Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

পরিচয়

Icon

কলি বড়াল

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৯

পরিচয়

প্রতীকী ছবি

প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে জয়ার ঘুম কেটে গেলো। বাসের সবাই তড়িঘড়ি করে নেমে পড়ছে। ওর পাশের সিটটা খালিই ছিলো। জয়াও নামল। বাস যাত্রীদের কপাল ভালো গাড়ি গাছের সাথে লাগিয়ে দেয়াতে বেঁচে গেছেন সবাই। বাস কন্ডাক্টর জানিয়ে দিলেন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে সারতে সময় লাগবে। রাত ১২টা বাজে, এমন জায়গায় ঘটনা ঘটলো অন্য কোন গাড়িও পাওয়া যাবে না। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কিছুটা দূরের রাস্তার পাশের দোকানের বেঞ্চি গুলো দেখা যাচ্ছে। জয়া সেখানে গিয়ে বসল। এ বাসের কোন যাত্রী বসে ছিলেন আগে থেকেই। জয়ার চায়ের তেষ্টা পাচ্ছে কিন্তু কোন ওয়ে নেই। খিদেও পেয়েছে, ব্যাগ থেকে বিস্কুট বার করে খেতে লাগল। পাশে বসে থাকা লোকটিকে সাধলো...
লোকটি একপিস বিস্কুট তুলে নিলো।
জয়া ওনাকে বললো, খিদে পেলে খেতে থাকুন ভদ্রতা করে এক পিস নিতে হবে না। আফটার অল সহযাত্রী। আবছা আলোয় মানুষটার ঠোঁটের কোনে সৌজন্যতার হাসি ফুটে উঠলো।
-কোথায় যাচ্ছেন?
জয়া উত্তর দিলো বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে, যেতেই হচ্ছে চিটাগাং। আপনি?
-একা নই আরো ক’জন আছে একটা ওয়ার্কশপে যাচ্ছি।
-গাড়ি কী রাতের মধ্যে সারতে পারবে বলে মনে হয়?
-দেখা যাক একটু ওয়েট করি।
কুট কুট করে এরই মধ্যে ওরা বিস্কুট প্যাকেট শেষ করলো। জয়া নিজে জল খেয়ে ওনাকেও জলের বোতল এগিয়ে দিলো। লোকটা পকেট থেকে সিগারেট বার করে জ্বালাতে গিয়ে প্রশ্ন করলো, ধোঁয়ায় সমস্যা?
-উঁহু, আমায় একটা দিতে পারেন।
প্যাকেটটি জয়ার হাতে দিতেই জয়া উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলল, আরে বাহ! ধোঁয়ার ব্রান্ডও দেখি এক।
দুজনেই হাসল। সিগারেট টানতে টানতে লোকটি নিজের পরিচয় দিলেন, আমি রিসাত রহমান।
-জয়া রয়।
-কোথায় থাকেন?
-ঢাকাতেই।
-আমিও, তাই।
-বেশ, এরিয়া?
-মোহাম্মদপুর।
-মোটামুটি প্রতিবেশী বলা যায় তাহলে, আমি ধানমন্ডি ১৯।
দুজনেই খানিক বাদে চুপচাপ, রিসাত রহমান তার ব্যাগ থেকে খাতা কলম বার করে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কী সব টানাটানি করছেন। জয়া আরাম করে সিগারেট শেষ করে একখানা বই খুলে বসেছে। রিসাতের মনে মনে বেশ অবাক লাগছে ২০২৪ সালে এসে এত অল্প বয়সী একটা মেয়ের সাধারণত মোবাইল ঘাটাঘাটি করার কথা। বয়স কত আর হবে ২০/২২ হয়ত। অপরিচিত মানুষ মেয়েদের সাথে সেধে কথা বললে ভালভাবে নেয় না। কৌতূহল চেপে নিজের স্কেচ খাতায় মন দিলো। মিনিট দশেক পর বাসের হেল্পার জানাল গাড়ি ঠিক হবে না তাড়াতাড়ি, ভালোই গণ্ডগোল হয়েছে। বেশিদূর কেউ যেনো না যান একা একা। এতক্ষণে তবে জয়ার মেজাজ দেখা গেলো, ধুর বন্ধুর বিয়ে খাওয়া মাটি। রিসাত রহমান কে জিজ্ঞেস করে বসল অন্য কোন গাড়ি পেলে উঠে বসতে চান নাকি?
-আরেহ নাহ নাহ, সঙ্গে লোকজন আছে। আমার অসুবিধে নেই রাতজাগা অভ্যাস আছে। সত্যি আপনার জন্য খারাপ লাগছে।
-আঁকা বুকিতে ভালোবাসা আছে মনে হচ্ছে।
-তা বলতে পারেন।
-আমারও রঙ খেলা মানে তুলিতে, ছবিতে কথা তুলে ধরা নিয়ে বড্ড আগ্রহ। তবে পারি না। আপনার খাতাটা দেখতে পারি?
-এখনো শেষ হয়নি, হয়ে গেলে দেখাব। কী করেন আপনি?
-পড়াই।
-বেশ, আমি ভেবেছিলাম বাচ্চা মেয়ে হবেন।
জয়া খিলখিল করে হেসে উঠলো, সবাই ভাবে, আপনি নতুন নন। আমার বয়স অনুমান করতে পারেন?
-এখন পারছি না, তবে মনে হয়েছিলো ২০ প্লাস।
-আরেহ... ৩০ ছুঁই ছুঁই। রিসাত সাহেব চা খেতে পারলে ভাল হত। আশেপাশে খুঁজে আসব নাকি, যাবেন সাথে?
-অপরিচিত জায়গা এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না, তাও আবার সাথে সুন্দরী।
-রাত কিন্তু অনেক বাকি, খিদে লাগবে এভাবে বসে থাকলে, বরঞ্চ বাসে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া বেটার।
-সিগারেট আছে আরেকটা নিতে পারেন খিদা কম লাগবে।
-আচ্ছা দিন।
দুজন আবার সিগারেট টানছে, জয়া রিসাত কে ধন্যবাদ দিলো। জানতেও চাইলো কী করেন?
-খবরের কাগজে আছি, আর কিছু বললেন না রিসাত।
-জয়া, বেশ বেশ।
রাত প্রায় একটা বাজে জয়ার ফোন এলে, রাস্তায় বাস খারাপ হয়েছে এসব কথাই জানাল অপর পাশকে। বই নিয়ে কী একটা কথা হলো। ফোনটা মুখের কাছে ধরে মন খারাপ করে বসলো জয়া। বিড়বিড় করে বলছে এরা কী যে কাজ করে পরপরই জয়া ফোনের স্ক্রিনে বিজি হয়ে গেলো।
-রিসাত জয়াকে জিঙ্গেস করলেন, কোন সমস্যা?
-না তেমন না তবে। নতুন বইয়ের কাজ নিয়ে একটু চিন্তায় আছি।
-আপনি লেখক নাকি?
-আরেহ... ধুর, লেখালেখি করলেই লেখক বিশেষণ পাওয়া যায় নাকি?
-কী বিষয় নিয়ে লেখেন?
-কবিতা লিখতে পারিনা তবে মাঝেমধ্যে কিছু লাইন এমনি হয়ে যায়। আর টুকটাক গল্প টল্প এই তো। স্রেফ ভালো লাগার জায়গা থেকে।
-প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা?
-গোটা পাঁচেক।
-বাপরে, কী যে বলেন না। আপনি তো পুরাদস্তুর লেখক।
-অমন লেখক হলে তো আপনিই চিনতেন। আমি হলাম ছাপোষা মানুষ। ওসব কিচ্ছু নই।
-হয়েছে আর বিনয় করতে হবে না রাইটার জয়া রয়। কিছু না মনে করলে আপনার লেখা দেখতে পারি কী?
-অবশ্যই, তবে ফোনে দেখতে হবে আপাতত।
রিসাত জয়ার লেখা কবিতা পড়ে অভিভূত। দারুণ লেখে তো মেয়েটা। খুব প্রশংসাও করলো।
জয়া বললো আমার লজ্জা লাগে রিসাত এমন প্রশংসা পাওয়ার মতোন কিছু নয়। রিসাতের কোলের উপর থেকে স্কেচ খাতাটা নিয়ে নিলো জয়া। উল্টেপাল্টে দেখে অবাক! আপনি এত্ত ভালো আঁকেন?পুরোই ম্যাজিক। আপনাকে ম্যাজিশিয়ানও বলা চলে কিন্তু...।
খাতাটা দেখে মনে পরলো, আমার নতুন বইয়ের প্রচ্ছদটা কাকে দিয়ে করাব..., ভাবছি।কিছুক্ষণ আগে বন্ধু একটা কাজ পাঠাল পছন্দ হয়নি। জুতসই লাগছে না।বলুন আঁকার জ্ঞান না থাকলেও কিছু তো বুঝি। লেখাটার সাথে অ্যাবস্ট্রাক্ট কিছু চাচ্ছি আর কী।
রিসাত সাহেব উত্তর দিলেন আপনি যদি বলেন তো আমিই করে দিব।
-আপনি?
-হ্যাঁ, সংশয় আছে? আমার ফেবু আইডিতে গিয়ে কাজ দেখতে পারেন। অনেকেই কিন্তু আমাকে দিয়ে কাজ করাতে পারলে ধন্য হয়।
জয়া ফেবুতে সার্চ দিলো। সত্যি অসাধারণ সব ওয়ার্ক রিসাত রহমানের।কত ধরনের কাজ করেন। এই লোক আসলে কে, গুগল করে দেখে নিলো জয়া। মাই গড ওয়েলনোন আর্টিস্ট রিসাত রহমান ওর সামনে। সত্যিকারের গুণীরা বিনয়ী মানুষ হন। -জানেন তো আজকে বাসটা খারাপ করে মন্দ কিছু হয়নি।
-রিসাত রহমান মুচকি হাসলেন।
ওদের গল্প জমে উঠল মনে হতে থাকল কত দিন আগের চেনা দুজন দু’জনার। বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে কথার এক পর্যায়ে জয়া দুঃখ করে বলতে লাগলো একবার তো ইচ্ছে করছিলো নিজেই করি। এই যে বন্ধু এত ব্যস্ততার মাঝে কাজ করে পাঠলো। ওকে বোঝেতেই পারলাম না অনেক সময় আক্ষরিক অর্থ সামনে নিয়ে আসতে হবে কেনো? চট করে বলেই বসলো আর্টের ব্যাপার তুই বুঝবি না রে পাগলী।
রিসাত রহমান জয়ার আলোচনার প্রেক্ষিতে বললেন, আপনার বন্ধু আক্ষরিক অর্থ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন, তাহলে কী আক্ষরিক অর্থে “চোখের বালির” প্রচ্ছদ হবে চোখের মধ্যে এক মুঠো বালি? বলেই দুজন হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ার অবস্থায়। ওদের গল্পের মাঝে রিসাতের বন্ধুরা এসে আলাপ করে গেছে। রিসাত জয়াকে রাইটার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। রিসাত কথা দিলেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জয়ার নতুন বইয়ের কভারটা করে দেবেন। আধঘণ্টার মধ্যে গাড়ি ঠিক হয়ে গেলো। জয়া মনে মনে চাইছিলো রিসাত ওর পাশের খালি সিটটাতে এসে বসুক কিন্তু সকাল অবধি সেটা খালিই পড়ে রইলো। জয়া নেমে যাওয়ার সময় রিসাতকে জানিয়ে গেলো এই দারুণ রাত টুকুন মনে থাকবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫