Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

কিশোর থ্রিলারের জনপ্রিয়তা

Icon

অদ্বৈত মারুত

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:০৮

কিশোর থ্রিলারের জনপ্রিয়তা

প্রতীকী ছবি

কিশোরের মন। কিশোরীর মন। সারাক্ষণ থাকে উত্তেজিত, উদ্বেলিত; রহস্যাবৃত এ বয়সী মন হয় বাঁধাহীন, যেন জটিল এক ধাঁধা। কিশোর বয়স যেন এক গঙ্গাফড়িং, কারণে-অকারণে দুলে ওঠে, রক্তজবার মতো লাল হয়ে ফোটে, ধেই-ধেই করে নাচতে থাকে, হৃদয়ে নানা কিছুর দুরন্ত ছবি আঁকে, রহস্যের ভেতরে নিজেকে ঢুকিয়ে দেয়, করে নতুন পথের সন্ধান। এই বয়সী মন হঠাৎ-হঠাৎ উত্তেজিত হয়, বিস্ময়ে অভিভূত হয়। পাখা মেলে এই মন উড়তে ভালোবাসে, কারণে-অকারণে হাসে, অনায়াসে পুরো বিশ্বকে মুঠোয় পুরে নিতে চায়। ডুবে যায় রহস্য উদ্ঘাটনে। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় সে কাতর থাকে। হতে চায় শঙ্খচিল। অনাবিল আনন্দে পৃথিবীর সকল সুন্দরের মাঝে নিজেকে সাজিয়ে নিতে চায় একান্ত আপন করে। এই বয়সী মন যেন এক থ্রিলার বা কল্পকাহিনি; হৃদয়ে এমন এক অনুভূতির সৃষ্টি করে, বিশেষ ধরনের আবেগের জন্ম দেয়, যা তাকে আন্দোলিত করে, কারণের ভেতরের কারণ উদ্ঘাটনে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। 

কল্পকাহিনির ভেতরে থাকে এমন রহস্য, রোমাঞ্চকর, ভৌতিক বিষয়, যা কিশোর-পাঠকের হৃদয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, বিস্ময় জাগায়, প্রত্যাশা ও উদ্বেগ তৈরি করে। সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে থ্রিলার বা কল্পকাহিনির বিষয়বস্তু, গঠনপ্রণালি, চরিত্র চিত্রণ থেকে নির্মাণশৈলী একেবারেই আলাদা, তাই কিশোর তো বটেই, বড়রাও এ থেকে প্রভূত রস গ্রহণ করতে পারেন। থ্রিলারে গল্প-উপন্যাসের মতোই প্রেম বা বিরহের গল্প থাকে। আরও থাকে জীবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন গল্পগুলো। একই সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে থাকে মানবিক ত্রুটি, খুন, ষড়যন্ত্র আর রহস্য। কল্পগল্পের মূল বিষয় অবশ্য এটাই। গল্পটা এমনভাবে উপস্থাপন করতে হয়, যেন পাঠকের হৃদয় নাড়া দেয়, আন্দোলিত করে, রোমাঞ্চিত হন, রহস্যের গন্ধ পান, বাধ্য হন শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়তে। 

কিশোরপাঠ্য এবং শ্রেষ্ঠ কয়েকটি থিলার বা রহস্যগ্রন্থ হলো-স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের ‘দ্য হাউন্ড অব দ্য বাস্কারভিলস’;  আগাথা ক্রিস্টির ‘মার্ডার ইন দ্য ওরিয়েন্টেল এক্সপ্রেস’; এরিখ কেস্টনারের ‘এমিলের গোয়েন্দা দল’; বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মিসমিদের কবচ’; শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্যোমকেশসমগ্র’; সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা সমগ্র’; সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শাকাবাবু সমগ্র’; বিমল করের ‘কিকিরা সমগ্র’; রকিব হাসানের ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজ’; শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘গোয়েন্দা বরদাচরণ সমগ্র ও অন্যান্য’। এর মধ্যে রকিব হাসান তার ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজ’-এর মলাটের শেষপৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘হাল্লো কিশোর বন্ধুরা,

আমি কিশোর পাশা বলছি। আমেরিকার রকি বিচ থেকে। জায়গাটা লস অ্যাঞ্জেলেসে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে। হলিউড থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে। যারা এখনও আমাদের পরিচয় জানো না তাদের বলছি, আমরা তিন বন্ধু একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছি। নাম তিন গোয়েন্দা। আমি বাঙালি, থাকি চাচা-চাচির কাছে। দুই বন্ধুর একজনের নাম মুসা আমান। ব্যায়ামবীর, আমেরিকান নিগ্রো। আরেকজন রবিন মিলফোর্ড। আইরিশ আমেরিকান, বইয়ের পোকা। একই ক্লাসে পড়ি আমরা। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের লোহা-লক্কড়ের জঞ্জালের নিচে পুরনো এক মোবাইল হোমে আমাদের হেডকোয়ার্টার।’

এর পর ঘটনার পর ঘটনা। রহস্যের পর রহস্য। একটির জট খুলতে না খুলতেই আরেকটি জট; রহস্যের জালে আবর্তন। রোমাঞ্চের পর রোমাঞ্চ, যা শুধুই টানে, প্রাণে দোলা দেয় কিশোর মনে। থ্রিলার এ কারণেই হয়তো কিশোর বয়সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫