শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ শিল্পী। তিনি মাটি, মা আর মানুষের অসাধারণ সব ছবি এঁকে গেছেন সারা জীবন। তিনি ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতা সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে চারুকলায় স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেন।

১৯৫১ সালে ঢাকায় এসে নওয়াবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে চারুকলার শিক্ষক হিসেবে পড়াতে শুরু করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে ঢাকা চারুকলায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে গিয়েছিলেন জাপানের টোকিওতে, উচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার জন্য। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে চিত্রকলা চর্চায় বিমূর্ত প্রকাশবাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি পান।

বিশেষত, এই বৈশিষ্ট্যটি দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে জাপান থেকে ফেরার পর। এর পূর্বে তিনি বাস্তবতা বা পারিপার্শ্বিক জগৎকে জ্যামিতিক অবয়বে উপস্থাপন করতেন। শিল্প সমালোচকদের দৃষ্টিতে তাঁর স্বকীয়তা ও মৌলিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ বিমূর্ত প্রকাশবাদের যে উত্থান মার্কিন মূলকে ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে ইউরোপীয় শিল্পীদের প্রভাবে ঘটে, তারই প্রতিফলন শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার সৃষ্টিতে আমরা দেখতে পাই ষাটের দশক থেকে মৃত্যুর আগ-অবধি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা তাদের দেখি বিষয় ভাবনা ও প্রকাশে বাস্তববাদিতার অনুষঙ্গ। কেউ কেউ বিমূর্ত প্রকাশবাদের চর্চাও করেছেন, তাও বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন বলা যাবে না পুরোপুরি। কিন্তু শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া পুরোপুরি বাস্তবতার বাইরে শুধু নান্দনিকতা সৃষ্টির প্রয়াসে আজীবন ধ্যানস্থ থেকেছেন।

সারফেসকে নানা বুনটের মায়াজালে আকর্ষিত করে তোলায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। পরিমিত রঙের ব্যবহার স্পেসকে নানা বিন্যাসে বিভাজিত করে এক ধরনের প্রশান্তির পরশ জাগিয়ে দেওয়ায় যেন তার শিল্প সৃষ্টির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। ২০০৮ সাল থেকে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। এই যশস্বী  শিল্পী ২০১১ সালের ৭ জুন শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার সৃষ্টির মাধুর্য, শান্তিকামী মানুষের মনে অবসাদ এনে দেবে যন্ত্রণাবিলুপ্তির।