Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

আর. করিমের বিশ্বজোড়া ক্যানভাস

Icon

আদর চৌধুরী

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১৮:৫৭

আর. করিমের বিশ্বজোড়া ক্যানভাস
পুরো নাম রেজাউল করিম। কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী এস. এম. সুলতান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেকে আর. করিম নামে পরিচয় দেন। এ নামেই শিল্পাঙ্গনে পরিচিত তিনি। আর. করিমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাগর তীরে, কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপে। চিত্রশিল্প নিয়ে তার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই, সেই সুযোগও তিনি পাননি। এই নিয়ে আক্ষেপও নেই তার। বরং তার আশেপাশের সবকিছুই যেন তার কাছে এক উদার ক্যানভাস। এভাবেই বাবা মোস্তাক আহম্মেদ, মা খালেদা বেগমের দারিদ্র্যমাখা সংসারে বেড়ে উঠেছেন তার ছয় ভাইবোনের সঙ্গে। 

পরিবারে আর. করিমই একমাত্র চিত্রশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকেন তিনি। মহেশখালী কেজি অ্যান্ড প্রি ক্যাডেট স্কুলে নার্সারিতে যখন তাকে ভর্তি করানো হয়, পাঠ্য তালিকার আর্টের বইটি তার প্রিয় হয়ে যায়। সেই থেকেই শুরু। পরে অর্থনৈতিক সংকটের দরুন স্কুল পরিবর্তন করে মহেশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয় তাকে। এখানেই আঁকাআঁকির বিশাল দুয়ার খুলে যায় আর. করিমের। পাঠ্যবইয়ের মধ্যে থাকা ছবিগুলো দেখে দেখে আঁকতে শুরু করেন। 


আর. করিম জানালেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার পাঠ্য বাংলা বইতে ছড়া এবং গল্পের সঙ্গে যে ছবিগুলো ছিল, তা আমাকে খুব আকর্ষণ করতে থাকল। ধীরে ধীরে আঁকার চেষ্টা করতে থাকলাম। একসময় শিখে গেলাম। সেখান থেকেই চিত্রশিল্পের সঙ্গে সাহিত্যের মেলবন্ধন হয় আমার, যা এপর্যায়ে এসে বুঝতে পারছি। ছবি আঁকতে গেলে সাহিত্যকে বুঝতে হবে, এটা বাদ দিয়ে ছবি আঁকা হয় না।’ 


আর. করিমের ছবি আঁকার ধরনটি বেশ চমকপ্রদ। আর্ট পেপারে ও রঙ-তুলিতে তিনি আবদ্ধ থাকেন না একেবারেই। হাতের কাছে যে বস্তু পান, ইচ্ছে হলেই তা দিয়ে আঁকতে শুরু করেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেখা মেলে ভিন্নধর্মী এমন সব চিত্রশিল্পের। যেমন-চা খেতে বসে হঠাৎ করে কাপ থেকে টেবিলে চা ঢেলে এঁকে ফেললেন রবীন্দ্রনাথ! আবার একদিন কফি খেতে গিয়ে হাতের কাছে থাকা কাগজটিতে একটু একটু করে কফি ঢেলে তুলে আনলেন মান্না দে! কদম গাছের পাতা খুব সূক্ষ্মভাবে কেটে দোয়েলের অবয়ব ফুটিয়ে তোলেন।


পানের দোকানে বসে পান দিয়ে বানালেন ঝুঁটিওয়ালা মোরগ। ধানক্ষেতে বসে ক্যানভাসে আঁকলেন ধানক্ষেতের ছবি। ইট, কয়লা, পানি, চা, কফি, পাতা, ফেলে দেওয়া সবজি কিংবা ফল সব কিছুই হয়ে যায় আর. করিমের রঙ-তুলি। পানি, পাতা, চা ইত্যাদি দিয়ে আঁকা ছবিগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় বলে সেগুলোর ছবি তুলে রাখেন এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপলোড করে রাখেন। 


প্রথম দিকে ছবি আঁকতে গিয়ে পরিবার থেকে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন আর. করিম, ধর্মীয় বিধিনিষেধ এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কাই ছিল এর মূলে। পরে তার আগ্রহ, একাগ্রতা দেখে আর বাধা দেয়নি পরিবার। তিনি বলেন, ‘পেশাদারভাবে ছবি আঁকা ছাড়া আর কিছুই আমাকে দিয়ে হবে না।’ 


পেশাদার চিত্রশিল্পী হিসেবেই জীবন কাটাতে চান তিনি। আর. করিম জানালেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ছবি আঁকতে ডাক আসে, এভাবেই চলে। মাস শেষে যে টাকা আসে, সেটা দিয়েই আমার চলে যায়। আমি বন্দি হতে চাই না।’


ছবি আঁকা ছাড়াও আর. করিম বই পড়তে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন ঘুরে বেড়াতে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫