আজ সকালে উঠেই মনে হলো, জীবন কেমন যেন এক রহস্যে ঢাকা। চারপাশে প্রকৃতির স্বাভাবিক মহিমা, যেন এক প্রাগৈতিহাসিক দিনের স্মৃতির মতো। নদী বয়ে চলেছে, আকাশ মেঘে ঢাকা। ধীরে ধীরে সূর্য উঠে আসে, এক অসম্ভব মৃদু আলোতে। সবকিছু যেন একে একে চেতনার গভীরতায় মিশে যায়। বাড়ির উঠোনে হাঁটার সময় আমি অনুভব করি, প্রকৃতি কেমন যেন এক নির্লিপ্ত স্থিরতায় ভরপুর। বাগানে ফুলের সুবাস, পাখির কিচিরমিচির, সব কিছু মিলে এক অপূর্ব সংগীতের মতো। সেই সংগীত যা শুনতে পারে কেবল মন, হৃদয়। কেমন যেন, সব কষ্ট, সব আনন্দ মিলেমিশে ঐকতান হয়। প্রকৃতির এই টান আমাকে নিজের অন্দরের দিকে টেনে নেয়।

আজ সকালে আমি অনুভব করি, এই জীবন কেমন যেন একটি পদ্মফুলের মতো। বাহ্যিকভাবে শক্ত, কিন্তু ভেতরে কোমল। নদীর ধারে বসে আমি ভাবি, জীবনের পথ কেমন যেন এক প্রান্তিক পথে চলে। সেখানে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হয়, কিন্তু তা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। সেই পথে পথিক হয়ে চলতে গিয়ে মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রকৃতির এই শান্তি ছাড়া আর কিছুই মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়। আমার মনে পড়ে সেই দিনগুলো, যখন আমি ছোট ছিলাম। তখন সূর্যের আলো ঠিক একইভাবে পড়ত, কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে ছিল না কোনো অস্থিরতা, কোনো প্রশ্ন। দিনগুলো যেন নিজে থেকেই কেটে যেত। আর আজ, সময়ের এই যাত্রা যেন কিছু না কিছু আক্ষেপ নিয়ে আসে। তবে সেই আক্ষেপের মধ্য দিয়েই আমি শিখি, প্রকৃতির সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে গভীর করতে। এমন সময়ে মনে হয়, প্রকৃতি যেন আমাদের কাছে এক জীবনের পাঠ। সেখানে হারানো স্বপ্ন, অভাব, সুখ সব মিলেমিশে একাকার হয়। কেবল প্রকৃতি তাকে উপলব্ধি করারক্ষক্ষমতা দেয়। এই পৃথিবীর গভীর রহস্যগুলো যেন আমাদের মাঝে মিশে থাকে, যেমন মেঘের ভেতরে থাকে বৃষ্টি, যেমন পাতার ভেতরে থাকে মাটির গন্ধ।

আজ আবারও ভাবি, জীবনটা কেমন যেন এক অনন্ত পথ। সেখানে চলতে চলতে এক দিন আমরা প্রকৃতির সঙ্গে মিলিত হব। যেখানে হবে না কোনো পার্থক্য, থাকবে না কোনো বিচ্ছেদ। সেই স্মৃতির দিনগুলোয় আমরা ফিরে যাব, শূন্য থেকে শুরু করব। সেখানেই প্রকৃতির গহিনতম চেতনা আমাদের পথ দেখাবে।