
প্রতীকী ছবি
অনেকে বলেন, আমি মনের আনন্দে লিখি। বেদনা খুঁড়েও তো কত কী লিখতে হয়। এক লেখক রাতে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। সেখানেই বলছিলেন কথাগুলো। সেটা শুনে এক শ্রমজীবী দর্শক বললেন, হ, লেখকরা খোঁড়াখুঁড়ি করতেই ভালোবাসে।
আরে ভাই, খোঁড়াখুঁড়ি যদি এতই পছন্দ, তাইলে মাটি কাটলেই পারেন। টিভি চ্যানেলে লেখক তখন বলছেন, লেখালেখি, বিশেষ করে গদ্য লেখা মাটি কাটার চেয়েও কঠিন কাজ।
শ্রমজীবী দর্শক এ কথা শুনে বললেন, ভদ্দরলোকদের নিয়া এই আরেক সমস্যা। আরেকজনের কাজরে ইনারা ছোট কইরা দ্যাহে।
লেখক সাক্ষাৎকারে আবেগাকুল গলায় তখন বলছেন, প্রকৃত সৃজনশীল কাজ আসলে কঠিন। শিল্পে প্রাণ প্রতিষ্ঠা মোটেই সহজ নয়। প্রকৃত সুন্দরের সন্ধান পেলে মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আর এই সুন্দরের যাত্রায় মানুষ আসলে একা। ভীষণ নিঃসঙ্গ। এই কথাটা শ্রমজীবী দর্শকের পছন্দ হলো। মাথা দুলিয়ে তিনি বললেন, এইডা ঠিক কইছেন লেখক সাব। আমাগো নুরু চাচা যেই সুন্দর কইরা গোর খুঁড়ে, দেইখা চোখ জুড়াইয়া যায়। গোর তো না য্যান শিল্পকর্ম। শ্যাষ যাত্রায় তো মানুষ একা। কবরেও তো একাই যাইতি অয়। একাই থাকতি অয়। লেখকের কথা লাখো দর্শক শুনল। আর শ্রমজীবী দর্শকের কথা শুনল কেবল তার বউ। ছোট ছোট তিন সন্তান ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। পানের খিলি হাতে তুলে দিয়ে একটু ঘন হয়ে বসে বউ বলল, তোমার মাথাডাও কি আওলাইয়া গ্যাছে? কী সব আবোল-তাবোল কথা কইতেছ। আমারে ছাইড়া তুমি কই যাবা? যাইতি দিলি তো! বউ আরো ঘন হয়ে আসে। তার নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। শ্রমজীবী দর্শকের হঠাৎ মনে হতে থাকে, না, কোনো সুন্দর যাত্রায় মানুষ একা না। মোটেই একা না।