Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

আবু ইসহাক :

একজন সামাজিক চিত্রকর

Icon

শৈলজানন্দ রায়

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩২

একজন সামাজিক চিত্রকর

খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাক

আবু ইসহাক বাংলা সাহিত্যের এক খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক। যিনি তার কালজয়ী উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’  উপন্যাসের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্যের কিছু কালজয়ী সাহিত্যকর্মের জন্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার জায়গা করে নিয়েছেন। অভিধান প্রণেতা হিসেবেও আবু ইসহাকের একটি বিশিষ্ট পরিচয় আছে। তিনি সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান (২ খণ্ড, ১৯৯৩, ১৯৯৮) রচনা করে বাংলা কোষগ্রন্থের পরিধিকে বাড়িয়ে তুলেছেন। তার প্রণীত অভিধানের বিশেষত্ব হলো শব্দের শুধু অর্থ নয়, সব ধরনের প্রতিশব্দ বা সমর্থক প্রদান।

আবু ইসহাকের সাহিত্যে গভীর সামাজিক বিশ্লেষণ, বিশেষ করে গ্রামীণ জীবন ও সামাজিক বৈষম্য তুলে ধরেছেন দক্ষতার সঙ্গে। অতি উঁচুতলার চাকরি করার পরও সমাজ ও সাধারণ মানুষ সম্পর্কে তার যে জীবন পোড়ানো অনুভূতি তা পাঠকদের বিস্ময়ের মধ্যে ফেলে দেয়। তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’। ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু ছিল চল্লিশের দশকের অস্থিরতার মধ্যে একটি পরিবারের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৭-এর দেশভাগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান গঠন, অন্যদিকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষের ঢলের মধ্যেও টিকে থাকা সামাজিক অবিচার  গ্রামীণ সমাজের কুসংস্কার, মোড়ল শ্রেণির মানুষের ষড়যন্ত্র, সর্বোপরি গ্রামীণ নারীর জীবন-সংগ্রাম ও প্রতিবাদী চেতনা। এসব অব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে আছে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’। বাংলাদেশের এক গ্রামের দরিদ্র মেয়েটির প্রথম স্বামী জব্বার মুন্সী মারা যাওয়ার পর করিম বকশ নামের এক কৃষকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

১৯৪৩ সালে আকালের সময় স্বামী তাকে ত্যাগ করে। শিশুপুত্রকে নিজের কাছে রেখে মেয়েসহ জয়গুনকে তাড়িয়ে দেয় করিম। ছেলে বড় হয়ে খাওয়াবে, কিন্তু মেয়ে থাকলে বিয়ে দিতে খরচ হবে, সে জন্য এই চালাকি করে সে। শহরের লঙ্গরখানায় গিয়ে সন্তানদের নিয়ে প্রাণ বাঁচায় জয়গুন। জয়গুনের সঙ্গে রয়েছে তার প্রথম পক্ষের সন্তান কিশোর হাসু, দ্বিতীয় স্বামীর মেয়ে মায়মুন, মৃত ভায়ের স্ত্রী ও সন্তান। একদিন জয়গুন গ্রামে ফিরে আসে এবং আশ্রয় নেয় তালগাছের ভিটা বলে পরিচিত তার বাবার রেখে যাওয়া সূর্য দীঘল বাড়ীতে। গ্রামে সাধারণত বাড়ি বানানো হয় উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে। দু-একটি বাড়ি হয় পূর্ব-পশ্চিমমুখী। এই বাড়িগুলোকে বলা হয় সূর্য দীঘল বাড়ী। এগুলো অপয়া হিসেবে পরিগণিত। বলা হয় এ বাড়িতে বাস করলে নির্বংশ হতে হয়। 

প্রথাগত এই ভাবনার বিরুদ্ধে জয়গুনের যে সংগ্রাম সেটা এই উপন্যাসকে মহত্ব দিয়েছে। দেশভাগ, দুর্ভিক্ষ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে রচিত এবং এটি এক গভীর সামাজিক আখ্যান। তার ছোট গল্প ‘জোঁক’ অভিশাপ, বাংলা সাহিত্যের অনন্য সৃষ্টি। তিনি তার লেখার মাধ্যমে তৎকালীন সমাজব্যবস্থার বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছেন। যেখানে গ্রামীণ জীবনের সমস্যা, দারিদ্র্য এবং শোষণ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। যে চিত্রের মধ্যে আমরা খুব সহজে প্রবেশ করতে পারি এবং যা কি না আমাদের খুবই পরিচিত।

আবু ইসহাক আমাদের বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক। তাই আজও তিনি আমাদের সাহিত্য প্রসঙ্গে বিশেষ আলোচ্য বিষয়। বাংলা কথাসাহিত্যে  এই মহান কথাসাহিত্যিককে নিয়ে তেমন একটা কাজ হয়নি। তার পরও তিনি দেশবরেণ্য লেখক। আবু ইসহাক ১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর,  শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন শিরঙ্গল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি   ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫