Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

অদৃশ্য মানব- এইচ. জি. ওয়েলসের রহস্য দুনিয়ার কাহিনি

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২০, ১৩:৫৬

অদৃশ্য মানব- এইচ. জি. ওয়েলসের রহস্য দুনিয়ার কাহিনি

অপার সৌন্দর্য্যরে অন্তহীন রহস্যের আধার এই পৃথিবী। কখনো পৃথিবী নিজে কখনো বা মানুষ সেই রহস্যের দ্বার খুলে চলে আসে সম্মুখে- লুকোচুরি খেলে সকলের সাথে যেন এক আত্মভোলা তাপসের ক্ষণিকের মোহভঙ্গ। সেই রহস্য উদঘাটনে মানুষের চেষ্টার যেমন নেই কোনো অন্ত, তেমনি পৃথিবীরও তা তার বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখবার প্রয়াসেরও নেই কোনো শেষ। তাইতো পৃথিবীর জন্মরহস্য থেকে শুরু করে সবকিছু রহস্যময়- যেন এইতো পেয়ে গেলাম উত্তর!

এইচ.জি. ওয়েলস যার পুরো নাম- হারবার্ট জর্জ ওয়েলস, জন্ম ২১ সেপ্টেম্বর,১৮৬৬ সালে। ওয়েলস একজন ইংরেজ লেখক এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর এক মহান স্রষ্টা। তিনি মূলত তার কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস ও ছোটো গল্পগুলোর জন্য অধিক পরিচিত। বহুমুখী লেখক ওয়েলস একাধারে রচনা করেছেন- উপন্যাস, ইতিহাস, রাজনীতি ও সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে অসংখ্য গ্রন্থ। পাঠকবিশ্বে জুল ভার্নের সঙ্গে তাকেও ‘কল্পবিজ্ঞানের জনক’ মনে করা হয়।

ওয়েলস মূলত একজন ঘোষিত সমাজবাদী। তিনি শান্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও, কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধকেই সমর্থন করেন। পরবর্তীকালে তার রচনা বিশেষভাবে রাজনৈতিক ও নীতিবাদীতায় পরিবর্তন হয়। তার জীবনের মধ্যপর্বের রচনাগুলোর মধ্যে কল্পবিজ্ঞান উপাদান কম। এই পর্বের রচনাগুলোর মধ্যে বিধৃত হয়েছে নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজের জীবন। তিনি অনুপম ভঙ্গিতে অনবদ্য তালে সৃষ্টি করেছেন চমৎকার সব গল্প, যা আজও নতুনত্বে ভরপুর। মনে হয় যেন আজই সেসব গল্প লেখা হলো। সমকালে এমন কল্পবিজ্ঞানের নির্মাতা আর দেখা মেলা ভার। বিজ্ঞান নিয়ে গল্প  এ সময়ে, অন্তত এদেশে তেমনটি দেখা যায় না। ওয়েলস নতুন ভাবনার জন্য আদর্শ এক বিজ্ঞানবিশ্বের গল্পকার। বিজ্ঞানকে কী করে চমৎকারিত্ব দিয়ে কাহিনিতে রূপান্তর করতে হয় তা আশ্চর্যভাবে দেখতে হয় তার লেখা পাঠ করে। 


বিজ্ঞান- মানে বিশেষ জ্ঞান যা মানুষকে দিয়েছে মুক্তি, করেছে স্বাচ্ছন্দ্যময়, দিয়েছে পশুর সাথে পার্থক্যের আরেকটি মাপকাঠি, তেমনি করেছে লোভী, স্বার্থপর, অহেতুক ধ্বংসের কারন। যে জ্ঞান প্রথমে বিকাশ লাভ করছিলো মানবকল্যাণের কর্ণধার হিসেবে সেই জ্ঞানই আজ পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকি থেকে শুরু করে বর্তমান আফগানিস্তানের সর্বত্র তার করাল থাবার ভয়াল স্মৃতিতে মূর্ত। 

‘গ্রিফিন’ অদৃশ্যমানব- জীবনের শুরুতে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়া শুরু করলেও শেষতক তার ভালোলাগা এসে দাঁড়ায় পদার্থবিজ্ঞানে। সৃষ্টির নেশায়, রহস্য উদঘাটনের জন্য যে তার জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধা বোধ করে না। কিন্তু মানুষের আজন্ম লোভ, ক্ষমতার মোহ তার পিছু ছাড়তে চায় না। পরিনামে সে হয়ে ওঠে ক্ষমতালিপ্সু এক শয়তানের প্রতীক যে সামান্যতম কারণে কাউকে খুন করতে দ্বিধা করে না। অহর্নিশি যার ধ্যান-জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় শাসক হবার আশা- অপরিনাম লোভ আর রহস্যের বেড়াজাল উন্মুক্ত করার আশা তাকে তার জন্মদাতাকে অহেতুক কলঙ্ক দিয়ে মৃত্যুর পথে ধাবিত করতেও বাধ সাধে না।

কী অদ্ভুদ এই বিজ্ঞানের নেশা! হাজার আলোর মেলাই যেন হাজার তিমিরের প্রতিনিধি হয়ে মুখ ভেংচে যাচ্ছে আমাদের অবিরত। একটা করে রহস্যের দ্বার পৃথিবীর মানুষ দ্বারা উন্মুক্ত হয় আর যেন একটা করে বেড়ে চলে ধ্বংসের পথ। তাই বেল সে সবসময় সবাই একই পথে হাঁটছে তাও নয়- ভালো মানুষও আছে, আছে তাঁদের অক্লান্ত প্রয়াস এই পৃথিবীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার।

বর্তমান সময়ে মহামারির যে প্রকোপ চলছে পৃথিবীজুড়ে তা যেন মানুষেরই প্রকৃতির সাথে এক ধরনের অন্যায়ের ফল। তবে আশার কথা হলো এমন যে, করোনা লোভীকে বন্দী করতে পেরেছে, বন্ধ করতে পেরেছে কিছু দিনের জন্য লোভীর দুনিয়াকে। তবুও ক্ষমতার লড়াই চলছে, এক দেশ আরেক দেশের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে বরং যুদ্ধংদেহী হয়ে কথা বলতেই যেন পছন্দ করছে বেশি। শাসকেরা ক্ষমতার বিস্তার ঘটাতে চায়, দখল করতে চায় বিশ্ব বাজার- এমনকি মানুষের মনকেও। এমনই এই পৃথিবীর মানুষ। 

চমৎকার এক পরিসরে লেখক ‘অদৃশ্যমানব’ গ্রন্থে মানুষের অদম্য আকাঙ্ক্ষার করুণ পরিনতি দেখিয়েছেন, দেখিয়েছেন একজনের কর্মফল অন্যজনের মুখ স্বাচ্ছন্দ্যের উপায়। মানুষ বরাবরই এক স্বার্থপর, নীচ প্রকৃতির সৃষ্টি। জন্ম থেকে একটা বাঘ বাঘ হিসাবে বেড়ে ওঠে, সেজন্য তাকে কোন আলাদা উপায় করতে হয় না। কিন্তু একজন মানুষ? তাকে মানুষ হবার জন্য করতে হয় বহু সাধ্য-সাধনা। কেউ তা পারে, কেউ তা পারে না। তাইতো পৃথিবীর আজ এই পরিণতি। মানুষের যদি চাহিদার শেষ থাকতো, থাকতো সকলের প্রতি ভালোবাসা- তবে কখনোই তৈরি হতো না এই- অদৃশ্যমানব।


বস্তুতঃপক্ষে লেখক এই অদৃশ্যমানব দ্বারা আমাদের তথাকথিত ক্ষমতালোভী শাসকগোষ্ঠীর আলোকপাত করতে চেয়েছেন যারা ভালোমানুষের মুখোশ পরে আমাদের প্রতারিত করে চলেছে সব সময়। জীবনের একটা ভাগ তারা থাকেন আমাদের ধরা- ছোঁয়ার বাইরে কিন্তু একটা সময় সমগ্র পৃথিবীর সাধারন মানুষ তাকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে আনে মাটিতে- জয় হয় সাধারণ  মানুষের, জয় হয় মানবতার। কিন্তু তাদের পাপের বীজ রয়ে যায় কোথাও না কোথাও- যেমন এখানে মারভেল নামক ভবঘুরে চোরের কাছে যে কেবল আফসোস করে বলতে থাকে- ‘ওর মতো আমি করবো না আমি কেবল- বলে ঘন ঘন পাইপে টান দেয়। আশ্চর্য অণির্বান স্বপ্নের ভেতর তলিয়ে যায় সে।’

এখান থেকেই আবার সূচনা হবে আরেক অদৃশ্য মানবের। এভাবেই চলতে থাকবে পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত। কেননা মানুষ চিরজীবনের ক্ষমতালোভী আশ্চর্য নিবোর্ধ প্রাণী সময়ে যে কাউকেই ক্ষমা করতে পারে না, হতে চায় পৃথিবীর সম্রাট। কিন্তু এই পৃথিবী- যে সমস্ত রহস্যের ভান্ডার সে কেবল মুচকি হাসে কেননা এই রহস্যের যে কোনো শেষ নেই, নেই স্থিতি কেবল অবিরাম পথচলা, অবিশ্রান্তভাবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সে ধারা অব্যহত রাখা।

এক অদৃশ্য মানব যাবে আরেকজন আসবে- নইলে পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় থাকবে না। যদি খারাপ নাই থাকে তবে ভালোর কী দাম? মানুষের চিরায়ত লড়াই করবার প্রবৃত্তি, বেঁচে থাকবার আশা আসবে কোথা থেকে? কেননা একমাত্র স্বর্গই কেবল ভালো রাজত্ব আর পৃথিবী? সে সবার জন্য! 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫