Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

নারীভাবনা ও পান্না ঘোষের বেঁকে যাওয়া কাঁধ

Icon

বিলকিস ঝর্ণা

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১১

নারীভাবনা ও পান্না ঘোষের বেঁকে যাওয়া কাঁধ

প্রতীকী ছবি

বালু ঘড়ি শেলফের কর্নারে আরও পুরনো হয়। আমার নারীবোধে ধুলো জমে। নারীকথন বলার সময় হয় না কোনো। নারী বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনার শেষ নেই যেন। নারীকে সম্মাননা-সংবর্ধনা- নারী নিয়ে কতশত মহৎ ভাবনা আমরা ভাবি, তার জন্য কত অর্থ ব্যয় করি তা ভেবে শেষ করা যাবে না।

বিষয়-ভাবনা আমাকে বরাবরই অবাক করে। সভ্যতার দিনক্ষণ বহু পুরনো। অথচ পৃথিবীর ইতিহাসে নারীদের ভোটাধিকার সময় শুরু মাত্র কিছু দিনের। তারও অনেক দিন থেকে গেছি অবরোধবাসিনী হয়ে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়-অসচেতনায়। মধ্যযুগের ধর্মীয় কুসংস্কার ছাপিয়ে এযুগের দ্বিধাবিভক্ত নারীদের কিছু অংশেমাত্র মানুষের চেতনায় নিজেকে দেখে। পেছনের সারিতে আমরা সর্বদা হাততালি দিয়েই তুষ্ট। তবু নারী নিয়ে যত ভাবনা- যত চেতনা, উদারতা। সব উগরে ওঠে সভা-সমিতি আর দিবসের রঙ্গমঞ্চে। আমি প্রথম গতবছর আমার কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠান উদযাপনের ঢলপ্রহরে ছিলাম। সবাইকে বেগুনি শাড়িতে দেখে, বেগুনি রঙের শাড়ির বিশেষত্ব জানার ইচ্ছে হয়েছিল। এর উত্তর যা পেয়েছিলাম সেটাকে নগর জনের নারীকথন বললে ভুল হবে না। উৎসব যুক্তির কাছে সতর্কে পাশ কাটায়। মহাজনি প্রভুদের চোখ জ্বলে না। নইলে যে আমরাও ছাতা হারাই- আর সমাজ নামক ছাদও। আমি উলু বনে মুক্তা ছড়াই না আর। পিছু হটি। এমনি আরও কত পেছনে হটার গল্প জমে রোজ। গল্প জমে নারী হয়ে ওঠার।

শরীরে নয়, চেতনায়। জাগিয়ে দেয় মানুষের অধিকারে সোচ্চার হতে। নাড়িয়ে দেয় আরও অনেকখানি। আমি মুক্তির পথে আগাই। পাঠ্য বইয়ের পাতায় তখনও নারী বিশেষণ অমূলক। আমার ঠিক ভুলের সমুদ্রে তখন সকল নিরামিষ মৎসজীবী। নারী সংস্কার মুক্ত, নারীর পাশে দাঁড়াই না আর। বিপ্লবের মাঠে চেয়ারের লড়াই। মঞ্চের পর্দায় রোজ এঁকে দেই কিছু দৈন নির্যাস। মানুষ মুছে দিতে থাকে রোজ নিপুণ হাতে। মানুষের যাপন আর হয়না তাই। নারী হয়ে বেঁচে রই অন্য নারী-পুরুষের সামাজিকতায়। তবু নারীযাপনেই স্বাচ্ছন্দ্য। মাথার ওপর ঝুলিয়ে রাখি পুরুষতন্ত্রের ছাদ। বনেদিআনার খোলস থেকে যখন অনেকটা বাইরে। চারপাশে যখন ঘন অন্ধকার। তখন খোলসের ভেতর আর বাহিরের কী তফাৎ। নারীকে কোন মুক্তির পথের কথা জানাতে চায় মানুষ? বাহিরে আসার নাকি বাহির থেকে ভেতরে যাওয়ার?

দুই বিপরীতমুখী মুক্তির দরজায় সেঁটে গেছি আমরা। পৃথিবীর একপেশে ইতিহাসে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে নারী কথন। চাপিয়ে দেওয়া কর্তৃত্ব, আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ মেনে নিয়ে সমাজ সভ্যতাকে চলমান রাখার গুরুদায়িত্ব বয়ে চলেছে নারী। নারীর রন্ধ্রে গেঁথে যাওয়া পুরুষতান্ত্রিক অন্যায়ের পরে তাই নারীদেরই কটাক্ষ যুক্তি নারী জাগরণের চেতনার গলা চেপে ধরে। 

আর নারীই তখন হয়ে ওঠে নারীর নিপীড়ক। উগ্রতা পরিহার করে আত্মত্যাগের বিনিময়ে শান্তি বজায় রাখাই নারীর আত্মতৃপ্তি। সভ্যতার ক্রমবিকাশে তাই পুরুষতন্ত্রের উত্থান পেতে থাকে প্রতিনিয়ত। বিভক্ত চেতনায় নারীবাদ পুরুষবাদেরই সমার্থক। মানুষতন্ত্র তাই মথিত আর ব্যথিত। নারীর অর্থায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। বন্ধু তালিকায় কত নারী স্বামীদের টাকায় তাদের উন্নত গ্রীবা। জীবন এখানে অন্য কথা বলে। এরা বেগুনি শাড়ি পরে সম্মাননা নেয়। ফেরিওয়ালার কাঁধে বড় নির্মম সময়ের কুঁজো। পান্না ঘোষের বেঁকে যাওয়া কাঁধ বয়ে চলে- চকচকে রসালো পানতোয়া। আমি সমীকরণ মেলাতে ওপাশের হাঁড়িতে রাখি জমে যাওয়া দই। অতঃপর পান্না ঘোষের এটাই জীবন। সেখানে কোনো তেপান্তর নেই। আর মজা পুকুরও। আছে এক জলজ্যান্ত নারী। প্রজাপতি ধ্যানে আমি আজও পুরাতাত্ত্বি মুদ্রার প্রতিশব্দ খুঁজি। খুঁজে চলি অন্য এক মানুষ। জীবনের মানে তার ভিন্ন। হুবহু মানুষের মতো।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫