শিল্পী আমিনুল ইসলাম: আধুনিক ধারার চিত্রচর্চার পথিকৃৎ

শিশির মল্লিক
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫২

শিল্পী আমিনুল ইসলাম। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা শিক্ষার প্রথম ব্যাচের ছাত্র শিল্পী আমিনুল ইসলাম। চিত্রকলায় শিক্ষা নেওয়ার মানসে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন। কিন্তু শিল্পী জয়নুলের অনুরোধে তিনি ঢাকায় ফিরে এসে ঢাকা চারুকলায় ভর্তি হন। প্রথম ব্যাচের যে কয়জন শিক্ষার্থী শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তারা হলেন শিল্পী হামিদুর রহমান, শিল্পী ইমদাদ হোসেন, শিল্পী ইসমাইল ও শিল্পী আবদুল কাদের। তারা তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৫৩ সালে তিনি প্রথম বিভাগে স্নাতক সম্মান লাভ করেন এবং একই বছর ইতালি সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিন বছরের জন্য ফ্লোরেন্সের আকাদেমি দেল বেল্লে আর্তে উচ্চশিক্ষার জন্য যান। ইতালি থেকে ১৯৫৬ সালে ফিরে এসে ঢাকা চারুকলায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ’৭৮ সালে অধ্যক্ষ হন। ’৮৩ সালে অবসর নেন।
পেশাগত জীবনের পাশাপাশি শিল্পচর্চায় নিরীক্ষা ধর্মী কাজে তিনি মনোযোগী হন। কৈশোরেই তিনি আধুনিক চিত্রকলার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন তার প্রভাব তার মাঝে ছিল, সেই সঙ্গে ফ্লোরেন্সে পাঠ নিতে গিয়ে আরো ঘনিষ্ঠভাবে ইউরোপীয় শিল্পচর্চায় তিনি আকৃষ্ট হন। তার সঙ্গে আমাদের দেশীয় চর্চা ও বাস্তবতায় তিনি খুশি ছিলেন না। তাই শুরুটা বাস্তববাদিতা দিয়ে শুরু হলেও তিনি ধীরে ধীরে ফর্মকে ভাঙতে থাকেন। বাস্তবতার গল্প এবং চরিত্রগুলো তখন শিল্পের উপাদান হিসেবে রূপ পেতে থাকে। জ্যামিতিক ফর্ম ও রেখার বিভাজনে দ্বিমাত্রিক আঙ্গিক ও ছন্দময়তা নিয়ে উদ্ভাসিত হতে থাকে একেকটি ছবি। কখনো কিউবিক স্বাচ্ছন্দ্য কখনো পুরোপুরি বিমূর্ত বাস্তবতায় তার ক্যানভাস মূর্ত হয়ে উঠতে থাকে।
আধুনিক ধারার শিল্পচর্চায় শিল্পী আমিনুল ইসলামকে পথিকৃৎ বলে গণ্য করা হয়। উপস্থাপন কৌশল ও রঙের পরিমিতি বোধ এবং বস্তুকে আইডিয়ালিস্টিকভাবে তুলে ধরার প্রচেষ্টার মধ্যে এই মানস প্রকৃতি দর্শক ও সমঝদারদের চোখে ধরা দেয়।
তার আঁকা বিভিন্ন ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কিউ’, ‘বর্ষা’, ‘জেলের স্বপ্ন’, ‘দুটি মুখ’, ‘শিকার’, ‘ফ্লোরেন্স’, ‘নারী ও কবুতর’, ‘নবান্ন’, ‘দুর্গা ও শিব’, ‘ইন বন্ডেজ’, ‘পাখি নিয়ে মেয়ের খেলা’ ইত্যাদি। তিনি তার শিল্পকর্ম চিত্রকলায় বিশেষ অবদানের জন্য শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার-১৯৭৬, একুশে পদক-১৯৮১, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা-১৯৮৫, স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৮৮-সহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের ৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।