
দুপুর থেকেই টুপটাপ বৃষ্টি। অন্যসময় মেঘের বৃষ্টি খুব ভালো লাগে; কিন্তু আজ ওর মন থেকে থেকে খারাপ হচ্ছে- বিকেলে অভ্রর সঙ্গে কোচিং ক্লাসে দেখা হবার কথা। দু’জন একই কলেজে পড়ে, কিন্তু শিফট আলাদা। প্রেম-ট্রেম কিছু না- কেবল ভালোলাগা কিংবা হয়তো প্রেম! মেঘ অতো-সতো বোঝে না। কোচিং ক্লাসে বাবার সঙ্গে যাবার জন্য ও কারও সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না- বাবা এমন পাহারা দেয় যেন মাছিটাও মেঘের কাছে আসতে পারে না!
কিন্তু তা বলে কি বন্ধুত্ব আটকে থাকে? মেঘ এতকিছুর মাঝেও অভ্র’র সঙ্গে ঠিক কথা বলে- সবার মাঝ থেকে ওকে ওর বেশ লাগে! আর আট দশটা ছেলের মতো নয়- হাসিখুশি, বেশ মিশুক! দু’জনের একটা মজার হবি আছে- একই ডায়েরিতে দু’জন লেখে, সোজা কথায় কথা চালাচালি করে। আজ তো তাহলে আর ডায়েরি পড়া হবে না। অভ্রর কোনো নম্বরও মেঘের কাছে নেই। এরই মধ্যে বাসার সালেহা খালা এসে বলল- আফা, কাইল থিকা বলে সব বন্ধ হইয়া যাইব- কি জানি কইতাছে সব খবরে! মেঘ একটু রাগ করেই বলল- বলেছে তোমাকে?
সারাদিন কাজ করার পর তোমার আজেরা গপ্ মারার জায়গা বুঝি আজ আর কোথাও পাচ্ছ না, যাও তো। সালেহা খালা চলে যাবার পর মেঘের মন আরও খারাপ হয়ে যায়। এমন সময় হোসেন সাহেব মানে মেঘের বাবা এসে বলেন- মা রে, কাল থেকে লকডাউন শুরু- স্কুল, কলেজ, অফিস সব বন্ধ করে দিয়েছে! মেঘ- ‘এসব কি বলো, বাবা? আমার সামনে পরীক্ষা, কোচিং ক্লাসে যাব না?’ দুম করে মনের মধ্যে অভ্রর মুখটা ভেসে ওঠে- এমন লাগছে কেন? অভ্র তো ওর স্পেশাল কেউ না!
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চুপ করে বসে থাকে মেঘ। মা এসে বলে- এভাবে বসে আছিস কেন? ওঠ মা, নাস্তা করে পড়তে বস! দিন কাটে তো রাত কাটে না। পৃথিবীর পরিস্থিতি, দেশের পরিস্থিতি- দিন দিন কেবল খারাপই হতে থাকে! কবে পরীক্ষা হবে কেউ বলতে পারে না। বাবা বলেন- লোকজনের না খেয়ে মরার অবস্থা হইতেছে আর তুই আছিস তোর পরীক্ষা নিয়ে! বাবাকে কি করে বোঝাই অভ্রর সঙ্গে ওর দেখা হওয়াটা খুব জরুরি, অভ্রকে ওর কিছু বলার আছে! এরই মধ্যে অনুভা ফোন করে একদিন- জানিস, অভ্রর তো কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে! মেঘ আকাশ থেকে পড়ে- বলিস কি?
অস্থির মেঘ বাড়িময় ঘুরে বেড়ায়- উপায়হীন, বোবা আক্রোশে ফুঁসতে থাকে- যদি একটা বার কথা বলতে পারতাম অভ্রর সঙ্গে, কেবল একটা বার! একদিন সকালে ওর ডায়েরিটা কে যেন দিয়ে যায়- পাগলের মতো পাতা উল্টোতে থাকে মেঘ- একটা লাইন শুধু লেখা তাতে- ‘গল্প শুরুর গল্পটা আর হলো না, মেঘ!’