Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

নোবেল না পেলেও উজ্জ্বল তারা

Icon

উপল বড়ুয়া

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৭

নোবেল না পেলেও উজ্জ্বল তারা

১৯০৪ সালের ১৬ জুন, বৃহস্পতিবার খুব সাদামাটা একটা দিন। আসলেই কি সাদামাটা? যারা জেমস জয়েসের কালজয়ী উপন্যাস ‘ইউলিসিস’ পড়েছেন, দিনটি তাদের জন্য স্মরণীয় ও উদযাপনের। কী হয়েছিল সেদিন? ইউলিসিস মূলত এক দিনের ঘটনা। উপন্যাসের নায়ক লিওপোল্ড ব্লুম ১৬ জুন ডাবলিনে শেষকৃত্যে যোগ দেন, পাবে যান, স্ত্রী মলির পরকীয়া সন্দেহের মতো ঘটনা তাকে কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি করে। এই দিনটি স্মরণে ডাবলিনে তো বটেই, পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে সাহিত্যপ্রেমীরা উদযাপন করে ‘ব্লুমসডে’। 

এই উপন্যাসকে বলা হয় হোমারের মহাকাব্য ‘ওডিসি’র আধুনিক সংস্করণ। ওডিসির মতো সমান্তরালে এগিয়েছে ইউলিসিসের কাহিনি। বলা হয়ে থাকে, কোনো দুর্যোগে যদি ডাবলিন শহর ধ্বংসও হয়ে যায় তবে ইউলিসিস পড়ে সেটির হুবহু নির্মাণ সম্ভব। আধুনিকতাবাদী সাহিত্যের এই অমর সৃষ্টির রচয়িতা কিন্তু নোবেল পাননি। ইউলিসিসের জন্য না হলেও নিজের অন্যান্য অমর সব সাহিত্যকীর্তির জন্য নোবেল পাননি জয়েস। নোবেল না পেলেও জয়েসের ইউলিসিস পেয়েছে বিশ্বসেরা উপন্যাসের খ্যাতি। 

শুধু কি জয়েস? বিশ্বের সেরা উপন্যাসের তালিকা করলে যেসব ওপরের দিকে থাকবে, তাদের রচয়িতাদের অনেকের ভাগ্যে জোটেনি নোবেল। রুশ সাহিত্যের ঋষি পুরুষ লেভ তলস্তয়। ফিওদর দস্তয়েভস্কির হাতে যদি তৈরি হয় রুশ সাহিত্যের শরীর, তবে তলস্তয় সেই শরীরে দিয়েছেন ভাষা। কিন্তু দুজনের কেউ নোবেল পাননি। তলস্তয়ের উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ ও ‘আনা কারেনিনা’ সাহিত্যের দুই সম্পদ। দস্তয়েভস্কিও ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ ও ‘ব্রাদার্স কারামাজভ’ সাহিত্যের দুই রত্ন। এই চার উপন্যাস অবশ্য প্রকাশিত হয়েছিল উনিশ শতকের মাঝামাঝি। তবে উজ্জ্বল রচনাসম্ভার থাকার পরও নোবেল পাননি দস্তয়েভস্কি ও তলস্তয়। 

অনেক কালজয়ী সৃষ্টি দেখেনি কোনো পুরস্কারের মুখ। সেসবের তালিকা করলে ওপরের দিকেই থাকবে। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’। স্কট ফিটজেরাল্ডের এই উপন্যাস থেকে ২০১৩ সালে সিনেমাও হয়। অভিনয় করেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর মতো অভিনেতাও। ফিটজেরাল্ড আমেরিকান সাহিত্যের অন্যতম প্রভাবশালী লেখক। কিন্তু তার হাতেও ধরা দেয়নি নোবেল। নোবেল না জেতা কিংবদন্তি ঔপন্যাসিকের তালিকাটা অনেক লম্বা। সাহিত্যে ‘কাফকায়েস্ক’ শব্দটি এসেছে ফ্রাৎস কাফকা থেকে। তার নভেলা ‘মেটামরফসিস’ ও ‘দ্য ট্রায়াল’ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে আধুনিক সভ্যতার ভয়াবহতা। লাতিন সাহিত্যের দুই মহীরুহ হোর্হে লুই বোর্হেস ও গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস কিংবা হালের জাপানের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যক হারুকি মুরাকামির লেখায় পাওয়া যায় কাফকার প্রভাব। মুরাকামি তো ‘কাফকা অন দ্য শোর’ নামে উপন্যাসও লিখেছেন। তবে বিশ্বসাহিত্যে আজও প্রভাববিস্তার করলেও কাফকা নোবেল জেতেননি। অবশ্য তিনি ৪০ বছরের নাতিদীর্ঘ জীবনে যা কিছু লিখেছিলেন, সন্দেহের কারণে সেসব প্রকাশ করতে চাননি। বন্ধুকে বলেছিলেন, মৃত্যুর পর সব পুড়িয়ে ফেলতে। ভাগ্যিস, কাফকার কথা শোনেননি তার বন্ধু। নয়তো বিশ্বসাহিত্য বঞ্চিত হতো তার একেকটি মাস্টারপিস থেকে। 

‘অ্যানিমেল ফার্ম’ ও ‘১৯৮৪’ দিয়ে বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন জর্জ অরওয়েল। এমন দুই তোলপাড় করা উপন্যাসের পরও তার ভাগ্যে জোটেনি নোবেল। রুশ বিপ্লবকে ব্যঙ্গ করে লেখা অ্যানিমেল ফার্ম নিয়ে অনেক বিতর্ক অবশ্য আছে। তবে সেই উপন্যাস প্রকাশের পর থেকে ‘অরওয়েলিজম’ নামে নতুন ‘ইজম’ সাহিত্যের আলোচনায় চলে আসে। 

১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয় ভার্জিনিয়া উলফের অন্যতম সৃষ্টি ‘টু দ্য লাইটহাউস’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও বাবা-ছেলের মানসিক দ্বন্দ্ব উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয়। তবে সাহিত্যের স্ট্রিম অব কনশাসনেস বা চেতনা প্রবাহ কৌশলের জন্য উলফের এই উপন্যাস আজও স্মরণীয়। মানব মনের জটিল চিন্তাধারাকে উপন্যাসের ভেতর দিয়ে তুলে এনেছেন তিনি। তার পরও জোটেনি নোবেল। 

লম্বা সময় ধরে নোবেলের আলোচনায় ছিলেন নাইজেরিয়ার চিনুয়া আচিবে। তার উপন্যাস ‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’ যেন আফ্রিকায় ধর্মের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মান্তরণের এক জ¦লন্ত দলিল। অবশ্য সমগ্র সাহিত্যের জন্য ২০০৭ ম্যান বুকার পেলেও নোবেল পাননি আচিবে। 

আচিবের মতো প্রতিবছর সম্ভাব্য নোবেল প্রাপ্তির তালিকায় থাকেন সালমান রুশদি ও মুরাকামি। তবে আজও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হননি বর্তমানের আলোচিত এই দুই ঔপন্যাসিকের প্রতি। রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ অবশ্য বেশ বিতর্কিত। আর মুরাকামির বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা থাকলেও কোনো এক অজানা কারণে যেন সুইডিশ একাডেমির আনুকূল্য পাচ্ছেন না। তার পরও বলা যায়, নোবেল না পেলেও তারা পাঠকের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। কত কিংবদন্তি লেখক তো নোবেল জেতেননি, কিন্তু তারা উজ্জ্বল হয়ে আছেন আজও। আবার অনেকে নোবেল জিতেও মুছে গেছেন পাঠকের মন থেকে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫