Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

গার্লস স্কুলটা সরে গেছে

Icon

সারওয়ার-উল-ইসলাম

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২

গার্লস স্কুলটা সরে গেছে

প্রতীকী ছবি

দূরে নদীটা উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে। মাঘের শেষ সপ্তাহ হলেও প্রকৃতিতে ফাল্গুনের ছোঁয়া। ফাল্গুনি হাওয়া বইছে। জিনসের মোটা শার্ট পরা অভি। বুকের কাছের দুটা বোতাম খোলা। তেপ্পান্ন পেরোনো শরীরে হাওয়ার দাপট বোঝা যাচ্ছে। সুযোগ পেলেই ঢাকা থেকে চলে আসে এই মফস্বল শহরে। আজ শনিবার, ছুটির দিন। একাই চলে এসেছে এখানে। এই মফস্বল শহরে থাকত চল্লিশ বছর আগে। বাবার বদলির চাকরির কারণে এখানে ক্লাস ফাইভে পড়া অবস্থায় আসতে হয়েছিল অভিকে। এত বছর পরও কোন এক টানে ছুটে আসে বউ-ছেলেমেয়ের কাছে, সেটা অজানাই থেকে গেছে। তখন ক্লাস এইটে পড়ে। মফস্বল শহরটা তখনও যেমন শান্ত ছিল এত বছর পরও একই রকম মনে হয় অভির কাছে। শুধু বয়েজ স্কুলটার পাশে গার্লস স্কুলটা নেই। নদীর ভাঙনের কারণে একটু দূরে চলে গেছে। মাইলখানেক দূরত্ব দুটি স্কুলের মধ্যে।

ক্লাস এইট হলেও সেই বয়সে গার্লস স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরত না অভি। নীনার সঙ্গে একবার চোখাচোখি হবে, তারপরই বাড়ি ফিরে শান্তি। ভাত হজম হওয়া বলা যায়। নইলে যেন ভাত বুকের ওপর উঠে থাকত। বাবা যখন আবার ঢাকা চলে এলো বদলি হয়ে একরাশ কষ্ট নিয়ে অভিকেও ক্লাস নাইনে ভর্তি হতে হয় মিরপুরের একটি স্কুলে। বন্ধ থাকেনি দুজনের যোগাযোগ। পোস্টম্যান শহিদুল্লাহ প্রতি সপ্তাহেই চিঠি দিয়ে যেত দুপুর শেষে। ঘরের কেউ টের পেত না, কার চিঠি। মা-বাবা জানতো সেই মফস্বলের স্কুলবন্ধু পলুর চিঠি। মা বাবাকে তেমনটাই বুঝিয়েছিল। স্কুল পেরিয়ে কলেজ, কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর একদিন এলো এক চিঠি, যে চিঠি পেয়ে চলে গিয়েছিল সেই মফস্বল শহরে। নীনার মুখের কথা শুনে কোনো কথাই বলতে পারেনি অভি।

কিভাবে সম্ভব? নিজের পায়ের নিচেই মাটি নেই। কিভাবে আরেকজনকে গ্রহণ করবে? বাবা-মাকে কিভাবে বলবে, নীনাকে ভালোবাসার কথা। ওকে বিয়ে করতে চাই। নইলে অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাবে নীনার। পারেনি অভি। চুপচাপ চলে এসেছে ঢাকায়। আর কোনো যোগাযোগ হয়নি দুজনের। কেটে গেছে উনত্রিশ বছর। উনত্রিশ বছরে অন্তত একশবারেরও বেশি এসেছে এই মফস্বল শহরে, একা। একজন ছাড়া কেউ জানে না, কেন অভি এখানে আসে। কিসের টানে? সেই একজন স্কুলের বন্ধু পলু জানিয়েছিল নীনার বিয়ে হয়েছে যশোরে। ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। আর কিছু জানে না। জীবন থেকে কতগুলো বছর চলে গেছে নীনাকে ছাড়া। যে নীনাকে এক দিন না দেখলে দুপুরের ভাত খাওয়ার পর হজম হতো না। একসময় অভি নদীর পাড় দিয়ে এগিয়ে যায় উত্তর দিকে। প্রায় মাইলখানিকের পথ। নদীর পাড় থেকে একটু ভেতরেই গার্লস স্কুল। স্কুলটার সামনে এসে দাঁড়ায়। 

সূর্যটা পশ্চিম দিগন্তে ডুবে যাবে খানিকবাদেই। এই স্কুলে নীনা পড়েছে। স্কুলটা পরবর্তী সময়ে স্কুল এবং কলেজ হয়েছিল। নীনা কলেজ থেকে বিএ পাস করেছিল। তারপর... আর ভাবতে পারে না অভি। বুকটা কেমন ভারী হয়ে ওঠে। কতকাল নীনার সঙ্গে দেখা হয় না। আলতো পায়ে হাঁটতে থাকে, স্কুলটাকে পেছনে ফেলে। ঢাকা যাবার বাস ধরতে হবে। মনে পড়ে নীনা একবার লিখেছিল নদীর ভাঙনে গার্লস স্কুলটা বয়েজ স্কুলের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। তুমিও যদি একদিন দূরে সরে যাও? অভি প্রতি-উত্তরে লিখেছিল কোনো দিন না। শত মাইল দূরে চলে যেতে পারে গার্লস স্কুল, অভি কখনো দূরে সরে যাবে না। নদীর সঙ্গে জীবনের কত মিল! বয়েজ স্কুল থেকে গার্লস স্কুলটাকে কত দূরে সরিয়ে দিয়েছে নদীর ভাঙন।

ঠিক তখনই একটু দূরে নদীর পাড়ের বেশ কিছু মাটি ভেঙে পড়ল, শব্দ করে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫