Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

আহমদ শরীফ ও তার সাহিত্য ভাবনা

Icon

সাইফুজ্জামান

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৭

আহমদ শরীফ ও তার সাহিত্য ভাবনা

লেখক আহমদ শরীফ। ছবি: সংগৃহীত

আহমদ শরীফ  ছিলেন একজন বিরলপ্রজ লেখক। তার সাহিত্যে পাণ্ডিত্য, মুক্তবুদ্ধি চিন্তা এবং অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদের প্রতিফলন ঘটেছে। যুক্তিবাদী দর্শন, রাজনীতি ও গভীর জীবনবোধ আশ্রিত তার রচনায় মুক্তপথের দিকনির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ গবেষণায় তিনি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। মধ্যযুগ সাহিত্যের বিশাল ভুবনে যে বিচিত্রতা ও গভীরতা রয়েছে তা ড. আহমদ শরীফ উনিশ শতকের বাঙালি শিক্ষিত সমাজের দৃষ্টিগোচর করেন। প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ থেকে তিনি তার গবেষণার রসদ সংগ্রহ করেছেন। 

তার পিতৃব্য আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ উপহৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০০ পুঁথির মধ্য থেকে তিনি তার গবেষণার রসদ সংগ্রহ করেছেন। তিনি পুঁথির শব্দ শনাক্ত করেও সঠিক অর্থ  খুঁজে পুঁথির ব্যাখ্যা, টিকা, ভাষ্য নির্ণয় করেছেন। আহমদ শরীফ সম্পাদিত প্রথম পুঁথিগ্রন্থ বাহরাম খানের লাইলী মজনু কাব্য (১৯৫৭), বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত। আহমদ শরীফ সম্পাদিত পুঁথি সাহিত্যের মধ্যে স্মরণযোগ্য আলাউলের তোহফা (১৯৫৮), সিকান্দারনামা (১৯৭৭), মোহাম্মদ খানের সদ্যকলি বিবাদ সংবাদ (১৯৫৯), মুহম্মদ কবিরের মধুমালতী (১৯৫৮), রসূল চরিত (১৯৭৮)। ড. আহমদ শরীফ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের ঈমানা চিহ্নিত করেছেন। সত্যকে আবিষ্কার ও কর্মে উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়াসী ছিলেন ড. আহমদ শরীফ। কর্মের মাধ্যমে মানুষ বেঁচে থাকে, বাঁচার শক্তি ও উপাদান আহরণ করে। এ বিষয়টি তিনি সঞ্চালিত করেছেন পাঠকের মধ্যে। বাঁচার লড়াই ও মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষকে তিনি গ্রথিত করেছেন। তাঁর রচনার সিংহভাগ দেশচিন্তা জাতিসত্তার স্বকীয় সীমানা চিহ্নিত। উনিশ ও বিশ শতকের সাহিত্যিকদের সাহিত্য ভাবনা দর্শন ও ইতিহাস কেন্দ্র করেও বাংলা সাহিত্যের অর্জন ও উপলব্ধি ধারণ করেও আহমদ শরীফ অগ্রসর হয়েছেন। 

সাধারণ মানুষ, সংগ্রামী উপাখ্যান ও বাস্তবতার নিরিখে মানুষের কর্মমুখর সৃজনী অংশগ্রহণকে তিনি উদ্দীপ্ত করতে চেয়েছেন। তিনি ছিলেন অটল হিমালয়ের মতো। আহমদ শরীফ তাই আজও নতুন প্রজন্মের কাছে এক প্রেরণার উৎস। বাংলা, বাঙালি ও বাঙালিত্ব তার ভাবনার প্রধান অংশ ছিল। বক্তব্যের দৃঢ়তা তাকে যুক্তিবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রগতি ও প্রতিক্রিয়ার ভেতরকার সম্পর্কে তিনি উপস্থাপন করেছেন। তিনি প্রগতির সারথি ছিলেন। অবস্থান, বক্তব্য ও জীবনযাপনে দ্বৈততা তার ছিল না। দেশাত্মবোধ, ঐতিহ্যপ্রীতি আর সত্য উচ্চারণে আহমদ শরীফ ছিলেন অদ্বিতীয়। একজন নিঃস্বার্থ ও নির্ভীক বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি সমাজের অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করেন। অন্যায় ও গণবিরোধী কাজের জন্য তিনি যেকোনো সরকারেরই তীব্র সমালোচনা করতেন। আজীবন তিনি মানবতাবাদী, দেশহিতৈষী ও প্রগতিপন্থি বিভিন্ন সংঘ, সমিতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আহমদ শরীফ ছিলেন একটি সফল কর্মময় জীবনের অধিকারী। তার গবেষণাব্রত, লেখার জ্ঞানগত ও সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং তাঁর দেশহিতৈষিণী চিন্তা তাঁকে আমৃত্যু সক্রিয় রেখেছিল। ১৯৯৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তার জীবনাবসান ঘটে, কিন্তু তার আগেই তিনি তার মরদেহ উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য। 

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫