
প্রতীকী ছবি
তারা পরস্পরকে ভালোবাসে খুব। একটি মাত্র সন্তান নিয়ে ছোট্ট সংসার তাদের। সংসারে বিরাজমান অনাবিল সুখ। সংসার ও সন্তান নিয়ে সমান চিন্তা- সমান প্রচেষ্টা দুজনের।
তবু দুজন দুজনকে হারিয়ে ফেলে প্রায়ই। দুজনের মনই একটু উড়ু উড়। উড়ে যায় এদিক-ওদিক। আবার ফিরে আসে ঘরে। আবার ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে পরস্পরকে।
পুরুষটা অফিসের লাস্যময়ী নারী সহকর্মীর সাথে একটু গল্প করতে পছন্দ করে। হেসে হেসে কথা বলে তার সাথে। জন্মদিন, নববর্ষ, বন্ধু দিবস, ভালোবাসা দিবস- এ রকম বিশেষ দিনগুলোতে তাকে এটা-ওটা উপহার দিতে পছন্দ করে। আর মাঝে মাঝে কোনো রেস্টুরেন্টে তাকে নিয়ে খেতে যায় কফি, স্যান্ডউইচ। তখন তাদের খুব কাছাকাছি বসা হয়। সুন্দরী সহকর্মীর চুলের গন্ধ, শরীরে জেসমিন ফুলের গন্ধ তাকে মাতাল করে দেয় যেন। হয়তো নিজের অজান্তে, অথবা ইচ্ছায় তার শরীরের একটু স্পর্শ নেয়। আশ্চর্য পুলক! শরীরের প্রতিটা কণাকে ঝাঁকুনি দেয় ভীষণভাবে। ঝাঁকুনি খেয়ে সে বলে স্যরি। মনে কিছু...?
পার্শ্ববর্তিনী হেসে ওঠে। বলে : না না, ঠিক আছে।
যেদিন পুরুষটা সুন্দরী সহকর্মীর সাথে বাইরে খেতে যায়, যেদিন সহকর্মীর নরম শরীরের স্পর্শ নেয়, শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঝাঁকুনি খায়, সেদিন সে অপরাধবোধে ভোগে। বাসায় ফিরে স্ত্রীর সাথে খুব বেশি কথা বলে হেসে হেসে। খুব বেশি খোঁজ-খবর নেয় সন্তান, পরিবারের এবং অন্য সব কিছুর। ছুটোছুটি করে দোকান থেকে এটা-ওটা এনে দেয়। স্ত্রীকে রান্না ঘরেও সাহায্য করে। আরও আরও ভালোবাসে স্ত্রীকে। বলে : জানো, তোমাকে ছেড়ে অফিসে একদম সময় কাটে না। কিচ্ছু ভাল্লাগে না!
আর নারীটা।
স্বামী অফিসে গেলে পরে নারীটা সন্তান নিয়ে স্কুলে যায়। সন্তান ক্লাসে গেলে গাছের ছায়ায় বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করে। আর এ সময় আরেক বাচ্চার বাবার সাথে কথা হয় তার। গল্প হয় এটা-ওটা নিয়ে। লোকটা একটা ব্যাংকের অফিসার। সুদর্শন। ভরাট কণ্ঠে কথা বলে। সুদর্শন পুরুষটার সাথে সে হেসে হেসে কথা বলে। মাঝে মাঝে অফিসার সাহেব বলেন : স্কুল ছুটি হতে তো বেশ দেরি। চলুন না, পাশের রেস্টুরেন্টটায় গিয়ে একটু বসি।
নারীটা এড়াতে পারে না সেই আহ্বান। রেস্টুরেন্টে যায়। কফি, স্যান্ডউইচ খায়। তখন তারা বেশ কাছাকাছি বসে। খায়। গল্প করে। হাসে। অফিসারটার শরীরের বেলি ফুলের নরম গন্ধে কেমন মাদকতা অনুভব করে সে। আর অফিসারটা তার শরীরে কখনও স্পর্শ দেয়। হয়তো নিজের অজান্তে, অথবা ইচ্ছা করেই। সে এক আশ্চর্য অনুভূতি। সমস্ত শরীর যেন অবশ হয়ে যায়। সুদর্শন পুরুষটা বলে : স্যরি। কিছু মনে...?
সে বলে : না না, ঠিক আছে।
যেদিন সে ব্যাংক অফিসারের সাথে কফি খেতে যায়, যেদিন তার নরম অঙ্গের স্পর্শ দেয় সেদিন সে অপরাধবোধে ভোগে। সেদিন স্বামীকে আরও ভালোবাসা দেয়। স্বামী অফিস থেকে ফিরলেই ছুটোছুটি করে লুঙ্গি, তোয়ালে, সাবান আরও কত্ত কিছু এগিয়ে দেয়। স্বামী ওয়াশরুমে গেলে বাইরে থেকে বারবার সতর্ক করে : পানি কম ঢেলো গায়ে, আবার ঠান্ডা লেগে যাবে।
সীমাহীন উৎকণ্ঠা। তারপর স্বামীর জন্য স্পেশাল নাশতা। স্পেশাল কফি। স্বামীর শরীর ঘেঁষে বসে গদগদ কণ্ঠে কত্ত কথা : জানো, তুমি অফিসে থাকলে কিচ্ছু ভাল্লাগে না! মাঝে মাঝে একটু আগে ফিরতে পারো না?
এভাবেই একটু অপরাধবোধ, আরও একটু ভালোবাসা নিয়ে চলছে তাদের ছোট্ট সুখের সংসার। দুজনই দুজনকে ভালোবাসে খুব। তবু দুজনের মনই একটু উড়ু উড়ু। উড়ু উড়ু!
হয়তো এভাবেই কাটবে তাদের একটিমাত্র জীবন। অথবা...। অথবা ঝড় উঠবে কোনো এক অশুভ ক্ষণে। সব তছনছ করে দেবে সেই ঝড়।
হ্যাঁ, ঝড়ের আশঙ্কা তো রয়েই গেছে।
ঝড় সত্যিই উঠে গেলে, সব তছনছ হয়ে গেলে, তাদের শিশুসন্তানটিকে কি সেই ঝড়ের ঘূর্ণি স্পর্শ করবে না? তারা দুজনেই দুজনকে খুব ভালোবাসে। তবু দুজনের মনই একটু উড়ু উড়ু।