শিল্পী মুর্তজা বশীর: শিল্প ভূবনের বহুমাত্রিক অভিযাত্রী

শিশির মল্লিক
প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ১২:১৮

শিল্পী মুর্তজা বশীর। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
শিল্পী মুর্তজা বশীর জয়নুল বৃক্ষের অনন্য খ্যাতিমান উত্তরাধিকার। ঢাকা চারুকলার দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। বাঙালি (পূর্ব বাংলার) পুনর্জাগরণের দ্রোহী দ্যোতনায় যার শিল্পের পথে পা রাখা। তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হিসেবে চারুকলায় যার ভর্তি হওয়া।
জেল-জুলুম, রাজপথের স্লোগান, ও প্রতিবাদী ভাষার পোস্টার রচনা যার তরুণ রক্তে আন্দোলনের আগুন জ্বালিয়েছিল সেই আগুন তিনি আজীবন অন্তরের গভীরে সুপ্ত রেখেছিলেন। প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও পণ্ডিত জ্ঞান তাপস ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লার সন্তান হওয়ার সুবাদে শৈশব ও কিশোর বয়স থেকেই জ্ঞানের বিবিধ বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল তার। চিত্রকলায় ঢাকা চারুকলার পাঠ সম্পন্ন করে ইতালিতে উচ্চশিক্ষা নেন তিনি। ভাষা আন্দোলন, মুক্তি আন্দোলন,
স্বাধীনতা-উত্তর আশির দশক, নব্বইয়ের দশক ও শূন্য দশক পর্যন্ত তার কাজের গতি-প্রকৃতি যদি আমরা বিশ্লেষণ করি প্রথমত, তিনি নির্দিষ্ট কোন স্টাইলকে স্থায়িত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেননি। ভেঙেছেন নিজেকে একেকভাবে। প্রথম জীবনের সাম্যবাদী আদর্শের কারণে তিনি দেশ ও মানুষের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। রিয়েলিস্টিক চর্চা করেছেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি ইতালি গেলে সেখানেও এ ধারা অক্ষুণ্ন ছিল।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি ‘দেয়াল’ নামক সিরিজের ভেতর দিয়ে তার অ্যাবস্ট্রাকট রিয়ালিজমের চর্চার শুরু হয়। যাকে তিনি অ্যাবস্ট্রাকট বলেননি। জীবনব্যাপী সিরিজ নির্ভর কাজ তিনি করে গেছেন। দেওয়ালের পর তিনি এপিটাফ অব মার্টায়ার্স, ইমেজ, আলো, ডানার মতো সিরিজগুলো সৃষ্টি করে গেছেন। শিল্পী সত্তার পাশাপাশি তিনি ছিলেন বহুমুখী সৃজনে উৎসুখ একজন দ্রষ্টা ও স্রষ্টা। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, চলচ্চিত্র, গবেষণা, প্রাবন্ধিক ও সংগ্রাহক। কোনোটিকেই উড়িয়ে দেওয়ার নয়। শিল্পী মুর্তজা বশীর ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।