Logo
×

Follow Us

শিল্প-সাহিত্য

অভিমানী বাঘ

Icon

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২০, ০৯:৩৬

অভিমানী বাঘ

সকাল থেকেই বাঘের মন খারাপ। বাচ্চাগুলো খিদেয় কাঁদছে। অথচ বনে কোনো খাবার নেই। কী খাওয়ায় বাচ্চাগুলোকে। বাঘিনী গজগজ করতে লাগল। খাবার থাকবে কী করে, বন কি আর আছে আগের মতো! বনের সব গাছ তো কেটে ফেলেছে মানুষ। পশু-পাখি থাকবে কী করে আর। চলো না আমরা অন্য বনে চলে যাই। বাঘিনী বাঘকে বলে। বাঘ অবাক হয়ে তাকায়। বাপ-দাদার স্মৃতিঘেরা পূর্বপুরুষের বন।

এ বন ছেড়ে চলে যাব! যাব না তো কী করব। বনে না খেয়ে থাকব? রেগে ওঠে বাঘিনী। মানুষ তো আমাদের দেখতে পেলেই মেরে ফেলছে। ওদের ভয়ে সরতে সরতে বনের কিনারায় চলে এসেছি। কি ঘন বন ছিল এ সুন্দরবন। আর এখন! বাঘিনীর কথায় বাঘ লেজ দিয়ে পিঠ চুলকায়। সত্যি একসময় এ বনে দিনে সূর্যের আলো ঢুকত না। কত ঘন ছিল। গাছ আর গাছ। হরিণ-বানর সবাই মিলে ছোটবেলায় কত মজা করেই না খেলত ওরা। লুকোচুরি খেলতে গিয়ে একবার মায়া হরিণ সুন্দরী গাছে আটকে যায়। সে কি কান্না হরিণের।

ওরা যতই ছাড়াতে যায়, ততই আটকে যায়। শেষে হরিণের বাবা আসায় সে যাত্রায় ওরা রক্ষা পায়। আহারে কত সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো! দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাঘ। গত বছর মায়া হরিণটাকে ধরে নিয়ে গেছে মানুষে; সার্কাসে খেলা দেখানোর জন্য। কি যে কাঁদছিল ও। মনে হতেই চোখ ভিজে ওঠে বাঘের। তা দেখে বাঘের বাচ্চা ইটো আর বিটো এগিয়ে আসে। বাঘের গাঘেঁষে বসে ওরা। বাবা তুমি কেঁদো না। আমাদের আর ক্ষুধা নেই। আমরা খাব না। শুনে বাঘ থাবা দিয়ে ওদের আদর করে। ওরে আমার সোনা বাচ্চারা। কচি মুখগুলো খিদেয় কাতর। বুকটা ছলছল করে ওঠে।

ভাবে... না, আর না থাকব না। চলে যাব। খুঁজব অন্য বন। তবু খাবার তো পাবে বাচ্চারা। বাঘিনীকে ডাকে। সব গোছগাছ করে নাও। এখানে আর থাকব না। রোদটা কমলে হাঁটা দেব আমরা। বাঘিনী চোখ মুছে গুহার দিকে যায়। তাকায় চারদিক। আহা কত স্মৃতি এ বনে! গাছগুলো কত আপন। বাঘ তাড়া দেয়। কী হলো?

বাঘিনী হাউমাউ করে কাঁদে। বলেছিল বটে, তবে এ সুন্দরবন ছেড়ে চলে যাবে, এখন আর মন চাচ্ছে না। ওর কথা শুনে বাঘও কাঁদে। দুজন কাঁদতে কাঁদতেই জিনিসপত্র গোছায়। সব বেঁধে ওরা রওনা দেয় অচিনপুরে। পথে দেখা বানরের সঙ্গে। বানর তো অবাক! কী মামা, মামিকে নিয়ে কোথায় যাও? বাঘ উত্তর দেয়, অন্য বনের খোঁজে। বানর বলে, তোমরা ভালো থাকবে ওখানে? বাঘ বিমর্ষ হয়ে বলে, ভালো লাগবে না। কিন্তু উপায় তো নেই। এখানে গাছ কেটে ফেলছে। খাবার নাই। তুইও তো বন ছাড়া হবি। থাকবি কোথায় তখন। বানর মাথা চুলকায়। সত্যিই তো। একসময় কত খাবার ছিল বনে। এখন সারাদিন খাবার খুঁজতে হয়।

কিরে কী ভাবছিস? বাঘিনী ধাক্কা দেয় ওকে। বানর বলে, মামা আমাকে তোমার সঙ্গে নেবে? তুই যাবি? বাঘ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পায়। একা একা যেতে কেমন সংকোচ লাগছিল। এখন সঙ্গী পাওয়া গেল। নতুন জায়গা আর একা একা লাগবে না। প্রায় সন্ধ্যা, এমন সময় দেখা চিত্রা হরিণের সঙ্গে। চিত্রা হরিণ প্রথমে পালাতে চাইছিল। পরে কাছে আসে। বাঘ মামা তুমি কই যাও! বাঘ সব খুলে বলে ওকে। শুনে হরিণ বলে, তুমি দাঁড়াও! আমরাও যাব তোমার সঙ্গে। এখানে আমাদের কথা কেউ ভাবে না। ইটো-বিটো হাততালি দেয়। কি মজা! কি মজা! হরিণ খালা আমাদের সঙ্গে যাবে, যাবে। লাফায় ওরা। ধীরে ধীরে জড়ো হয় সাপ, পাখি, কুমির। স

বার কণ্ঠে অভিমানের ছোঁয়া। সব বন শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কেন বুঝছে না। খিদে পায় বলেই তো ওরা মানুষের বাড়ি যায়। আর গেলেই ওদের মেরে ফেলা হয়! আর কত প্রাণ দেবে ওরা! রাতে সিদ্ধান্ত হয়, ভোর হলেই সবাই রওনা হবে। খুঁজে নেবে ওদের নতুন ঠিকানা। সকালে ঘুম থেকে ওঠে ওরা। গায়ে মেখে নেয় বনের মাটি। মুঠো ভরে নেয় ঘাস। মাটি আর ঘাসের গন্ধ চিনে ওরা যেন আবার ফিরতে পারে এ দেশে। এই বনে। ইটো প্রশ্ন করে, বাবা, আমরা চলে গেলে মানুষ কি আমাদের কথা ভাববে! ওরা কি চাইবে আমরা যেন আবার ফিরে আসি? বাঘ ম্লান হাসে। অভিমানী কণ্ঠে বলে, নিশ্চয়ই। কেউ না কেউ একদিন চাইবেই আমরা বনের পশুরা সব যেন বনে ফিরে আসি। কেউ না কেউ আমাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করবেই। তখন আমরা সবাই ফিরে আসব আমাদের এ দেশের মাটিতে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫