
মাদারীপুরের সাহিত্যচর্চার ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে এই জেলার কৃতী সন্তানরা দেশ ও জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিক ও লেখক সুবল বিশ্বাসের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ষাটের দশকে তৎকালীন শিক্ষক হামিদ আকন্দের উদ্যোগে সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হতো। তখন ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে (ইউআই স্কুল) তারা সাহিত্য আড্ডায় বসতেন।
সে সময় ফারুক হাওলাদার, এ টি এম কামালুজ্জামান, নরেন বিশ্বাস, বাশার মাহমুদ প্রমুখ আড্ডায় অংশ নিতেন। মাদারীপুর শহরে নাজিমুদ্দিন কলেজের ক্লাস শুরু হয় ১৯৪৮ সালে। তখন ক্যাম্পাসের বি ব্লকে একটি টিনের ঘরে শিক্ষকরা সাহিত্য আড্ডায় বসতেন। ডা. আব্দুল বারীর উদ্যোগে সেই টিনের ঘরেই একসময় সাহিত্য আড্ডা হতো। ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত এমএম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করত।
এরপর ১৯৮৭ সালে সন্দীপন সাহিত্য সংসদের জন্ম হলে মাদারীপুর প্রেস ক্লাবে মতিউর রহমানের উদ্যোগে সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা হতো। তখন সংগঠনের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন সুবল বিশ্বাস। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মাদারীপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় বেশ কয়েকটি সাহিত্য সংগঠন। তার মধ্যে অংকুর সাহিত্য সংসদ, সন্দীপন সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ, মাদারীপুর লেখক গোষ্ঠী, মাদারীপুর সাহিত্য পরিষদ, জয় বাংলা সাহিত্য পরিষদ, নজরুল পরিষদ, কচুপাতা লেখক গোষ্ঠী, শতদল লেখক গোষ্ঠী, গাংচিল সাহিত্য পরিষদ, মাদারীপুর শাখা; বিশ্ব বাংলা সাহিত্য পরিষদ, মাদারীপুর শাখা; উন্মেষ, রাজৈর উপজেলা সাহিত্য পরিষদ, দহন সাহিত্য সংসদ, কালকিনি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে প্রথম আলো বন্ধুসভা মাদারীপুর শাখা, উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদ, উত্তরণ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও বেশ কয়েকটি সাহিত্য আড্ডা বসে। বের হয় সাহিত্যপত্রও।
সাংবাদিক শাহজাহান খান, অধ্যাপক ইয়াকুব খান শিশির, সংগঠক রাজন মাহমুদ, সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম খান, নাট্যজন আ জ ম কামাল, শিক্ষক মাসুদ সুমনসহ অনেকেই বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করেন। বর্তমানে মাদারীপুরে মাসুদ সুমন সম্পাদিত গল্পের ছোটকাগজ ‘গপ্পো’ আয়োজিত নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়।