Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

সেলিনা হোসেনের বিশেষ সাক্ষাৎকার

Icon

হাসান সাইদুল

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২০, ১২:২৭

সেলিনা হোসেনের বিশেষ সাক্ষাৎকার

সেলিনা হোসেনের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে। তিনি ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়তে নিয়মিত লিখতেন। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধান শালিকের দেশ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম নারী পরিচালক হন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকরি থেকে অবসর নেন।

প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। ভ্রমণ তার নেশা। তার মোট উপন্যাসের সংখ্যা ২১- গল্পগ্রন্থ সাতটি ও প্রবন্ধের গ্রন্থ চারটি। কবিতার বই বর্ণমালার গল্প। ১৪ জুন ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া এ লেখকের অন্তঃস্মৃতি, অন্তর্বোধ ইত্যাদি অনুসন্ধান করতে গিয়েই কথা বলেন হাসান সাইদুল

আপনার শৈশব কেটেছে কীভাবে?

আসলে আমার লেখক হওয়ার কোনো স্বপ্ন ছিল না। কোনো কিছুই হওয়ার স্বপ্ন ছিল না। প্রকৃতির প্রতি দুর্বল ছিলাম। আমার সমপাঠীরা মিলে সারাক্ষণ নদী, ধানক্ষেত, পেয়ারা গাছ আর পুকুরপাড়ে ঘুরে বেড়াতাম। টুনটুনির বাসা থেকে ডিম নিয়ে আসতাম। শামুকের ডিম টিপে দেখতাম, ভেতরে কী আছে।

এসব করতে আমার কি যে ভালো লাগত। পেয়ারা গাছের মগডালে উঠতাম পাকা পেয়ারা পাড়ার জন্য। যখন দেখতাম আব্বা অফিস থেকে আসছেন, সেখান থেকে লাফিয়ে পড়তাম মাটিতে। গিয়ে আব্বাকে জড়িয়ে ধরতাম। আব্বা বাসায় ফেরার সময় কিছু না কিছু হাতে করে নিয়ে আসতেন। আমি সেগুলো বেশির ভাগটা রেখে তারপর অন্যদের দিতাম।

আপনার প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতির কথা জানতে চাই।

লেখালেখি জীবনের প্রথম আনন্দের বিষয় হলো, ১৯৬৪ সালে রাজশাহী ডিভিশনের একটা সাহিত্য সংঘ একটি সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। তখন আমি একটা গল্প জমা দিয়েছিলাম, যেটি আমার জীবনের প্রথম লেখা গল্প। কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে, গল্পটা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আমি পাইনি। গল্পটার নামটাও আমার মনে পড়ছে না।

আমাদের সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।

বাংলাদেশের সূচনা থেকে এ পর্যন্ত যে সাহিত্যের চর্চা হচ্ছে, সেটাকে আমি অনেক ভালোই বলব। এখানকার লেখকরা সময়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারা বিশ্বের সমসাময়িক চর্চাকে ধরতে পারছেন। আমি সামগ্রিকভাবে ভালো মনে করি। শিল্প-সংস্কৃতির অনেক মাধ্যমেও বেশ ভালো কাজ হচ্ছে। এখানে অনেক শিল্পসম্মত ও উন্নত মানের নাটক তৈরি হচ্ছে। মঞ্চায়ন বা ফর্মের দিকেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। এখানকার লেখকরা বিচিত্র বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। তারা পিছিয়ে নেই। তবে এটি ঠিক, শিল্পের গুণগত মান বিচার করবে সময়।

জীবনের এমন কিছু ঘটনার কথা বলুন, যা না ঘটলে লেখক সেলিনা হোসেন হতেন না।

সাহিত্যিক হব, এ রকম কোনো পরিকল্পনা ছিল না। লেখক হওয়ার জন্য ভেতরে তেমন তাগাদা অনুভব করিনি। ‘৬৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় একটি প্রতিযোগিতায় সাতটি বিষয়ে অংশগ্রহণ করে ছয়টিতে প্রথম হই। একটিতে তৃতীয় হয়েছিলাম। এখানে গল্প লিখে প্রথম হই।

পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সেখানকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা ‘উত্তর অন্বেষণ’, ‘পূর্বমেঘ’সহ আরও কিছু পত্রিকায় লিখতে শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত শিক্ষক ও লেখকদের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য হয়। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম স্যার সবসময় লিখতে বলতেন। ওখান থেকেই শুরু। আর প্রথম থেকেই সাধারণ মানুষের জীবন, তাদের অনুভূতি আবেগ-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লেখার কথা ভাবতাম এবং লিখতে ভালো লাগত। সেই থেকে লেখালেখি করে আসছি আজ অবধি।

জীবনের এ অবস্থায় এসে শৈশবকে কতটা লালন করছেন?

আমার ছিল আনন্দময় শৈশব। প্রকৃতি দেখে প্রকৃতির ভেতর বড় হয়েছি। ছোটবেলার স্মৃতি এখনও লেখায় সাহায্য করে। যখনই কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য বা জীবনযাপনের বর্ণনা লিখি, ফিরে যাই শৈশবের স্মৃতির কাছে। সেখান থেকে রূপ-রস আহরণ করে আমার রচনাকে সজীব করে তুলি। মানব সম্পর্কের বিষয়গুলোও শৈশবের স্মৃতি থেকে আসে। তখন আমরা থাকতাম বগুড়ায়। মনে আছে, আমাদের বাড়িতে একটি মেয়ে কাজ করত। ওর নাম ছিল ‘তারা’। একজন বয়স্ক লোকের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়। লোকটি ওকে প্রায়ই মারধর করত। সে স্মৃতি এখন আমাকে অনেক কিছু বুঝতে সাহায্য করে।

আমি যখন কোনো নির্যাতিত নারী সম্পর্কে কথা বলতে যাই, তারার মুখচ্ছবি আমার মানসপটে ভেসে ওঠে। অনুভব করতে পারি, বাল্যবিবাহের বিষয়গুলো কত যন্ত্রণার। একদিন সন্ধ্যায় বাবার এক কর্মচারীর বাড়িতে গিয়ে দেখি, মা সন্তানদের ছোলা খেতে দিয়েছে। ছেলেমেয়েগুলো চাঁদের আলোয় বসে তা খাচ্ছে। চাঁদের আলোয়, কেননা ঘরে কোনো কেরোসিন নেই। দরিদ্র মানুষের জীবন কেমন বুঝতে পারি। ঈদে নতুন জামা পায়নি বলে কাঁদছে। আমরাও ওদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম। ছেলেবেলার নানা স্মৃতি আমার কাছে অন্য অর্থ নিয়ে আরও গভীরভাবে উপস্থিত হয়; যা আমাকে ভাবায়, কাঁদায়। আমার লেখালেখির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।

বিভিন্ন রকম সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে প্রায়ই ব্যস্ত থাকেন। এতে লেখালেখির ক্ষতি হয় না?

আমার সংসারিক দায়িত্বকে কখনই আমি অবহেলা করিনি। আমার মেয়ে লারার বয়স যখন দুই মাস, তখন আমি বাংলা একাডেমির চাকরিটা পেয়েছি। বাসায় কাজের মেয়ের কাছে রেখে অফিস করেছি আবার বিকালে বাসায় এসে তাদের আদর-যত্ন করেছি। সামাজিক কাজের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত। কিন্তু প্রতিদিনই আমি লেখি। সাইদুল এই যে তুমি আসবে, তা আমি লিখে রেখেছিলাম, তাই আজ সকালে ২ ঘণ্টা লিখেছি। কখনও সকালে লিখি, কখনও বিকালে। আমার লেখার জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে প্রতিদিনই আমি সময় বের করি লেখার জন্য। লেখা ছাড়া আমার চলে না। এক হাতে আমার সংসার, আরেক হাতে আমার লেখালেখি।

আপনি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমান ছাত্ররাজনীতি আর আপনাদের সময়ের ছাত্ররাজনীতিতে কী পার্থক্য দেখেন?

ছাত্রজীবনে শুধু রাজনীতি নয়- গান, নাচ, অভিনয় সবই করতাম। আমি ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। ভাবতেই পারতাম না, আমাকে ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান হবে। সমানতালে বিতর্ক করতাম। ছাত্র ইউনিয়নের মিটিং করতে অনেক সময় রাত ১০টা বেজে যেত। রিকশা নিয়ে একা বাসায় ফিরতাম। অনেক সময় দেখতাম আমার রিকশার পেছনে সাইকেলে করে কেউ আসছে। ওরা কিছু বলত না, বাড়ি পর্যন্ত এসে চলে যেত। ওরা ছিল পার্টির কর্মী। দেখত পথে কোনো বিপদ হয় কিনা আর এখনকার ছাত্ররাজনীতি তো তোমরা সাংবাদিকরা দেখোই। প্রতিদিন খবরে আসে রাজনীতির কথা, ছাত্ররাজনীতির কথা। তোমরাই তো লেখো।

সাহিত্যে ধর্ম নিয়ে কিছু বলুন।

যারা ধর্ম নিয়ে বেফাঁস কথাবার্তা বলে বা লেখে, সেগুলো বর্জন করা উচিত। কারণ ধর্ম এমন একটি বিষয়, যেটা একজন মানুষের পবিত্র বিশ্বাস, এটা সে তার বুকে ধারণ করে, মাথায় ধারণ করে। আমার অধিকার নেই তাকে সেই জায়গায় আঘাত করা। তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারে আমি একটি কথা বলতে চাই। তুমি নারীবাদী ইস্যুতে অনেক কথা বলো, পুরুষতান্ত্রিক ঘরানার কথা বলো, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলো, ছেলেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য লেখো, তবু এভাবে আক্রমণ করে কিছু বলো না।

ভাষা আন্দোলন নিয়ে আপনার লেখা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

হ্যাঁ। তখন তো আমার পাঁচ-ছয় বছর বয়স। বগুড়ার একটা গ্রামে বাস করতাম। আমি মনে করেছি, আমাদের ঐতিহাসিক উপকরণগুলো কী? ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে হারানো- এগুলোই তো। প্রজন্মকে দু-একটা গল্প দিয়ে সব জানানো যাবে না। তাই অনেক ঘেঁটেঘুঁটে কাজগুলো করেছি। ‘যাপিত জীবন’ ও ‘মীর আজীমের দুর্দিন’ নামে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা আমার বই।

আপনার জীবনে প্রেমের কথা বলুন।

এগুলো তো ছিলই। অনেকেই আমার প্রেমে পড়েছে। আমাকে চিঠি দিয়েছে কতজনে। আমি তো সবসময় পড়াশোনা-লেখালেখি নিয়ে পড়ে থাকতাম।  আমি তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। তো দলের একজন আমাকে একদিন একটি চিঠি দিয়েছিল। আমি চিঠিটা ছিঁড়ে তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলাম।

কখনও ইচ্ছে হয়নি কারও প্রেমে পড়বেন?

ইচ্ছে ছিল না। কখনও ভাবিনি কারও প্রেমে পড়ব। কিন্তু চাকরিজীবনে একদিন আমার মেয়ে ফারিয়া লারা যখন ছোট, একদিন আনোয়ারের (আমার এক সহকর্মী) কোলে উঠে তাকে বাবা বলে ডাকল। আনোয়ার কি যে খুশি হলো! আনোয়ার তার পর থেকে লারাকে মেয়ের মত দেখত, আদর করত। আমার মেয়েটাকে সে নিজের মেয়ে ভাবত। সেজন্য সে আমার প্রতি ঝুঁকে গেল। তার পরের বিষয়টা তো সবাই জানে। আজও আমরা একসঙ্গে। ফারিয়া লারা যখন দুর্ঘটনায় মারা যায়, তখন আনোয়ার যেন পাগল হয়ে গিয়েছিল। নিজের সন্তান না হলেও অন্যের সন্তানের প্রতি আনোয়ারের যে কি টান, তা আমি আনোয়ারের কাছ থেকে দেখেছি, জেনেছি। সন্তানের টানে আমি আনোয়ারের প্রেমে সাড়া দিয়েছিলাম।

মানুষের জন্য কিছু করার আপনার যে তীব্র আকাঙ্খা, এর অনুপ্রেরণা কার কাছ থেকে পেয়েছিলেন?

আমি ছোটবেলায় বাবার কাছে কাছে থাকতাম। কার সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বললে আমি বাবার পাশেই বসে থাকতাম। সন্ধ্যাবেলায় অফিস শেষে বাড়ির সামনে হারিকেন জ্বালিয়ে আব্বাকে ঘিরে বসত গ্রামবাসী। অনেকেই নিজেদের বিভিন্ন সমস্যার কথা নিয়েও আব্বার কাছে আসতেন। একদিন এক বুড়ো মা এসে আব্বাকে বললেন, ‘আমার ছেলে আমাকে ভাত দেয় না।’ বাবা রেগে গিয়ে ছেলেকে খবর পাঠিয়ে আনালেন। ছেলে আসার পর কয়েকজনকে বললেন, ‘ওর পেটে একটি কাঁঠাল বেঁধে দিয়ে ঘোরাও পুরো গ্রামে। দেখুক ভার বইতে কী কষ্ট।’ এই যে মানুষে-মানুষে সম্পর্ক, মানুষের সংকট, এগুলো আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এগুলো আমাকে ভাবিয়েছে, শিখিয়েছে।

কিন্তু আমি যখন বড় হয়ে মার্কস-অ্যাঙ্গেলসের বই পড়লাম, তখন আমার মনে হয়েছে, নাহ বাবা কাজটা ঠিক করেননি। ওই ছেলেটি বলেছিল, ‘আমারই তো ভাত জোটে না, আমি মাকে কী করে চালাব।’ ওর একটা বাচ্চা ছিল। ওর মনে হয়েছে, মায়ের চেয়ে আমার এ শিশুটিকে খাওয়ানো বেশি জরুরি। এ সম্পর্কগুলো আমি বাবার পায়ের কাছে বসে আবিষ্কার করতে পেরেছি। আমাদের বাড়ির পাশে এক মাঝি ছিল। মা যখন বিভিন্ন উৎসবে সেমাই রান্না করত। খিচুড়ি রান্না করত, আমি কলা পাতায় পেঁচিয়ে ওই মাঝিকে দিতাম। মাঝি খুব করে খেত আর কি যে খুশি হতো! এই যে অল্পতে খুশি, এটা আমি মাঝি থেকে জেনেছি। ওই যে ছোটবেলার সঞ্চয়। আমার সোনালি শৈশব থেকে পাওয়া মানুষের গল্প থেকে মনে হয়েছে আমার লিখতে হবে। না লিখতে পারলে আমি বাঁচব না। আমি মানুষের জন্য কিছু করবই। আমার কাজের আমার লেখার যত প্রেরণা, তা প্রথমে আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলাম।

নদীর প্রতি আপনার অগাধ ভালোবাসা। কিন্তু বেশির ভাগ নদীই তো মরে যাচ্ছে!

মানুষের দস্যিপনার কারণে আজ নদীগুলোর এ অবস্থা। বাংলাদেশের নদীকে কেন্দ্র করে আমি ‘নদীটির ঘুম ভেঙেছে’ একটি উপন্যাস লিখেছি। এ উপন্যাসের মূল ঘটনা আমি দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার নদী ফেটে পানি ওঠার মাধ্যমে দেখেছি। আমি বলব, বর্তমান সরকারকে আরও দ্রুত নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কাজ করা উচিত। নদী ছাড়া কিন্তু বাংলাদেশ বিপদে পড়ে যাবে, যার প্রমাণ মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে।

‘আণবিক আঁধার’-এ নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন। পরকীয়া ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলতেন যদি...

একজন নারী বা পুরুষ যদি সংসারের ভেতরে থাকে, তাহলে থার্ড সম্পর্কটাকে আপনি পরকীয়া বলতে পারেন। শুধু চোখের ভালো লাগা থেকে যদি নোংরামি করতে যান, তাহলে পরকীয়া হবে। আমি এ উপন্যাসটিতে ‘প্রশান্তি’ চরিত্রটি তৈরি করেছি, একজন অটিস্টিক সন্তানের মাকে কী করে বেঁচে থাকতে হয়, মানসিক অশান্তি থেকে কী করে স্বপ্ন দেখতে হয়, সেটা বোঝানোর জন্য।

প্রত্যেকটা মানুষের একটা ফ্যান্টাসি থাকে। যেটা তাকে মানসিকভাবে বাঁচিয়ে রাখে। মানুষকে ভালো থাকতে হবে, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে হবে। তার স্বামী অটিস্টিক সন্তানের কারণে তাকে প্রতিনিয়ত দোষারোপ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা থেকে কীভাবে একজন নারী জীবনকে মোচড় দিয়ে ফিরিয়ে নিতে পারে, সেটা দেখানোর জন্য। যেখানে সে বঞ্চিত হচ্ছে। আপনাকে জীবনের শিল্পবোধটা বুঝতে হবে। জীবনের যে বিচিত্র রূপ, যে ভালো লাগার জায়গা, সেখানে যদি অন্য কেউ হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে কেন সে গ্রহণ করবে না!

আর কী কী বিষয় নিয়ে বই লেখার ইচ্ছে আপনার?

বইমেলার জন্য ‘সাত ই মার্চের বিকাল’ নামে একটি বই লিখছি। আরও অনেক কাজ করে যেতে চাই। আমি সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ফেলেছি। রোহিঙ্গা ইস্যু, কাপ্তাইয়ের চাকমাদের নিয়ে একটি উপন্যাস লিখব, হরিজন সম্প্রদায় নিয়ে লিখব- এ রকম আরও কিছু বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।

মন খারাপের কথা বলুন।

তেমন কোনো বিষয় নেই। জীবনে অনেক সম্মান পেয়েছি। ১৯৯১ সালে আমার ‘নিরন্তন ঘণ্টা ধ্বনি’ যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে কম্পারেটিভ লিটারেচারে পাঠ্য হয়েছে। রবীন্দ্রভারতী ডিলিট দিল। ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটিতে আমার ‘যাপিত জীবন’ পাঠ্য। আসাম ইউনিভার্সিটিতে আমার লেখায় এমফিল করেছে, যখন তপতী ভট্টাচার্য ভিসি ছিলেন। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতেও আমার লেখা পাঠ্যবই আছে। এগুলো যখন দেখি তখন মনে হয়, আমার দেশের চেয়ে অন্যরাই আমাকে বেশি সম্মানিত করেছে।

তরুণদের লেখা পড়েন?

অবশ্যই তরুণদের লেখা পড়ি। সময় পেলেই পড়ি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীগুলো পড়ি। সেখানে তাদের লেখা থাকে। বুক-রিভিউ পড়ে তাদের লেখা সম্পর্কে জানা যায়। খোঁজ করে সেসব বই পড়ার চেষ্টা করি। তাদের  চিন্তাচেতনার প্রকাশ ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে। পঞ্চাশের দশকে যেভাবে এক দল লেখক দাঁড়িয়েছে, এভাবে তারাও দাঁড়াবে। ধীরে ধীরে তাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। মন-মেধা পরিণত হবে। চলমান জীবনকে তারাই এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তরুণ পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

আমি তরুণদের বলব, তোমরা শুধু একটা দিনকে কেন্দ্র করে ভাষার দিনটা পালন করো না। রাস্তায় যখন একটা ভুল বানানে সাইনবোর্ড দেখি, খুব খারাপ লাগে। সেই তরুণ সমাজ সবকিছু তোলপাড় করে সেই ভুল বানানটাকে ঠিক করি না কেন? সবাই এক হয়ে তার প্রতিবাদ করি না কেন? বাধ্য করি না কেন তাদের ভুল বানানটা ঠিক করতে!

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫