Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

গঘ : মৃত্যু-মিথোপাখ্যান!

Icon

শফিকুল কবীর চন্দন

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১১:০০

গঘ : মৃত্যু-মিথোপাখ্যান!

পল গ্যাচেট, ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ অন হিজ ডেথবেড, ১৮৯০, আর্ট ইনস্টিটিউট অব শিকাগো আইএল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

২৯ জুলাই ২০২৫ জগৎপ্রিয় আঁকিয়ে ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের একশত পঁয়ত্রিশতম মৃত্যু দিন। ‘এভাবেই চলে যেতে চাই’। শেষ বলা কথা। একজন প্রাণবান চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের এই ভাষ্য আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত করে। তার জীবন, আঁকার সংগ্রাম তথা চিত্রী জীবনের তীব্র আকাক্সক্ষা আমাদের আজও আন্দোলিত করে। এক অমর চিত্রী, যার মৃত্যুর ১৩৫ বছর পরও ভক্তকুলের কাছে অপার দুঃখ-বেদনা-সংশয় আর সত্য-মিথ্যার সঙ্গে যিনি জড়িয়ে আছেন তিনি ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। তিনি নিজের জীবনের ও শিল্পের এক অনবদ্য কথক হয়েও চিরন্তন এক রহস্যগল্পে নিজেকে হাজির নাজির রেখেছেন। বস্তুত, সব সংগত মিথ সামলে নিয়েও তার জীবন অনবদ্য শিল্প কারিগরের এক উপাখ্যান রচিত হয়ে আছে। সেই উপাখ্যানের পাঠ আমাদের স্বাভাবিকভাবেই শিল্পেরই পাঠ। দেশ-কাল-সময় পেরিয়ে নান্দনিকতার নিরিখে সংযোগ ঘটে তার শিল্পামল, শিল্পের আমল ঘিরে। ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জীবন, অভিজ্ঞতা তার সামগ্রিক শিল্পাচরণের গোমরসূত্রে আমরা নিমগ্ন হয়ে বুঝবার তাড়না অনুভব করি। আমরা স্মরণ করি। 

ডেইলি আর্ট ম্যাগাজিনের একটি প্রবন্ধ The Mystery of Vincent van Gogh's Death -এ উল্লেখ করেছেন প্রখ্যাত আমেরিকান লেখক ও শিল্প ইতিহাসবিদ জন রিওয়াল্ড ১৯৩০-এর দশকে আউভার্সে ভ্রমণ করে এবং চিত্রশিল্পী ভ্যান গঘের  মৃত্যুর ঘটনা ও তার স্মরণ বিষয়ে  স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। পরে তিনি অনেক লোকের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন, যার মধ্যে রেকর্ডে থাকা অন্তত একজন এমনও ছিলেন, যার কাছ থেকে তিনি সেখানে শুনেছিলেন : কিছু ‘অল্প বয়স্ক  ছেলে’ ভ্যান গঘকে দুর্ঘটনাক্রমে গুলি করেছে। তাকে বলা হয়েছিল, ছেলেদের এমন কাণ্ডের কথা কখনোই সামনে আসেনি, কারণ তারা খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ভয় ছিল এবং ভ্যান গঘ তাদের রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজের শাহাদাতের চূড়ান্ত পদক্ষেপ জেনেও। ভ্যান গঘের এক জীবনী লেখকদ্বয় যথাক্রমে স্টিভেন নাইফে এবং গ্রেগরি হোয়াইট স্মিথ দাবি করেছেন যে ভ্যান গঘকে সম্ভবত দুর্ঘটনাক্রমে গুলি করা হয়েছিল, ১৬ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রের দ্বারা। ২০১১ সালে প্রকাশিত ‘ভ্যান গঘ : দ্য লাইফ’ নামের এই জীবনীর লেখকরা মনে করেন যে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর ভ্যান গঘ মৃত্যুকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং বিশ্বাস করেছিলেন যে ছেলেরা তার প্রতি অনুগ্রহ করেছে, তাই তার মৃত্যুশয্যার বহুল উদ্ধৃত মন্তব্য : ‘কাউকে দোষারোপ করো না... আমিই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম।’ এমন দাবি গঘের মৃত্য রহস্য ঘিরে নিকট সময়েও আবর্তিত। ১৩৫ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই বিয়োগাত্মক ঘটনার বিশ্লেষণ ও পৌনঃপুনিক গবেষণা তথ্য গঘের মৃত্যু রহস্যের কিনারা করতে পেরেছে-এমনটা না বলাই সংগত।

জ্যোৎস্নালোকিত নক্ষত্র রাত্রি, বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত, হলুদাক্রান্ত সূর্যমুখী, আঁধারীমায় আলুভোজ, আত্ম প্রতিকৃতি প্রভৃতির অপ্রাকৃত সুষমা আমাদের দেখবার চেতনায় একেকটি অভিজ্ঞতার পুষ্টি বিলায়। ক্যানভাসজুড়ে প্রাণ প্রকৃতির আবেগ ভারাক্রান্ত রং রূপবৈচিত্র্যের গঘিয় তাৎপর্য ও ব্যঞ্জনা আলোড়িত করে। এসবই তাকে বোঝার পক্ষে নিশ্চয়ই শিল্প দর্শকের জন্য অপরিহার্য। কেননা তার শিল্প চিন্তা, জীবনবোধ তার আঁকার ও লেখার প্রতিলিপি ছাড়া স্বয়ং ভিনসেন্টকে পাওয়ার অন্য কোনো তরিকা নেই। 

মাত্র সাঁইত্রিশ বছরের এক নাতিদীর্ঘ কিন্তু সৃষ্টিশীল জীবনের পরতে পরতে নির্মিত গঘ-আশ্রমে পৌঁছে যাই আমরা তার জীবন ও কাজের সমূহ সংকেত, প্রকৃত ও প্রাকৃত যাবতীয় বিবরণসমেত। ১ আগস্ট ১৮৯০ থিও তার মাকে লেখা চিঠিতে লিখেছিলেন, ভ্যান গঘের অন্তিম উচ্চারণ সম্পর্কে-ভিনসেন্ট বলেছিল, ‘এভাবেই চলে যেতে চাই’, আর তার আধঘণ্টার মধ্যেই নিজের ইচ্ছা পূরণ করে ও।” রংবনে একরোখা বর্ণমাতাল সংযত সংহত আবেগে আচরণে যেমন চমকিত করে, তেমনি তার চিঠিগুলো নিস্তরঙ্গ নয়, বরং অন্তরঙ্গ চলনে-বলনে অনুভবি হয়ে আমাদের চিত্তবিক্ষেপ ঘটায়। এই আমাদের প্রিয়তম ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫