Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

তিলে তিলে তার ক্ষয়

Icon

নাদিম মাহমুদ

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:০৩

তিলে তিলে তার ক্ষয়

প্রতীকী ছবি

সকল অজ্ঞতাই একদিন অভিজ্ঞতায় প্রকাশ হয়, হয় ভালো নয় মন্দ কিছু ডেকে আনে। আমাদের পূর্বপুরুষগণ যে শহরে বসত করতো তার প্রতি দায়িত্ব, সহনশীল আচরণ গড়ে তোলার যে বিষয়গুলো সেটা হয়তো আত্মঘাতী, নিষ্ঠুর, মহাকাব্যে ইতিহাস লেখা থাকবে।

‘নগরের ঠিক মাঝখানে একটা রক্তবর্ণ জলাধার, চৌকো না হলে যাকে একটা প্রস্ফুটিত গোলাপ বলেই ভুল করতাম। তফাত শুধু এই যে এই পেত্রা আরও মসৃণ ও বিস্তৃত। এরপরেও পেত্রা বহুবার ধ্বংস হয়েছে এবং বহুবার পুনর্নির্মিত হয়েছে। তারপর এটাকে আস্তে আস্তে বিধ্বস্ত করতে থাকে সেই অদৃশ্য ছোরা, যাকে আমরা সময় বলি। এবং এবার ইচ্ছে করেই পেত্রা আর পুনর্নির্মিত হয়নি কারণ-কালেক্রমে মানুষ বুঝেছে অটুট নতুনের চেয়ে অনেক সময় ধ্বংসাবশেষই বেশি সৃজনশীল, বেশি সুন্দর, বেশি রহস্যময়, বেশি অর্থবহ ও কাব্যময়। পেত্রা নিজেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সৃষ্টি করে চলেছে তার ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে।’ ভ্রমণসঙ্গী ঈশ্বর-দেবর্ষি সারগী; বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে আজ থেকে প্রায় চারশত বছর আগে রাজধানীর মর্যাদা নিয়ে আজকের ঢাকা শহরের পত্তন হয়। নবাব থেকে ইংরেজ, পাকিস্তান, চড়াই-উতরাই করে পাড়ি দিতে হয়েছে প্রতিটি সময়। 

গেন্ডারিয়া থেকে সদরঘাট, লালবাগ, হাজারীবাগ, নবাবপুর সীমানায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পুরাকীর্তি মূল্যবান স্থাপনা। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান- নানান জাতি, নানান সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত এই শহর, তার সাথে রয়েছে নানান রূপকথা-গল্প। সময়ের পরিক্রমায় ঢাকা ও তার চারপাশে তিলে তিলে তিলোত্তমা এক শহরে রূপান্তর হয়েছে, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হতাশা-উচ্চাশা এক জাদুর শহর।

ইতিহাস ঘেঁটে ইতিহাসের পথে হেঁটে পৃথিবীর বহু শহর ধ্বংস হয়েছে হতে পারে সেটা হাজার বছর আগে, প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখতে পাই পরিকল্পিত শহর ব্যবহৃত তৈজসপত্র, গহনা, মুদ্রা, শিল্পকর্ম, হারিয়ে যাওয়া শহরগুলোর ইতিহাস আমাদের জীবনে ফিরে আসে। সমাজ, সংস্কৃতি, নগরায়ণ, নাগরিক মূল্যবোধ, জনসংখ্যার ঘনত্ব সবকিছুই সুস্থ শহরের মান বহন করে। অব্যবস্থাপনাই যখন উন্নয়ন ধ্বংসের বীজ গেঁথে শুরু হয় নাগরিক জীবন, এমনি এক ব্লু-প্রিন্ট মানসিকতা নিয়ে গড়ে তুলছি আমাদের আধুনিক শহর। 

যদি আশির দশ থেকে ঢাকা শহরের পরিবর্তনের চিত্রগুলো লক্ষ করি কেমন ছিল আমাদের এই শহর, শহুরে বাড়িগুলো ছিল গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি, বাড়ির সামনে ফুল বাগান, ফলের গাছ, ছোট জলাশয়, নানান প্রজাতির গাছপালা। বিশ্বায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিষ্ঠুর শিকার এই শহর, ঢাকার খালবিল, নদীনালা, বনজঙ্গল, জলাশয়, জলাধার, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে ইটপাথরের এক আজব শহর ও নিয়ন্ত্রণহীন শিল্পায়ন তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। কে করছে কারা করছে কেন করছে মানুষ ছাড়া সকলেই জানে। আমরা সবাই ভালোমানুষ, সচেতনও বটে কিন্তু এই শহরের দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে যায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে হয় না আমরা ধ্বংসলীলায় মত্ত। এক সময় শহরের আশেপাশে প্রচুর জলাশয় ছিল এখন সবই দালান কোঠায় সুসজ্জিত গ্রিন এরিয়া বলতে কিছু নেই। হাতিরঝিল, পূর্বাচল, উত্তরা, ডেমরা, ঢাকা মাওয়া হাইওয়ে, বছিলা, কেরানীগঞ্জ, এই অঞ্চলে শহর হচ্ছে লক্ষ কোটি মানুষের বসবাস হবে বৃষ্টির জল, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা কেমন হবে কেউ বলতে পারেন? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু মানুষই নয় অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল কোথায় হবে কেউ কি বলবেন? এই ধ্বংসাবশেষের শেষ কোথায়? ভয়াবহ এক শহরের রূপ লাভ করছে ঢাকা। হয়তো ৬.৫০ অথবা ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই শহরে ৭০% পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে। পৃথিবীর বহু শহর যুদ্ধে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হয়েছে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে কিন্তু আমাদের কি সেই সক্ষমতা আছে দুর্যোগ মোকাবেলার? তবে যা-ই হোক প্রকৃতির সাথে বিপরীত আচরণ করে খুব বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। পৃথিবীর বুকে ছোট্ট একটা দেশ তার বিশাল জনসংখ্যা আর সীমাহীন সমস্যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জিওপলিটিক্যাল কনফ্লিক্ট সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রণহীন, অদক্ষ, অব্যবস্থাপনাই চরম নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমার বাংলাদেশ। রাজনীতি থেকে ধর্মনীতি, সামাজিক পারিবারিক থেকে পররাষ্ট্রনীতি, নগরায়ণ থেকে শিল্পায়ন, প্রাকৃতিক পরিবেশ সবকিছুরই একটা রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থাকা উচিত যার উপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিচালিত হবে দেশ। সকল অজ্ঞতাই একদিন অভিজ্ঞতায় প্রকাশ হয়, হয় ভালো নয় মন্দ কিছু ডেকে আনে।

আমাদের পূর্বপুরুষগণ যে শহরে বসত করতো তার প্রতি দায়িত্ব, সহনশীল আচরণ গড়ে তোলার যে বিষয়গুলো সেটা হয়তো আত্মঘাতী, নিষ্ঠুর, মহাকাব্যে ইতিহাস লেখা থাকবে।

‘নগরের ঠিক মাঝখানে একটা রক্তবর্ণ জলাধার, চৌকো না হলে যাকে একটা প্রস্ফুটিত গোলাপ বলেই ভুল করতাম। তফাত শুধু এই যে এই পেত্রা আরও মসৃণ ও বিস্তৃত। এরপরেও পেত্রা বহুবার ধ্বংস হয়েছে এবং বহুবার পুনর্নির্মিত হয়েছে। তারপর এটাকে আস্তে আস্তে বিধ্বস্ত করতে থাকে সেই অদৃশ্য ছোরা, যাকে আমরা সময় বলি। এবং এবার ইচ্ছে করেই পেত্রা আর পুনর্নির্মিত হয়নি কারণ- কালেক্রমে মানুষ বুঝেছে অটুট নতুনের চেয়ে অনেক সময় ধ্বংসাবশেষই বেশি সৃজনশীল, বেশি সুন্দর, বেশি রহস্যময়, বেশি অর্থবহ ও কাব্যময়। পেত্রা নিজেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সৃষ্টি করে চলেছে তার ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে।’ ভ্রমণসঙ্গী ঈশ্বর- দেবর্ষি সারগী; বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে আজ থেকে প্রায় চারশত বছর আগে রাজধানীর মর্যাদা নিয়ে আজকের ঢাকা শহরের পত্তন হয়। নবাব থেকে ইংরেজ, পাকিস্তান, চড়াই-উতরাই করে পাড়ি দিতে হয়েছে প্রতিটি সময়। 

গেন্ডারিয়া থেকে সদরঘাট, লালবাগ, হাজারীবাগ, নবাবপুর সীমানায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পুরাকীর্তি মূল্যবান স্থাপনা। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান- নানান জাতি, নানান সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত এই শহর, তার সাথে রয়েছে নানান রূপকথা-গল্প। সময়ের পরিক্রমায় ঢাকা ও তার চারপাশে তিলে তিলে তিলোত্তমা এক শহরে রূপান্তর হয়েছে, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হতাশা-উচ্চাশা এক জাদুর শহর।

ইতিহাস ঘেঁটে ইতিহাসের পথে হেঁটে পৃথিবীর বহু শহর ধ্বংস হয়েছে হতে পারে সেটা হাজার বছর আগে, প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখতে পাই পরিকল্পিত শহর ব্যবহৃত তৈজসপত্র, গহনা, মুদ্রা, শিল্পকর্ম, হারিয়ে যাওয়া শহরগুলোর ইতিহাস আমাদের জীবনে ফিরে আসে। সমাজ, সংস্কৃতি, নগরায়ণ, নাগরিক মূল্যবোধ, জনসংখ্যার ঘনত্ব সবকিছুই সুস্থ শহরের মান বহন করে। অব্যবস্থাপনাই যখন উন্নয়ন ধ্বংসের বীজ গেঁথে শুরু হয় নাগরিক জীবন, এমনি এক ব্লু-প্রিন্ট মানসিকতা নিয়ে গড়ে তুলছি আমাদের আধুনিক শহর। 

যদি আশির দশ থেকে ঢাকা শহরের পরিবর্তনের চিত্রগুলো লক্ষ করি কেমন ছিল আমাদের এই শহর, শহুরে বাড়িগুলো ছিল গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি, বাড়ির সামনে ফুল বাগান, ফলের গাছ, ছোট জলাশয়, নানান প্রজাতির গাছপালা। বিশ্বায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিষ্ঠুর শিকার এই শহর, ঢাকার খালবিল, নদীনালা, বনজঙ্গল, জলাশয়, জলাধার, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে ইটপাথরের এক আজব শহর ও নিয়ন্ত্রণহীন শিল্পায়ন তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। কে করছে কারা করছে কেন করছে মানুষ ছাড়া সকলেই জানে। আমরা সবাই ভালোমানুষ, সচেতনও বটে কিন্তু এই শহরের দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে যায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে হয় না আমরা ধ্বংসলীলায় মত্ত। এক সময় শহরের আশেপাশে প্রচুর জলাশয় ছিল এখন সবই দালান কোঠায় সুসজ্জিত গ্রিন এরিয়া বলতে কিছু নেই। হাতিরঝিল, পূর্বাচল, উত্তরা, ডেমরা, ঢাকা মাওয়া হাইওয়ে, বছিলা, কেরানীগঞ্জ, এই অঞ্চলে শহর হচ্ছে লক্ষ কোটি মানুষের বসবাস হবে বৃষ্টির জল, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা কেমন হবে কেউ বলতে পারেন? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু মানুষই নয় অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল কোথায় হবে কেউ কি বলবেন? এই ধ্বংসাবশেষের শেষ কোথায়? ভয়াবহ এক শহরের রূপ লাভ করছে ঢাকা। হয়তো ৬.৫০ অথবা ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই শহরে ৭০% পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হবে। পৃথিবীর বহু শহর যুদ্ধে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হয়েছে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে কিন্তু আমাদের কি সেই সক্ষমতা আছে দুর্যোগ মোকাবেলার? তবে যা-ই হোক প্রকৃতির সাথে বিপরীত আচরণ করে খুব বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। পৃথিবীর বুকে ছোট্ট একটা দেশ তার বিশাল জনসংখ্যা আর সীমাহীন সমস্যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জিওপলিটিক্যাল কনফ্লিক্ট সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রণহীন, অদক্ষ, অব্যবস্থাপনাই চরম নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমার বাংলাদেশ। রাজনীতি থেকে ধর্মনীতি, সামাজিক পারিবারিক থেকে পররাষ্ট্রনীতি, নগরায়ণ থেকে শিল্পায়ন, প্রাকৃতিক পরিবেশ সবকিছুরই একটা রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থাকা উচিত যার উপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিচালিত হবে দেশ। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫