
প্রতীকী ছবি
সাহিত্যিক বা কাব্যিক ভাষায় সংস্কৃতি এক নদীর নাম। এই নদী প্রবাহিত হয় মানুষের মনে। একটি নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠীকে ধারণ করে। যদি কোনোভাবে সেই নদী শুকিয়ে যায় অর্থাৎ সংস্কৃতি বিপথগামী হয় তাহলে সেই জাতির পতন অনিবার্য। শিল্প-সংস্কৃতি মূলত একটি জাতির হৃদয়ানুভূতি। এই যেমন আমরা বাঙালি এবং আমাদের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। যদিও সেই সংস্কৃতি এখন মিশ্রণ-দূষণে অভিশপ্ত।
সংস্কৃতি কেন নষ্ট হয় অথবা সোজা বাংলায় মরে যায়? এর উত্তর হলো চর্চার অভাবে। সংস্কৃতি চর্চা না থাকলে মানুষের মূল্যবোধের পারদও কমতে থাকে। মানুষ হয়ে ওঠে পশু। সংস্কৃতি মানুষকে মানুষ হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম। সংস্কৃতি চর্চা যখন স্থবির হয় তখন মানুষের আত্মিক মৃত্যুর প্রথম সোপানে পৌঁছে যায়। হতে পারে অনেকেই এসব সংস্কৃতির ধার ধারেন না। তবে তিনিও কিন্তু নিজের অজান্তেই সংস্কৃতির ভিতরেই বসবাস করেন। মানুষ সংস্কৃতির বাইরে যেতে পারেন না। তবে চর্চার অভাবে এবং তা ধারণ করার অভাবে তা বিপথগামী হয়। সে হিসেবে মনে হয়, সংস্কৃতি রক্ষায় একটি ইতিবাচক আন্দোলন খুব জরুরি। অর্থাৎ এর চর্চার ক্ষেত্র বিকশিত করতে হবে। তাহলেই এর সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষের অন্তরে স্থায়ী হবে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনটা কোথা থেকে শুরু হবে সেটা ঠিক করতে হবে। নিজস্বতা রক্ষা করতে এই আন্দোলন জরুরি। যদিও কাজটি বেশ কঠিন। হাতে হাতে ফেসবুক, টুইটারের যুগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ব্যাপার। তবে চাইলেই সম্ভব।
আজ যদি বাংলা সংস্কৃতি বিদেশি সংস্কৃতির কাছে বিকিয়ে দেই তাহলে দেশটা স্বাধীন করে লাভটা কী হলো? নিজেদের অস্তিত্বই তো রক্ষা করতে পারছি না। একটি সুস্থ সাংস্কৃতিক আন্দোলন যদি নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেওয়া যায় তাহলে আবার বাঙালির নিজস্বতা ফিরে আসবে। সমাজে আদব-কায়দা ফিরবে। শৃঙ্খলা ফিরবে। শিল্প সংস্কৃতির সুস্থ চর্চা ছাড়া সমাজে অগ্রগতি অসম্ভব। নিজস্বতা ফেরানো অসম্ভব। অতএব সংস্কৃতি চর্চার এই আন্দোলনটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে দেশের প্রতিটি কোনায়।