
হাওরের নাম ডিঙ্গাপুতা।
হাওরের নাম ডিঙ্গাপুতা। হাওরের বুক ছিঁড়ে পাকা রাস্তা হচ্ছে। শুকনা মৌসুমে মোহনগঞ্জ থেকে সড়কপথে যেকোনো যানে করে বাড়ি যাই। ডিঙাপুতা হাওর পেরোলেই নিজেদের গ্রাম। জুতা পায়ে উঠান অব্দি পৌঁছানো যায় এখন। আহা, কি স্বস্তি! আসলেই কি এ উন্নয়নে স্বস্তি আসে?
ডিঙ্গাপুতা হাওরের কান্দা দিয়ে আঁকাবাঁকা পায়ে চলা পথ, কান্দা পেরোলে কখনো মোটা আইল দিয়ে ঘাসের ওপর হেঁটে যেতে যেতে ওপারে নুয়ে পড়া বিস্তীর্ণ আকাশ। আহা, মন উড়ে যেত মেঘের সঙ্গে কোনো অজানা সীমানায়। কোথাও উঁচা-নিচা কোথাও হাঁটু অব্দি গর্ত কাদা। বর্ষার পানি আসা শুরু হলে সেসব জায়গা আগে আগে ডুবত। কোনো কোনো বছর রাস্তার কাদা শুকাত না। লোকেরা বর্ষার নাও ভাসা পর্যন্ত হাওর বন্দি থাকত। কাদা শুকালে শক্ত এটেল মাটির রাস্তায় কখনো ধুলা উড়িয়ে কখনো ঠেলে টেনে বড়জোর রিকশায় চলাচল। কান্দায় গরু-ভেড়া-মহিষের পাল লয়ে মাঠে রাখাল চড়াত। বছরের পয়লা বৃষ্টি হলে জমানো পানিতে ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাক। তারপর প্রজনন। ক্ষেতের চিপচিপে পানিতে লেজওয়ালা ব্যাঙছানার ব্যাঙাচি ভরে থাকত। গামছা ছেঁকে ডানকিনা, কানপোনা, রাউয়া মাছ ধরত আর ছাড়ত কচি-কাঁচারা। স্যাঁতসেঁতে কাদায় কত শত মরা জলজ প্রাণীর ছেঁড়া ভাঙা অংশ পড়ে থাকার দৃশ্য। কাক-শালিক-গোশালিকের কাড়াকাড়ি। সন্ধ্যায় যেমন গাছগাছালিতে পাখিদের কীর্তন মানে কলকাকলি শুরু হতো তেমনি রাতে জানা-অজানা পাখিদের বীভৎস ডাক, শেয়ালের হাঁক।
নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার, জলযান চলাচলের দূষণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পয়োনিষ্কাশন বর্জ্য, পলি কাদা বালিতে হাওর ভরাট হওয়া, সার-কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, সর্বোপরি কৃষিকে প্রযুক্তিনির্ভর ও বাণিজ্যিকীকরণের প্রভাবও পড়ছে হাওরের জীববৈচিত্র্যে। হাওরকে রক্ষা করার প্রয়োজনেই এত উন্নয়নেও আমরা মোটেই স্বস্তিতে নেই। তাই হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।