Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

জীবনানন্দের জন্ম কোথায়

Icon

আমীন আল রশীদ

প্রকাশ: ২০ মে ২০২০, ১১:৪৫

জীবনানন্দের জন্ম কোথায়

কবি জীবনানন্দ দাশ। ছবি: উত্তরকাল।

জীবনানন্দের জন্ম কি ধানসিঁড়ি নদীর পাড়ে, যেখানে আসতে চেয়েছিলেন মৃত্যুর পর শঙ্খচিল শালিকের বেশে? নাকি সেই জলসিঁড়ি নদীটির পাশে, যেখানে বিশীর্ণ বটের নিচে শুয়ে থাকতে চেয়েছিলেন কোনোদিন আর জাগিবেন না বলে। জলসিঁড়ি কোথায়? সেটা কি বরিশাল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলারই অন্য নাম?১

তাঁর জন্মের তারিখটাই বা কত? ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নাকি ১৮? সাল কি ১৮৯৯ নাকি তাঁর স্ত্রী লাবণ্যর বর্ণনানুযায়ী ১৮৯৮? জন্মের ১২১ এবং মৃত্যুর ৬৬ বছর পরেও এ নিয়ে তর্কের হেতুটাই বা কী? কেন জীবনানন্দের জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান নিয়ে আমাদের কথা বলতে হয়?

দখিনের বরিশাল ছিল তৎকালীন পূর্ববাংলার একটি মহকুমা শহর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে ছিমছাম মফস্বল শহরে বাস করতেন বরিশাল কালেক্টরেটের কর্মচারী সর্বানন্দ দাশ। পদ্মার (কীর্তিনাশা) ভাঙনে তাদের ভিটেমাটি বিলীন হলে মুন্সীগঞ্জের গাউপাড়া গ্রাম থেকে বরিশালে এসে বসবাস শুরু করেন। শিক্ষাবিস্তার ও সামাজিক কর্মকান্ডে সর্বানন্দ এতটাই খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন যে, বরিশাল মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে তিনি খোদ অশ্বিনীকুমার দত্তকেও পরাজিত করেন।২ বরিশাল শহরে সর্বানন্দ ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব।৩

বরিশাল শহরের যে বাড়িতে সর্বানন্দ থাকতেন, সেটি ছিল অশ্বিনীকুমার দত্তের বাড়ির উল্টোদিকেই। এখন অশ্বিনীকুমার দত্তের বাড়িটি বরিশাল কলেজ। ১৮৯৪ সালে বিয়ে হয় সত্যানন্দ দাশও কুসুমকুমারী দাশের। বিয়ের ৫ বছর পরে ১৮৯৯ সালের এই বাড়িতেই জন্ম নেন তাদের প্রথম সন্তান জীবনানন্দ দাশ। সর্বানন্দ এই বাড়িতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও স্থাপন করেছিলেন। তবে সর্বানন্দের পুত্ররা বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

এরপর তারা আলেকান্দা এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে কিছুদিন থাকেন। সর্বানন্দর বন্ধু জগচ্চন্দ্র দাশের পত্নী মুক্তকেশী গুপ্তার বসতবাড়ির একাংশে অনুমতিসূত্রে জীবনানন্দের বাবা সত্যানন্দ দাশ, কাকা হরিচরণ দাশসহ অন্য কাকারা মিলে একটি ঘর নির্মাণ করেন। তবে মালিকানা বদল নিয়ে সে বাড়িটি নিয়েও বিপত্তি বাঁধে। ফলে সম্পূর্ণ নিজ মালিকানাধীন একটি বাড়ির জন্য হরিচরণ ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। মূলত তারই একাগ্র অন্বেষণ ও উৎসাহে অন্য ভাইদের সহায়তায় শহরের বগুড়া রোডে ১৯০৭ সালে একটি ঘর নির্মাণ করা হয় এবং তাদের পিতা সর্বানন্দের নামানুসারে বাড়িটির নাম রাখা হয় ‘সর্বানন্দ ভবন’।৪

১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি (বঙ্গাব্দ ৬ ফাল্গুন ১৩০৫) শুক্রবার জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ দাশগুপ্ত (পরবর্তীকালে গুপ্ত উপাধি ছেড়ে শুধুই দাশ)। তারিখটি ১৭ নাকি ১৮ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ে একসময় বিভ্রান্তি ছিল। কিন্তু সেদিন যে শুক্রবার ছিল, সে বিষয়ে কবি, তার স্বজন এবং পরবর্তীকালে গবেষকরাও একমত হয়েছেন। ১৮৯৯ সালের ক্যালেন্ডারে দেখা যাচ্ছে, ১৭ ফেব্রুয়ারি ছিল শুক্রবার। সুতরাং জীবনানন্দের জন্ম যে ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, এ নিয়ে আর কোনো সংশয় থাকার কথা নয়। জীবনানন্দের জীবনীকার প্রভাতকুমার দাসও নানাভাবে এই তারিখটির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।৫

যদিও তার জন্ম সাল নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি ছিল। কবির মৃত্যুর ৯ বছর পর বিষ্ণু দে সম্পাদিত ‘একালের কবিতা’র সূচিপত্রে জীবনানন্দের জন্মসাল ১৮৯৯ লেখা হলেও ভূমিকায় সম্পাদক লিখেছিলেন, তার স্ত্রী লাবণ্য দাশ জানিয়েছিলেন জীবনানন্দের জন্ম ১৮৯৮ সালে। কিন্তু পরে কোথাও এই তারিখটি ব্যবহৃত হয়নি। হতে পারে লাবণ্য তারিখটি ভুল বলেছিলেন।

পরবর্তীকালে ১৮৯৯ সালের ব্যাপারে গবেষকরাও একমত হয়েছেন। যে কারণে ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর রাতে কলকাতার যে শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে তিনি মারা যান, সেখানে পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করে, সেখানেও জীবনানন্দের জন্ম তারিখ ‘১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯’ উল্লেখ রয়েছে।৬

তবে জন্ম তারিখ নিয়ে এই ১৭-১৮ এবং ১৮৯৯ ও ৯৮-এর মধ্যে বিভ্রান্তি দূর হলেও তাঁর জন্মস্থান নিয়ে এখনো অনেক সময় অনেকে প্রশ্ন তোলেন। সেই প্রশ্ন কতটা যৌক্তিক বা ইতিহাসের বিচারে কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটি পরীক্ষা করার অবকাশ রয়েছে।

জীবনানন্দ নিজেই ১৯৪৬ সালের ২ জুলাই বরিশালের সর্বানন্দ ভবন থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে প্রভাকর সেনকে লিখেছিলেন- ‘আমার জন্ম হয়েছিল বরিশালে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফাল্গুন মাসে।’৭ জীবনানন্দের ছোট ভাই অশোকানন্দ দাশের লেখায়ও বিষয়টি স্পষ্ট যে, ১৩০৫ সালের ৬ ফাল্গুন জীবনানন্দ দাশ বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।৮ 

প্রভাতকুমার দাস রচিত জীবনানন্দের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী ‘জীবনানন্দ দাশ’-এ জীবনানন্দের জন্মস্থান উল্লেখ করা হয়েছে বরিশাল শহর। শুধু তাই নয়, কীর্তনখোলা বিধৌত বরিশাল শহরের নৈসর্গিক পরিবেশের বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি। প্রভাতকুমার লিখেছেন, ‘খালবিল নদীনালা বন বনানীঘেরা প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত জেলা শহরটির সঙ্গে দূর-দূরান্তের গ্রামগুলোর যোগাযোগ আঁকাবাঁকা পায়ে চলার পথ দিয়ে গাঁথা। গাঁ-গৃহস্থবাড়ি গাছপালা শস্য ফসলঘেরা মনোরম পটে লেখা মফস্বল শহরে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ (বঙ্গাব্দ ১৩০৫ ফাল্গুন ৬) শুক্রবার জন্মগ্রহণ করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ।’৯ 

আবু হাসান শাহরিয়ার সম্পাদিত ‘জীবনানন্দ দাশ: মূল্যায়ন ও পাঠোদ্ধার’ বইয়ে অশোকাননন্দ দাশের ‘জীবনানন্দের প্রাকৃতিক ও পারিবারিক পরিবেশ’ শিরোনামে যে নিবন্ধ ছাপা হয়, সেখানেও ওই একই তথ্য রয়েছে- জীবনানন্দ দাশ বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। জীবনানন্দের ঘনিষ্ঠ সহচর সঞ্জয় ভট্টাচার্যও সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ১৮৯৯ সালের ৬ ফাল্গুন, ১৩০৫ পূর্ববঙ্গের বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ দাশ।১০

জীবনানন্দ বিষয়ে মার্কিন গবেষক ক্লিনটন বি সিলির গবেষণা গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বরিশালের স্কুলশিক্ষক ও ব্রাহ্ম যাজক সত্যানন্দ দাশ ও তাঁর স্ত্রী সাময়িক কবি ও পুরোপুরি গৃহিণী কুসুমকুমারীর দাশের ঘরে বাংলা ১৩০৫ সনের ফাল্গুন মাসের ৬ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ দাশ।’১১

আবদুল মান্নান সৈয়দ এবং আবুল হাসনাত সম্পাদিত জীবনানন্দ দাশ জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থে তার জন্মস্থান হিসেবে বরিশালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাইরে আরও যেসব লেখক জীবনানন্দের জন্মবৃত্তান্ত লিখেছেন, তারাও জন্মস্থান হিসেবে বরিশালের কথা উল্লেখ করেছেন।

ড. আকবর আলি খান লিখেছেন, ‘জীবনানন্দের বাবা সত্যানন্দ দাশ এবং মা কুসুমকুমারী দাশ উভয়ই বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের পৈতৃক নিবাস বরিশালের বিখ্যাত গৈলা (আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়ন) গ্রামে। জীবনানন্দের মাতামহ চন্দ্রনাথ দাশ বরিশাল শহরের কালেক্টরিতে কাজ করতেন। ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করার পর তিনি পৈতৃক গ্রামে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দেন। তাই পিতামহ বা মাতামহের গ্রামে যাওয়া-আসার সুযোগ জীবনানন্দের ছিল না। গ্রামের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল অতি ক্ষীণ।’১২

তারপরও কেন জন্মস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি? ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী সংবাদপত্র প্রথম আলোয় ‘জীবনানন্দ দাশের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে একটি খবরে লেখা হয়- “ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বামনকাঠি গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধানসিঁড়ি নদী। নদীতীরের গ্রামটিতে একটি পরিত্যক্ত ভিটায় রয়েছে কিছু গাছপালা। পুকুর থাকলেও ঘাট ভাঙাচোরা। স্থানীয়ভাবে এটি ‘দাশের ভিটা’ নামে পরিচিত। এটাই রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের পৈতৃক ভিটা।”

এই সংবাদে আরও লেখা হয়, ‘জীবনানন্দ দাশের শৈশব-কৈশোর এমনকি যৌবনের অনেক সময় পার হয়েছে বামনকাঠি গ্রামে। তাঁর পৈতৃক ভিটা দেখতে আসেন দেশ-বিদেশের পর্যটক। তবে এই বিরান ভিটা দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় থাকে না।’

বামনকাঠি এলাকার রমজান আলী (৭০) নামে একজনের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘৩০ বছর আগেও দাশের বাড়িতে অধি দাশ ও ভোলা দাশ নামে কবির দুই জ্ঞাতি সপরিবার বসবাস করতেন। তখন একটি ডাকাতির ঘটনায় দুই ডাকাত গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার পর তাঁরা পুলিশি হয়রানির ভয়ে ঘরবাড়ি বিক্রি করে ভারতে চলে যান।এরপর থেকে ছাড়া ভিটায় পরিণত হয়েছে কবির জন্মস্থান।’

২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো এবং দেশের প্রাচীনতম সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাকেও ‘জীবনানন্দের জন্ম ঝালকাঠির বামনকাঠি গ্রামে’ বলে ছাপা হয়। ওই সংবাদ ও নিবন্ধগুলোর লেখকদের দাবি, ‘জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বামনকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের ১০ বছর পর বাবার শিক্ষকতার সুবাদে বরিশালে বসবাস শুরু করে কবি পরিবার।’ ওই লেখায় কবির মা কুসুমকুমারীর জন্মস্থানও বামনকাঠি গ্রাম বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও কুসুমকুমারীর পৈতৃক নিবাস ছিল বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে।১৩

ঝালকাঠির সাহিত্য সংগঠন কবিতাচক্রের প্রকাশনা ‘সরণি’র ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংখ্যায় সোহরাব হোসেন নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ‘ধানসিঁড়ি নদী ও জীবনানন্দ দাশ’ শিরোনামে একটি লেখায় উল্লেখ করেন, ‘রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ধানসিঁড়ি পাশের গ্রাম বামনকাঠির দাশ পরিবারে। তার প্রপিতামহ মহেন্দ্র কুমার দাশগুপ্তর বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরের গাউপাড়া গ্রামে। পদ্মার ভাঙনে তার ছোট তালুকটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আর্থিক সংকটে পড়েন তিনি। মৃত্যুর পর তিনি তার তিন পুত্র সর্বানন্দ, নিত্যানন্দ ও প্রেমানন্দ দাশগুপ্ত পানসি করে ভাটির উদ্দেশে পাড়ি জমান।’

এই প্রবন্ধে স্পষ্টতই কয়েকটি ভুল দৃশ্যমান। যেমন জীবনানন্দের প্রপিতামহের নাম মহেন্দ্র দাশগুপ্ত নয়, বরং বলরাম দাশগুপ্ত। জীবনানন্দের প্রপিতামহের তিন ছেলের নামের ক্ষেত্রে সোহরাব হোসেন জীবনানন্দের বাবা সর্বানন্দের নাম সঠিক লিখলেও বাকি দু’জনের নাম ভুল লিখেছেন। বাকি দুই ছেলের নাম তারিনীচরণ দাশ ও ভোলানাথ দাশ।

এসব প্রাথমিক তথ্য জীবনানন্দের জীবনীগ্রন্থ এবং তার সম্পর্কে এতদিন যেসব বই ও গবেষণা বেরিয়েছে, সর্বত্রই রয়েছে। কিন্তু সোহরাব হোসেন যেসব তথ্য উল্লেখ করেছেন, তার কোনো উৎস বা সূত্রও তিনি উল্লেখ করেননি। এমনকি এই তথ্য যদি তার ব্যক্তিগত গবেষণার ফল হয়ে থাকে, সেটি তিনি কোন প্রক্রিয়ায় করলেন, তাও বলেননি। এখন কেউ একজন যদি লেখেন যে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল মুন্সীগঞ্জে, সেটি কেউ গ্রহণ করবেন?


কেন জীবনানন্দের জন্মস্থান এই ধানসিঁড়ি নদী তীরের গ্রাম বামনকাঠিতে উল্লেখের প্রবণতা? প্রথম কারণ ধানসিঁড়ি নদী। জীবনানন্দ মৃত্যুর পরে শঙ্খচিল শালিকের বেশে ধানসিঁড়ির তীরে ফিরে আসতে চেয়েছেন এবং তার কবিতায় অনেকবারই এই নদীর নাম এসেছে। বরিশালের পার্শ্ববর্তী জেলা শহর ঝালকাঠি শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলা এই নদীটি মূলত একটি খাল। ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই জলধারা খুব একটা আকর্ষণীয়ও নয়। বরং নদীর কোনো কোনো অংশ এখন মরাখাল। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে এই খালটি বড়সর পরিসরে একবার খনন করা হয়েছিল। তারপর বহু বছর এক অর্থে অবহেলায়ই ছিল। সম্প্রতি এটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু খননকাজে অনিয়মের অভিযোগও গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়।১৪

ছোটবেলায় আমরা এ কথা শুনতাম যে, জীবনানন্দের জন্ম এই নদী তীরবর্তী একটি গ্রামে। কিন্তু তার জীবনী গ্রন্থ এমনকি তার নিজের ও আত্মীয়-স্বজনের লেখায় কোথাও এটি উল্লেখ নেই যে, তার জন্ম ঝালকাঠিতে। এমনকি ঝালকাঠিতে তার কোনো আত্মীয়ের বাড়ি ছিল, এমন কোনো তথ্যও কোথাও পাওয়া যায় না। তাছাড়া ধানসিঁড়ি নদীর নাম তিনি একাধিক কবিতায় উল্লেখ করেছেন বা তিনি মৃত্যুর পর এই নদীটির তীরে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন বলেই যে তার জন্ম এই নদীর পাড়ে হতে হবে, এটিও কোনো যৌক্তিক কথা নয়। কেননা, তিনি আরও অসংখ্য নদীর নামই তার কবিতায় উল্লেখ করেছেন। ধানসিঁড়ি আসামেরও একটি নদীর নাম।১৫ তার অর্থ এই নয় যে, তিনি আসামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

ধারণা করা যায়, জীবনানন্দ বরিশাল শহর থেকে স্টিমারে খুলনা হয়ে কলকাতায় যেতেন। তখন এটিই ছিল বরিশাল-কলকাতার সহজ রুট। এই যাওয়া-আসার পথে তিনি ধানসিঁড়ির নাম জেনে থাকবেন এবং নামটি তার পছন্দ হয়েছিল বলে এটি কবিতায় ব্যবহার করেছেন। ক্লিনটন মনে করেন, ধানসিঁড়ি আসলে বাংলার প্রতীক। ১৯২৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য তিনি যেহেতু বাগেরহাটের পিসি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন, তাই বরিশাল থেকে এখানে যাওয়া-আসার পথে ধানসিঁড়ি নদীর সঙ্গে হয়তো তার পরিচয়।১৬
হেনরি বেভারেজ তার ‘বাকেরগঞ্জ জেলার ইতিহাস’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, একসময় এই নদীর নাম ছিল ধান্যশ্রী। মানুষের মুখে মুখে পরবর্তীকালে এটি ধানসিঁড়ি হয়ে যায়। একসময় নদীটি ধানসিদ্ধি নামেও পরিচিতি পায়।১৭


কারও কারও এরকম দ্বিধা হওয়া অসম্ভব নয় যে, জীবনানন্দ যখন জন্মেছেন তখন আলাদা করে ঝালকাঠি কোনো জেলা শহর ছিল না। বরং এটি ছিল বরিশালেরই অংশ। ফলে জীবনানন্দের জন্মস্থান হিসেবে বৃহত্তর অর্থে বরিশাল লেখা হলেও কার্যত তার জন্ম ঝালকাঠির বামনকাঠি গ্রামেই। কিন্তু এই যুক্তিও ধোপে টেকে না, যেখানে জীবনানন্দ নিজে এবং তার আপন ছোট ভাইও লিখেছেন তার জন্ম বরিশাল শহরে।

যারা দাবি করেন, জীবনানন্দের জন্মের ১০ বছর পরে বাবা সত্যানন্দের শিক্ষকতার সুবাদে তার পরিবার বরিশাল শহরে আসেন, সেই তথ্যও সঠিক নয় এ কারণে যে, সত্যানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলে শিক্ষকতা করেন জীবনানন্দের জন্মের অনেক আগে থেকেই এবং তার পিতামত সর্বানন্দের সময় থেকেই তারা বরিশাল শহরের বাসিন্দা।

তাছাড়া তখন বরিশাল শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে ঝালকাঠির বামনকাঠি গ্রামে যেতে কালিজিরা এবং গাবখান নামে দুটি নদী ও চ্যানেল পাড়ি দিতে হতো (পরবর্তীকালে সেতু হয়েছে), এ রকম যোগাযোগ ব্যবস্থায় সত্যানন্দের বরিশাল-ঝালকাঠি যাতায়াত করে শিক্ষকতা করা অসম্ভব ছিল। তাছাড়া সত্যানন্দের জীবনে এ রকম কোনো তথ্য জানা যায় না।

এ রকম কোনো তথ্যও জানা যায় না যে, সত্যানন্দ একা বরিশাল শহরে থাকতেন। দ্বিতীয়ত, যদি ধরে নেওয়া হয় যে, সত্যানন্দ এবং তার স্ত্রী কুসুমকুমারী দাশ বরিশাল শহরেই থাকতেন কিন্তু জীবনানন্দের জন্মের সময় কুসুমকুমারী বামনকাঠি গ্রামে তার কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন- সেক্ষেত্রে বামনকাঠি গ্রামে তার কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি থাকার কথা।

কিন্তু জীবনানন্দের জীবনীতে বা তার আত্মীয়-স্বজনের লেখায় এ রকম কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই। অর্থাৎ পিতৃ কিংবা মাতৃকুল- কোনো পক্ষের সঙ্গেই ঝালকাঠি শহর বা তৎকালীন এই মহকুমার সঙ্গে জীবনানন্দের পারিবারিক কোনো যোগাযোগ ছিল না। বছর কয়েক আগে ধানসিঁড়ি নদী ও বামনকাঠি এলাকায় একটি সড়কের নাম দেওয়া হয়েছে জীবনানন্দ সড়ক। তার নামে পৃথিবীর যে কোনো স্থানেই সড়ক হতে পারে। কিন্তু তাতে এটি প্রমাণিত হয় না যে, জীবনানন্দের জন্ম বরিশাল শহরের বাইরে অন্য কোথাও।

টিকা ও উৎস নির্দেশিকা
১. কীর্তনখোলা বরিশাল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী। কীর্তনখোলার আরেক নামই জলসিঁড়ি। জীবনানন্দ তার কবিতায় অসংখ্য নদীর নাম উল্লেখ করলেও, কোনো কোনো নদীর নাম একাধিকবার লিখলেও যে নদীর তীরে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই কীর্তনখোলার নাম তিনি লেখেননি।
ধারণা করা যায়, তিনি কীর্তনখোলাকেই ‘জলসিঁড়ি’ বলেছেন। তিনি যে নদীর নাম দিতে পছন্দ করতেন, তার প্রমাণ মেলে ‘নদী নক্ষত্র মানুষ’ কবিতায়-
‘এখানে জলের পাশে বসবে কি? জলঝিরি এ নদীর নাম
অপরূপ; আমি তবু ঝাউবনি বলি একে’
(জীবনানন্দ রচনাবলি, ঐতিহ্য, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৯)

ড. অশোক বিশ্বাস (বাংলাদেশের নদীকোষ, পৃষ্ঠা ১৬৫) লিখছেন, উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত কোথাও কীর্তনখোলা নামে কোনো নদীর উল্লেখ পাওয়া যায় না। ১৮৭০ সালে হেনরি বেভারেজ একে ‘বরিশাল নদী’ বলেছেন। ১৮০১ সালে বরিশাল শহরের পত্তন হলে নদীর তীরে হাটখোলায় কীর্তন গানের আসর বসত। বরিশাল চকবাজারে হিন্দু বণিকরা প্রথমে ব্যবসা শুরু করে। তাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কীর্তনখোলা বা কীর্তনের স্থানের নামেই পরে বরিশাল নদীর নাম হয় কীর্তনখোলা, যাকে জীবনানন্দ আদর করে লিখেছেন ‘জলসিঁড়ি’।

অথবা তার লেখার আগেও স্থানীয়দের কেউ কেউ একে ‘জলসিঁড়ি’ বলতেন। প্রসঙ্গত, ঝালকাঠি শহরের দক্ষিণ প্রান্ত ছুঁয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুগন্ধা নদী। এই নদীর পূর্বপ্রান্ত জলসিঁড়ি বা কীর্তনখোলায় মিশেছে। এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার। জন্মস্থান বরিশাল শহরের অদূরে ধানসিঁড়ি নদীর কথা জীবনানন্দের কবিতায় বারবার এলেও কীর্তনখোলা নদীর নাম কোথাও তিনি উল্লেখ করেননি-এটি একটি রহস্য বটে। 

২. প্রভাতকুমার দাস, জীবনানন্দ দাশ (তৃতীয় সংস্করণ), পৃষ্ঠা ২

৩. ব্রাহ্ম আন্দোলন: ডেভিড কফ তাঁর ‘দ্য ব্রাহ্মসমাজ অ্যান্ড দ্য শেপিং অব দ্য মডার্ন ইন্ডিয়ান মাইন্ড’ গ্রন্থে লিখেছেন ‘হিন্দু ধর্মাচার সম্পর্কে ইউরোপীয় মিশনারিদের সমালোচনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে উনিশ শতকের বিশের দশকের শেষদিকে কলকাতায় গঠিত হয় ব্রাহ্মসমাজ (নির্গুণ ব্রহ্মর নামের সঙ্গে সমাজ বা গোষ্ঠী যুক্ত করে বিশেষণমূলক এই নামকরণ)।

ব্রাহ্ম আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামমোহন রায় (১৭৭৪-১৮৮৩) চেয়েছিলেন হিন্দু ধর্মকে সেমেটিক আদলের একটি একেশ্বরবাদী ধর্মে রূপান্তরিত করতে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮২৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্মসমাজ।

ক্লিন্টন বি সিলি (অনন্য জীবনানন্দ, পৃষ্ঠা ২৩) লিখেছেন, ব্রাহ্ম মতাদর্শের বেশিরভাগ আচার হিন্দু ধর্মগ্রন্থের সূত্র সমর্থন করে, তবুও অনেক আচার খ্রিষ্টধর্মের মতো। তাত্ত্বিকভাবে ব্রাহ্মরা জাতভেদ স্বীকার করে না। যার প্রমাণ মেলে সর্বানন্দ দাশগুপ্তর সর্বানন্দ দাশ-এ পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে। সমসাময়িক হিন্দুত্ববাদের বহু দেব-দেবীর পরিবর্তে ব্রাহ্মরা বিশ্বাস করে উপনিষদের একক নিরাকার ঈশ্বরে। ব্রাহ্মসমাজে মূর্তিপূজা অশুভ হিসেবে পরিগণিত। ব্রাহ্মসমাজের নবোত্থানের যুগে (১৮৬০-১৮৭০) সর্বানন্দ পরিবারের হাত ধরেই বরিশালে ব্রাহ্মসমাজের নবজাগরণের উদ্ভব, বিকাশ ও গতি।

৪. প্রভাতকুমার, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫

৫. প্রভাতকুমার, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৬৫

৬. প্রভাতকুমার, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৬৫

৭. পত্রালাপ জীবনানন্দ দাশ, প্রভাতকুমার দাস সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১৫৭

৮. আমার দাদা জীবনানন্দ দাশ, হাওড়া গার্লস কলেজ পত্রিকা, জীবনানন্দ স্মৃতি সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৪ 

৯. প্রভাতকুমার দাস, জীবনানন্দ দাশ (প্রথম সংস্করণ), পৃষ্ঠা ১ ও ৮

১০. সঞ্জয় ভট্টাচার্য, কবি জীবনানন্দ দাশ, পৃষ্ঠা ১২৮

১১. ক্লিনটন বি সিলি, অনন্য জীবনানন্দ (ফারুক মঈন উদ্দীন অনূদিত), পৃষ্ঠা ২১

১২. আকবর আলি খান, চাবিকাঠির খোঁজে : নতুন আলোকে জীবনানন্দের বনলতা সেন, পৃষ্ঠা ৪৭

১৩. জীবনানন্দের মাতামহ চন্দ্রনাথ দাশ ছিলেন একজন গীতিকবি; এসেছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার গৈলা গ্রাম থেকে। তার গানের সংকলন ‘হাসির গান’ বইটিতে কবি চন্দ্রনাথ দাশের ছোট মেয়ে হেমন্ত কুমারী দেবী (জীবনানন্দের ছোট মাসী) ভূমিকায় লিখেছিলেন, “বরিশাল জিলার অন্তর্গত প্রসিদ্ধ গৈলাগ্রামে ভবদাস (বৈদ্য) বংশে ১৮৫৫ সনের জুলাই মাসে আমার পিতার জন্ম হয়। আমার স্বর্গীয় পিতামহ ভৈরবচন্দ্র দাস মহাশয় জমিদার সরকারে কাজ করিতেন। খুড়-পিতামহ খাজাঞ্চি ছিলেন। পিতামহ মধ্যবিত্ত গৃহস্থ ছিলেন। তার দুই পুত্র ও তিন কন্যা। পুত্ররা কন্যাদের অপেক্ষা বয়োঃজ্যেষ্ঠ ছিলেন। আমার পিতা কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন। পিতার অল্প বয়সেই পিতামহের দেহান্তর ঘটে। বাল্যকালে পিতা গ্রাম্য পাঠাগারে শিক্ষালাভ করেন। এই স্কুল হইতে তিনি ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ৪ বৎসরের জন্য মাসিক ৪ আনা করিয়া বৃত্তিলাভ করেন। তিনি গ্রাম হইতে ঢাকা যাইয়া উচ্চ ইংরেজি স্কুলে ভর্তি এবং সেখান হইতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সাংসারিক অস্বচ্ছলতার দরুণ তিনি আর বেশিদূর পড়াশোনা চালাইবার সুযোগ পান নাই। অনুমান ১৯০১ সালে বরিশাল আলেকান্দা নামক স্থানে ভূমি ক্রয় করিয়া আমাদের বাসভবন নির্মিত হইল। এ স্থানেও জ্যেষ্ঠতাত একখানা ‘যোগগৃহ’ নির্মাণ করেন।” 

এ দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থটি থেকে ওপরে উল্লিখিত তথ্যে এটি স্পষ্ট জানা যায় যে, জীবনানন্দের মাতৃকূলের কেউ কখনো ঝালকাঠিতে বসবাস করেননি। কুসুমকুমারির জন্মও যে বরিশালে তা জানা যাচ্ছে ভায়লেট হালদার ও তুহিন দাসের ‘জীবনানন্দ : হিম ডানার সংকলন’ গ্রন্থেও (পৃষ্ঠা-৯)।

১৪. ধানসিঁড়ি খননে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ, সমকাল, ১১ এপ্রিল ২০১৯

১৫. অসমীয়া ধনশিরি নদী হচ্ছে আসামের গোলাঘাট জেলা ও নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর জেলার মুখ্য নদী। এই নদীটি নাগাল্যান্ডের লাইসাং শৃঙ্গের থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৩৫২ কিলোমিটার। ধনশিরি নদী অসমের কার্বি আংলং জেলা ও নাগাল্যান্ডের সীমান্তে বয়ে যাওয়ার কারণে এর তীরস্থ অঞ্চলে বিভিন্ন জীব-জন্তু দেখতে পাওয়া যায়। একপাড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং অন্য পাড়ে ইন্টাঙ্কি রাষ্ট্রীয় উদ্যান। 

১৬. ক্লিনটন, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১২

১৭. ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এক সময়ে ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি নদীটির নাম ছিল ধান্যশ্রী। পরে স্থানীয় ভাষায় ধানসিদ্ধি হয়ে যায়। কিংবদন্তি রয়েছে, এই নদীর পাড়ে অবস্থিত গ্রামে (বর্তমানে ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন) ৪০টি ধান ভাঙার ঢেঁকি ছিল। আর এ নদীটি এতই প্রশস্ত ছিল যে, একপাড়ে বসে ধান সেদ্ধ করতে দিয়ে ওপারে যেতে যেতে ধান সেদ্ধ হয়ে যেত। তাই এর নাম হয় ধানসিদ্ধি।

কেউ কেউ বলেন, একসময় এর দুই তীরে প্রচুর বালাম ধান হতো। সেই ধান নদীতীরে সেদ্ধ ও চাল হয়ে চালান করা হতো বলে অনেকে একে ধানসিদ্ধি নদী বলতেন। আরও পরে নদীটির নাম হয় ধানসিঁড়ি। উল্লেখ্য, ইউনিয়ন এবং নদীটির নামের বানানে স-এর ওপর চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা হলেও জীবনানন্দ চন্দ্রবিন্দু দেননি। 

সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত জীবনানন্দের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত ছোট কাগজ বিভাব-এ উল্লেখ করেছেন, “জীবনানন্দের পূর্বপুরুষরা যখন বিক্রমপুর থেকে বরিশালে এসে বসতি স্থাপন করেন, তখন কাছেই ধান্যশ্রী নামে একটি নদী ছিল। পদ্মার মতো ব্যাপক কুলপ্লাবী না হলেও, খুব বড় বড় স্টিমার যাতায়াত করতো তখনকার ধান্যশ্রী নদী দিয়ে। পরে চর পড়ে এ নদীটির দুটি ধারা হয়ে যায়। একটির নাম সন্ধ্যা, অপরটির নাম সুগন্ধা। এ সুগন্ধাই বাঁক নিয়ে ভেতরে ঢুকে বর্তমানের ধানসিঁড়ি। ধান্যশ্রী নদী ধান-ন-শ্রী-ই সময়ের সঙ্গে রূপান্তরিত হতে হতে ‘ধানসিঁড়ি’ হওয়া অসম্ভব নয়।” 

লেখক: বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এবং জীবনানন্দ গবেষক।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫