Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

সাহিত্য চেতনায় নববর্ষ

Icon

এস ডি সুব্রত

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৫

সাহিত্য চেতনায় নববর্ষ

প্রতীকী ছবি

পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ এ দেশের মানুষ ও সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে মিশে আছে প্রগাঢ় বন্ধনে। বাংলা নববর্ষ কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসব নয়, এটি একটি সর্বজনীন উৎসব। আমাদের প্রকৃতি ও সমাজ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং আমাদের জীবনাচার সব কিছুর সঙ্গেই নববর্ষের যোগ রয়েছে। 

নববর্ষ ব্যক্তির কাছে ব্যক্তিকে এবং ব্যক্তির কাছে সমষ্টিকে এনে মেলবন্ধন রচনা করেছে। বাংলা নববর্ষ সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার উৎসব। 

ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হক তার বাংলা নববর্ষ প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান পহেলা বৈশাখের একটি সর্বজনীনভাব পালন করা রীতি। হালখাতা নতুন বাংলা বছরের হিসাব পাকাপাকিভাবে টুকে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার এক আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ। বৈশাখী মেলা সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সর্বজনীন মিলনোৎসব। 

নববর্ষকে উৎসবমুখর করে তোলে বৈশাখী মেলা। বৈশাখ মাসের শুরু থেকে প্রায় সারা মাস ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেলা বসে। জমিদারি আমলে নববর্ষের আরো একটি সর্বজনীন অনুষ্ঠান ছিল ‘পুণ্যাহ’। ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জমিদার ও প্রজার মধ্যে দূরত্ব কমে আসত এবং প্রজারা আপ্যায়িত হতো জমিদার বাড়িতে। 

বর্তমান সময়ে এসেও  নগরজীবনে নগর সংস্কৃতির আদলে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপিত হয়। বাংলা সাহিত্যে নববর্ষের প্রভাব ব্যাপক। নববর্ষ নিয়ে যুগে যুগে রচিত হয়েছে অসংখ্য গল্প, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, নাটক ও উপন্যাস। কবি ও লেখকদের লেখায় সব সময় উঠে এসেছে নববর্ষ। 

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে নববর্ষের প্রভাব পাওয়া যায়। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের ‘কালকেতু উপাখ্যান’ অংশে ‘দেবীর পরিচয় প্রদান প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন- ‘অনল সমান পোড়ে বৈশাখের খরা’।

মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবি আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যেও আছে নববর্ষ সম্পর্কে লেখা। মঞ্চযুগের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য কবি ভারত চন্দ্রের কবিতায়ও গ্রীষ্মের উপস্থিতি আছে। গ্রীষ্মের প্রথম আকর্ষণ বৈশাখ। বৈশাখ মানেই নববর্ষ। এ বৈশাখ নিয়ে রচিত পঙক্তিমালা যুগে যুগে বাংলা কাব্য ভান্ডারকে বৈচিত্র্যময় করেছে। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতায়ও বৈশাখের  উল্লেখ পাওয়া যায়। 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র সেন, কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিহারীলাল চক্রবর্তী এ ধারাকে অব্যাহত রেখেছেন। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশাল কাব্য ভান্ডারে নানাভাবে নববর্ষের অনুভূতি বিকশিত হয়েছে। চৈতালী কাব্যের বহু কবিতায় রূপায়িত হয়েছে নববর্ষের পরিবেশ। ‘নিশি অবসান, ওই পুরাতন বর্ষ হয় গত/আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন/করিলাম নত’। 

কালবৈশাখী ঝড়ের প্রাবাল্যে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন- ‘ওই নূতনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখীর ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!’ কেবল সাহিত্য-সংস্কৃতিতে নয়, বাংলা নববর্ষের রূপ তার আচরিত অনুষ্ঠানগুলোতেই ধরা পড়ে। নববর্ষ আমাদের অতীত ঐতিহ্যকে জাগ্রত করে। বাংলা নববর্ষ আমাদের গৌরব। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫