
‘THANK YOU BENNY ANDERSON FOR THE MUSIC’ বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত
আগনেথা ফাল্টসকোগ, বিয়র্ন এলভিয়েস, বেনি অ্যান্ডারসন ও অ্যানি-ফিদ লিংগস্টাড- এই চার মূর্তির আদ্যক্ষর এবার সাজান তো। কী হয়?- ABBA (অ্যাবা)। এবার একটু টাইম ট্রাভেলে ঘুরে আসুন ’৯০-এর দশকে। বিটিভিতে অ্যাবার ‘চিকিতিতা’ নিশ্চয় শুনেছেন। অথবা এই গানের সুর থেকে অনুপ্রাণিত দুই বোন সামিনা চৌধুরী ও ফাহমিদা নবীর ‘চিকিচিতা’? ক্ল্যাসিক হয়ে ওঠা গানটির সুর আজও রঙিন হয়ে আছে সংগীত জগতে। আজও বেনির বাজানো প্রতিটি পিয়ানোর নোট, বিয়র্নের অ্যাকুস্টিক গিটারের কর্ড আর আগনেথা ও অ্যানি-ফিদের বিষাদ-হর্ষ মাখা কণ্ঠের জাদু এক স্বপ্নবাস্তবতার জগতে নিয়ে যায়।
এই চারের একজন বেনি অ্যান্ডারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল বাংলাদেশের ধ্রুপদী সংগীতের অন্যতম শিল্পী সানী জুবায়েরের। ‘THANK YOU BENNY ANDERSON FOR THE MUSIC’ নাম দিয়ে সাক্ষাৎকার আকারে সেটি প্রকাশও করেছেন। খুব বড় সাক্ষাৎকার নয়, তবে পরতে পরতে খুঁজে পাওয়া যায় বেনির জীবন আর অ্যাবাকে। বেনির বেড়ে ওঠা, সংগীতের প্রতি ভালোবাসা এবং অ্যাবার সঙ্গে ভ্রমণ- বেশ আগ্রহ জাগানিয়া। সানী জুবায়েরের লম্বা ভূমিকাটাও বুঝিয়ে দেয়, একজন সংগীতশিল্পীর যাত্রাটা কেমন হতে পারে। গানের প্রতি দরদ একজন মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়।
৭০-এর দশকের সুইডিশ ব্যান্ড অ্যাবা। ষাটের বিশ্ব কাঁপানো বিটলসের জয়জয়কারের পর ইউরোপজুড়ে নতুন ঢেউ শুরু হয় রক মিউজিকে। সাইকেডেলিক ঘরানার পিংক ফ্লয়েড, স্টেজ মাতানো রক-পপ ব্যান্ড কুইন, হার্ড-মেটালের মিশেলের লেড জেপেলিন বা হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া খ্যাত দ্য ইউরোপ-এর মাঝে পপ জনরার অ্যাবা আলাদা এক জায়গা করে নিয়েছিল মানুষের মনে। দলে মাত্র চার পারফর্মার। পিয়ানো আর গিটার যাদের মূল ইনস্ট্রুমেন্ট- সেই অ্যাবার গানের ঢেউ তেরো নদী সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে আছড়ে পড়েছিল বাঙালির মনেও। অনেক তরুণের পশ্চিমা সংগীতের সঙ্গে পরিচয় অ্যাবার গান দিয়ে। ভারতে ধ্রুপদী সংগীতের তালিম নেওয়া সানী জুবায়েরেরও পশ্চিমা পপের সঙ্গে পরিচয় অ্যাবা শুনে। বেনি অ্যান্ডারসনের সাক্ষাৎকার গ্রন্থটির ভূমিকাতে তিনি লিখেছেন, ‘ABBA was my first encounter with Western pop music as a child’.
দুই দম্পতির ব্যান্ড- স্টকহোম থেকে অ্যাবার শুরুটা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। তার আগের বছর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বিয়র্ন ও আগনেথা। আর জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সংসার শুরু করেছিলেন
বেনি-ফ্রিদাও। দুই দম্পতির বিচ্ছেদ যেমন হয়েছে তেমনি যেন ব্যান্ডের চিরায়ত নিয়মে ভেঙেছে অ্যাবাও। গান নিয়ে অর্জনের হয়তো কিছু বাকি ছিল না বলে দলে ‘ভাঙনের শব্দ’ শোনা গিয়েছিল তাদের ঘরে। সেই ভাঙন নিয়ে সানী জুবায়ের ভূমিকায় যা লিখেছেন তার একটু বাঙলায়ন করলে দাঁড়ায় এমন, ‘১৯৮২ সালে যখন অ্যাবা ভাঙে- অ্যাগনেথা, বেনি, বিয়র্ন ও অ্যানি ততদিনে যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন, করে ফেলেছেন। পপ সংগীতে তাদের অবদান, যশ ও প্রভাব ছিল অভূতপূর্ব। তারা বিশ্ব জয় করেছিল।...তাদের অর্জনের বাকি কিছু ছিল কি? এটাই হতে পারে তাদের ব্রেকআপের কারণ।’ ভাঙনের পরও সংগীতের খাতিরে একসঙ্গে ছিলেন অ্যাবার সদস্যরা। সেটা প্রফেসর বেনি জানিয়েছেন এভাবে, ‘মিউজিকের নিমিত্তে আমরা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
এ বই শুধু বেনির নয়; সানীর সংগীতভ্রমণেরও। অ্যাবার গান শোনার পর থেকে বেনির সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছে জেগেছিল তার। ওই কারণে ওয়েস্টার্ন মিউজিক নিয়ে পড়তে স্টকহোমে যাওয়া সানীর। বিশ্ববিখ্যাত একজন সংগীতশিল্পীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারপর্বটা কেমন ছিল এক বাঙালি শিল্পীর? সেই গল্পটা এখানে বাকি থাকুক।
‘হেপ স্টার্স’ দিয়ে ব্যান্ডপর্ব শুরু করেছিলেন বেনি। দলে ছিলেন বিয়র্নও। গিটার দিয়ে সুইডিশ ফোক গান করত হেপ স্টার্স। সেই ফোকের কিছু ছাপ দেখা যায় অ্যাবার গানেও। বিয়র্নের সঙ্গে বেনির পরিচয় গানের মাধ্যমে। দুজনে লিরিক লিখতেন। বেনির লেখালেখির শুরুটা ষাটের মাঝামাঝি। তবে তার সংগীতযাত্রাটা মাত্র ৬ বছর বয়স থেকে। দাদা ছিলেন শখের অ্যাকর্ডিয়ন বাদক। বাবা-মা বেনিকে তার ষষ্ঠ জন্মদিনে উপহার দিয়েছিলেন একটি অ্যাকর্ডিয়ন। সেই যে ‘সুইডিশ ওয়ালৎজ’ বাজাতে শুরু করলেন তিনি, সেটি আজও বেজে চলেছে লাখো হৃদয়ে। কিংবদন্তিদের সংগীতযাত্রার প্রথমবেলাটা হয়তো এভাবেই শুরু হয়।
THANK YOU BENNY ANDERSON FOR THE MUSIC IN CONVERSATION WITH SWANI ZUBAYEER, Published by Modhupok, Cover Razib dutta, Price 300tk.