Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

জাদুকর ও জুলিয়া

Icon

আরিফুল হাসান

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:১৬

জাদুকর ও জুলিয়া

প্রতীকী ছবি

আগন্তুক এক অচেনা। তার বাড়ি পাশের গ্রামে বললেও আমরা জানতে পারি সে ছিল আরও ভিনগাঁয়ের। বস্তুত তার গ্রামের নামটি জানা যায় না।

আমাদের গ্রামে সাপুড়ে আসবে তাতে অস্বাভাবিকের কিছু নেই। সে বীণ বাজাবে, সাপখেলা দেখাবে তা অবাক করার কী? তা বলে বানরের খেলা! হ্যাঁ, সেটিও দুয়েকটা যে আসে না মাসে মাসে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তবে, এবারের সাপুড়ে অথবা বাজিকর শুধু সাপ ও বানরের খেলা দেখিয়েই আমাদের মুগ্ধ করেনি, সাথে সাথে দেখিয়েছে তার জাদু। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থেকেছি। সে পানোখ সাপের বাক্স থেকে বের করলো পানোখ সাপ, দাঁড়াশের বাক্স থেকে দাঁড়াশ; আর অবলীলায় বের করে আনলো বানরের বাক্স থেকে বানর। তারপর বেজিটাকে বের করলো লোহার খাঁচা থেকে। দাঁতে কামড়ে বেজিটা গলার শেকল খুলে ফেলতে চায়। জাদুকর তার রুমাল নাড়ে। দাঁড়াশটা ফণা তুলে দাঁড়ায়। বেজিটা ছুটে গিয়ে দাঁড়াশটাকে কামড়ে ধরে। বানর মধ্যস্থতা করে দুই প্রাণীর যুদ্ধ থামায়। এ কেমন আজব সাপখেলা, এ বাজিকরিও তো দেখিনি কোনো দিন। তারপর আবার ডুগডুগি বাজায়- কোমর থেকে পেরে নিয়ে। আমরা তন্ময় হয়ে শুনি। বানরটি নাচতে শুরু করেছে। ডুগডুগির তালে তালে নড়ছে বাজিকরের হাত, আমরা সাপুড়ের হাতের কব্জিতে কড়ি বাঁধা দেখি। 

দেখি সাপুড়ে তার তার ডুগডুগি বাজানো থামিয়ে দিয়েছে। সাপদুটো আলগোছে বাক্সের ভেতর ঢুকে গেল। তারপর সে তার বীণটিকে ঝোলার মধ্যে ভরে দিল, এবার বেজিটি গিয়ে নিজে নিজে খাঁচার মধ্যে ঢুকে গেল এবং দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে ছিটকিনিটা লাগিয়ে দিল নিজেই। এবার বাজিকর তার আসল খেলাটি দেখানোর জন্য প্রস্তুত। সে তার ঝোলার ভেতর থেকে একটি বাঁশের বাঁশি বের করে। চিকন একটা সুরে বাজাতে থাকে। আমরা দেখতে পাই, আমাদের পায়ের পাতা ঝিম ধরে গেছে। রক্তসঞ্চালন দ্রুত হচ্ছে গোড়ালিতে, টন টন করছে। আমরা তবু দাঁড়িয়ে থাকি।

জাদুকরের বাঁশির সুরটি চিকন থেকে আরেকটু ভিন্ন একটি সুরে উঠল। আমরা ফিরে পেলাম পায়ের রক্তসঞ্চালন। জাদুকর এবার আমাদের মধ্য থেকে একজনকে এগিয়ে যেতে বলল। কেউ গেল না। শুধু ও পাড়ার রোস্তম শেখের মেয়ে জুলিয়া, সে গেল। আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। দেখলাম জাদুকর রোস্তম শেখের মেয়েটাকে একটা সুন্দর প্রজাপতি বানিয়ে দিল। আমরা দেখলাম, আমাদের চোখের সামনে দিয়ে উড়ে উড়ে নেচে নেচে ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে জুলিয়া। সে গিয়ে জাদুকরের হাতের উপর বসল। জাদুকর এবার তাকে সুন্দর একটি গোলাপফুল বানিয়ে দিল। তার পাপড়িগুলো শিশিরে ভেজা এবং ঘ্রাণ ছিল মধুর। আমরা সবাই সুবাসে মাতোয়ারা হয়ে আরও বেশি তন্ময়, আরও বেশি জাদুর ভেতর ঢুকে পড়লাম। জাদুকর তার বাঁশের বাঁশিটি রেখে দিল। এবার ঝোলার ভেতর থেকে বের করল সাপের বাচ্চার মতো একটি বাঁশি। নিজে সুর না তুলে তা তার সামনের বানরটির হাতে দিল। বানরটি দুই হাতে বাঁশিটিকে মুখে চেপে ভো ভো স্বরে কোনো আওয়াজ তুলল। সে আওয়াজে আমাদের কান ফেটে গেল। চোখের তারা বিস্ফারিত হলো যখন দেখলাম চকিতেই বাজিকর তার মানুষরূপ পরিহার করে একটি শিকারি পাখির রূপ নিল এবং তার সামনে ঝুলে থাকা জুলিয়া, ওরফে জাদুর প্রভাবে গোলাপফুলটিকে চঞ্চুতে চেপে শূন্যে উড়াল দিল। বিহ্বলতার ভিড়ে আমরা দেখলাম জাদুকরটি হারিয়ে গেছে নীলে, শাদা শাদা মেঘের ভেতর।

পরদিন আমরা পাশের গ্রামসহ আরও কিছু গ্রামে খুঁজলাম। জাদুকর নেই। শুধু ফেরার পথে বাইক্কার বিলে ভেসে থাকতে দেখলাম জুলিয়ার লাশ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫