতাম
যুদ্ধক্ষেত্রের সবটা পথ প্রেমিকের হাতটা ধরে থাকতাম
*
কাবুলে গিয়ে যুদ্ধ করো প্রিয়
আমার শরীর আর ঠোঁট দুটোই রাখবো তোমার জন্য অক্ষত
*
যেন তোমাকে স্পর্শ করে আলিঙ্গন করতে পারি-এসো কাছে
আমি সন্ধ্যার মৃদুমন্দ বাতাস-ভোরের আগেই যাবো হারিয়ে
*
এ পাথর আমাকে তার ভর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করুক
তবু আমার বিপরীতে কোনো বৃদ্ধ স্বামীর কুস্তি না ঘটুক
*
প্রেমিকের তরে উৎসর্গ করতে চাই সব : আমার মুখের গোলাপ
কোমরের বালিঘড়ি আর বদরশনের লালমণির মতো আমার ঠোঁটখানি