Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

ধুয়া গানের আসর

Icon

বঙ্গ রাখাল

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৪:০৩

ধুয়া গানের আসর

একসময় গ্রামগুলো ছিল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আতুরঘর। গ্রামের সবাই এই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে শিখেছিল। গ্রামে গেলে এখন আর সেই আগের গ্রামের মতো অনুভব হয় না।

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার গোলকনগর গ্রামের আনারদ্দি একসময় ধুয়াজারি গাইতেন। গাইতেন মকবুল জোয়ার্দার। এখনো গান করেন আইউব বয়াতি। সারা দেশে এমন অজস্র শিল্পী ছিলেন। এসব স্বশিক্ষিত শিল্পীরা একসময় বাঁচিয়ে রেখেছিলেন গ্রামীণ সংস্কৃতিকে।

ধুয়া গান, বৈঠকি গান, রয়ানি, গাজীর গীত, আলকাপ-এসব গ্রামীণ শিকড় সংস্কৃতির প্রাণ। এই গান যারা করতেন তারাও ছিলেন সাধক শ্রেণির লোক। এসব কিংবদন্তিতুল্য শিল্পীদের কারো কোনো গানই সংগ্রহ করা হয়নি। এখনো অনেক শিল্পীর লেখা গানের কলি এই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে ফেরে-‘ভেবে কয় মকবুল জোয়ার্দার/বুঝলাম না কলির ব্যাপার/আমার মনে সন্দেহ হয়।’ তারা নিজেরা আসর জমাতেন এবং ধুয়া গান করতেন।

ধুয়া গানের সেই সময় আজও মনে রেখাপাত করে। ধুয়া গান যেখানে হতো সন্ধ্যার পরে  সেখানে জ্বলে উঠত হ্যাজাকের বাতি আর শুরু হতো মিলনের গান, যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে গানের আসর। স্বশিক্ষিত ধুয়াশিল্পীরা মুখে মুখে অনেক রঙের ধুয়া রচনা করতেন। মানুষ বিমোহিত হতেন তাদের রচিত গানের সুরে। একসময় আমাদের গ্রামগুলোতে গানের আসর বসত আর সেই আসরের জন্য মানুষের মন উৎসুক হয়ে থাকত। কখন জমবে গানের আসর। এটা গ্রামের মানুষের একটি মিলনের জায়গাও ছিল বটে। সারারাত কেটে যেত গান শুনে শুনে।

গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের বিনোদনের অসাধারণ মাধ্যম ছিল ধুয়া গান। আজ তো আমরা বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছি; ভুলে যাচ্ছি আমাদের বন্ধন।  এভাবে বাংলাদেশের হাজার হাজার গ্রামের গানের আসর কিংবা শিল্পীদের সৃষ্টি কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। ওই সব গান ও শিল্পীর প্রতি আমাদের কোনো দায়ও আমরা অনুভব করি না। দু-একটি গানের কলি টিকে থাকলেও শিল্পীর খোঁজখবর রাখে না কেউ।  গ্রামীণ সংস্কৃতির এক ঐশ্বর্যমণ্ডিত অধ্যায় ধুয়া গান। এখনো অনেক ধুয়া গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু সংগ্রহের অভাবে তা বিলুপ্ত।  নতুন প্রজন্ম জানেও না ধুয়া গানের এসব শিল্পীর কথা। একদিন হয়তো মুছে যাবে কালের ধূসর পাণ্ডুলিপি থেকে। এগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫